
সরকারের তরফ থেকে দাবি পূরণের ঘোষণা দেওয়ায় ১৫ দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।গতকাল সোমবার বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক যৌথ সভা শেষে এ ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী ছাত্রদের সংগঠন বাংলাদেশ কারিগরি ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক জাকির হোসেন। এর আগে দুপুরে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আরেকটি সভায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের চাকরিতে যোগদানের সময়ে তাঁদের পদ-পদবির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয়।সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় সুপারভাইজার নয়, তাঁদের পদ হবে উপসহকারী প্রকৌশলী এবং পাস করা শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা প্রকৌশলী হিসেবে বিবেচিত হবেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের বৃত্তি বাড়ানো, চাকরিতে যোগদানের সময় বেতনের সঙ্গে একটি বার্ষিক বেতন প্রবৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) দেওয়ার জন্য কাজ চলছে বলেও জানানো হয়।পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় আন্দোলনকারী ছাত্রনেতাদের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। আন্দোলনকারী ছাত্র সংগঠনের নেতা জাকির হোসেন বলেন, ‘যেহেতু সরকার আমাদের দাবি পূরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাই তা যেন ১৫ দিনের মধ্যে পূরণ করা হয়, সে জন্য ওই সময় পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন স্থগিত থাকবে। শিক্ষার্থীরা এ সময় রাজপথে থাকবে না। তবে যেসব শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মুক্তি দিতে হবে। তাদের নিয়েই পরীক্ষা হতে হবে।’
সভায় শিক্ষাসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, গণপূর্তসচিব খন্দকার শওকত হোসেন, ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের সভাপতি এ কে এম এম হামিদ, সাধারণ সম্পাদক সামছুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
গণপূর্তসচিব খোন্দকার শওকত হোসেন বলেন, ‘কোনোভাবেই সুপারভাইজার পদ তৈরি করা হয়নি। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলতে চাই, চাকরিতে যোগদানের সময় তাঁদের পদ হবে উপসহকারী প্রকৌশলী।’
পূর্তসচিব বলেন, ইতিমধ্যে এ-সংক্রান্ত বিধিমালা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তাড়াতাড়ি বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
সভায় উপস্থিত ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের সাধারণ সম্পাদক সামছুর রহমান বলেন, সিদ্ধান্ত হলেও দীর্ঘদিন ধরে গেজেট প্রকাশিত না হওয়ায় মূলত অবিশ্বাস থেকে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
পেশাগত বৈষম্য নিরসন ও সুপারভাইজিং পদ পরিবর্তনসহ কয়েক দফা দাবিতে চার দিন ধরে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। দুদিন ধরে এ আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেয়।
পরীক্ষা বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হলো: কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার ও আগামীকাল বুধবারের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এগুলোর সময় পরে জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে ৩ অক্টোবর থেকে পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী পরীক্ষা হবে। আন্দোলনের কারণে বর্জন করা গতকাল সোমবার ও গত রোববারের পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।
বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের নৈরাজ্য: গতকালও পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সহিংসতা ও সংঘর্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিক ও পুলিশসহ দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশের এক সদস্য গুলিবিদ্ধ এবং সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের সময় রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। সিরাজগঞ্জে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশের উপপরিদর্শকসহ ১৫ জন আহত হন।
ফেনীতে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় সংঘর্ষে চার র্যাব ও পুলিশ, দুই সাংবাদিকসহ ২০ জন আহত হন। শিক্ষার্থীরা অর্ধশতাধিক যানবাহন, ব্যাংকের কাচ ভাঙচুর এবং পাঁচটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাস গতকাল ছিল শিক্ষার্থীশূন্য। পটুয়াখালীতে শিক্ষার্থীরা বিআরটিসি বাস ভাঙচুরের পর পুড়িয়ে দিয়েছেন। বগুড়ায় শিক্ষার্থীরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সড়ক অবরোধ ও গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। খুলনায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ সড়ক অবরোধ করেন।
নওগাঁয় শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করে ইনস্টিটিউটের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন এবং নওগাঁ-দুবলহাটি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। ভোলায় ভোলা-চরফ্যাশন সড়ক অবরোধ করে ভাঙচুর চালান শিক্ষার্থীরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে পুলিশের সাত সদস্যসহ ৪০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। শিক্ষার্থীরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় মহাসড়কে তিন ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে নির্বিচারে যানবাহন ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা।
এ প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা, কুমিল্লা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, ফেনী, সিলেট; পটুয়াখালী ও ভোলা অফিস; বগুড়া, খুলনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি এবং নওগাঁ সংবাদদাতা।