পল্লবীর সাহিনুদ্দিন হত্যায় গ্রেপ্তার আরও দুজন রিমান্ডে

গ্রেপ্তার
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর পল্লবীতে সাহিনুদ্দিন হত্যার ঘটনায় আরও দুজনকে রোববার চার দিন করে রিমান্ডে নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। তাঁরা হলেন টিটু ও ইকবাল। গত শনিবার টিটুকে নরসিংদীর ভৈরববাজার ও ইকবালকে শরীয়তপুর থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ ও তরীকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়ালসহ এ নিয়ে ওই হত্যা মামলায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবি সূত্র জানায়, শনিবার রাতে টিটু ও ইকবালকে ডিবি পুলিশের হাতে তুলে দেয় র‍্যাব। রোববার দুপুরে তাঁদের দুজনকে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ঘটনার দিন ১৬ মে বিকেলে সাহিনুদ্দিনকে দাওয়াত খাওয়ার কথা বলে মুঠোফোনে সুমন ব্যাপারী ও টিটু ডেকে নেন। এম এ আউয়ালসহ সাতজনকে রিমান্ডে রেখে ডিবি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ছাড়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া দুজনসহ তিনজন কারাগারে আছেন।

রিমান্ডে থাকা ছয় আসামি জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি কর্মকর্তাদের বলেন, সাবেক সাংসদ আউয়াল পল্লবীর বুড়িরটেক সংলগ্ন আলী নগরে অধিগ্রহণ করা সরকারি জমিসহ আশপাশের জমি দখল করে আলী নগর আবাসিক প্রকল্প গড়ে তুলতে তাঁদের ব্যবহার করেছেন। এখনো আশপাশের জমি দখলে নিতে তাঁদের মাসোহারা দিচ্ছেন আউয়াল।

সাহিনুদ্দিন আলী নগরে তাঁদের জমি বুঝে নিতে গেলে আউয়াল ক্ষুব্ধ হয়ে হত্যার পরিকল্পনা নেন। ১৩ স্বজনসহ সাহিনুদ্দিনদের ১০ একর জমি দখল করে নিয়েছেন আউয়াল। আউয়াল হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেন তাঁর প্রধান সহযোগী সুমন ব্যাপারীকে। হত্যার ছক কষা, খুনি ভাড়া ও মাঠে উপস্থিত থেকে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন সুমন ব্যাপারী। তিনি এখন ডিবির রিমান্ডে আছেন।

১৬ মে বিকেলে পল্লবীর ডি-ব্লকের ৩১ নম্বর রোডের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দুই তরুণ সাহিনুদ্দিনকে কোপাচ্ছেন। তাঁদের একজন মনির এবং অপরজনকে মানিক বলে শনাক্ত করে পুলিশ ও র‍্যাব। গত শনিবার গভীর রাতে পল্লবীর সাগুফতা হাউজিং এলাকায় ডিবির সঙ্গে ‘গোলাগুলিতে’ মনির নিহত হন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে র‍্যাব-৪–এর সঙ্গে ‘গোলাগুলিতে’ মৃত্যু হয় মানিকের।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবি পল্লবী অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. আহসান খাঁ প্রথম আলোকে আলোকে বলেন, ‘রিমান্ডে থাকা আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে আউয়ালের নির্দেশে সাহিনুদ্দিনকে খুন করার কথা স্বীকার করেন। রিমান্ডে আউয়াল বিভিন্ন তথ্য দিলেও খুনে জড়িত থাকার বিষয়ে মুখ খুলছেন না।’

তদন্ত সম্পৃক্ত সূত্র জানায়, রিমান্ডে থাকা আউয়াল জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি কর্মকর্তাদের বলেন, ‘তাঁর প্রকল্প থেকে জমি ক্রেতার তালিকায় রয়েছেন সাবেক সেনাবাহিনী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তিনি একজন র‍্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছেও জমি বিক্রি করেছেন। কিন্তু কেউ এসব জমি এখন পর্যন্ত বুঝে পাননি।’

১৬ মে বিকেলে সাহিনুদ্দিন সাত বছরের সন্তানকে নিয়ে মোটরসাইকেলে ঘুরতে বের হন। এ সময় পূর্বপরিচিত সুমন ব্যাপারী ও টিটু মুঠোফোনে সাহিনুদ্দিনকে মিরপুর-১২ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকে সিরামিকস গেটে দাওয়াত খেতে ডাকেন। সাহিনুদ্দিন তাঁর ছেলে মাশরাফিকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান। তখন সুমন ব্যাপারী সাহিনুদ্দিনের সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হন। একপর্যায়ে সুমন লাথি মেরে মোটরসাইকেলসহ সাহিনুদ্দিনকে ফেলে দেন। এ সময় ১৪-১৫ জন সন্ত্রাসী টেনেহিঁচড়ে পাশের একটি বাড়ির গ্যারেজে নিয়ে তাঁকে রামদা, চাপাতি ও চায়নিজ কুড়াল দিয়ে শিশুটির সামনে কোপাতে থাকেন।

পরে তাঁকে ওই বাড়ির গ্যারেজ থেকে বের করে বাড়ির সামনে আবার কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ফেলে রেখে চলে যান।

ওই ঘটনায় সাহিনুদ্দিনের মা আকলিমা বেগম বাদী হয়ে সাবেক সাংসদ আউয়ালসহ পল্লবী এলাকার ২০ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।