রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার প্রায় পাঁচ বছর হতে চললেও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গঠনতন্ত্র সংশোধন করেনি। গঠনতন্ত্র থেকে বাদ দেয়নি সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) পরিপন্থী ধারা। এ কারণে নির্বাচন কমিশন (ইসি) দলটির গঠনতন্ত্র অনুমোদন করেনি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
২০০৮ সালে ছায়া গঠনতন্ত্র জমা দিয়ে ৩৯টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেয়েছিল। কথা ছিল সংসদ নির্বাচনের পর দলগুলো জাতীয় সম্মেলনে সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুমোদন করিয়ে কমিশনে জমা দেবে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ বেশির ভাগ দলের গঠনতন্ত্র ইসির অনুমোদন পায়। কিন্তু ইসিতে জমা দিলেও জামায়াতসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলের গঠনতন্ত্র অনুমোদন পায়নি। পরে জামায়াত ছাড়া অন্য দলগুলোর সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুমোদন পায়। এ বিষয়ে ২০১২ সালের ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ইসি জামায়াতকে গঠনতন্ত্র সংশোধনের তাগিদ দিয়ে বেশ কয়েকবার চিঠিও দেয়। প্রতিবারই তারা গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ইসিতে জমা দিয়েছে। কিন্তু জমা দেওয়ার পর প্রতিবারই জামায়াত সংবিধান ও আরপিও পরিপন্থী ধারাগুলো বহাল রেখেই গঠনতন্ত্র পুনর্মুদ্রণ করে।
আরপিও ৯০-সি ধারায় রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন শর্তে বলা হয়েছে, দলীয় গঠনতন্ত্রের উদ্দেশ্য সংবিধানপরিপন্থী হতে পারবে না। গঠনতন্ত্রে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, ভাষা ও লিঙ্গভেদে কোনো বৈষম্য থাকতে পারবে না।
সর্বশেষ গত ৪ নভেম্বর ইসি জামায়াতে ইসলামীকে গঠনতন্ত্র সংশোধনের তাগিদ দিয়ে চিঠি দেয়। চিঠিতে বলা হয়, গঠনতন্ত্রের ভূমিকা থেকে ‘মৌলিক বিশ্বাস ও চেতনার ভিত্তিতে ইসলামী সমাজ গঠনের মহান উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এই গঠনতন্ত্র প্রণীত ও প্রবর্তিত হইল’ শব্দগুচ্ছ বাদ দিতে হবে। ২(৫) ধারাকেও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রের সার্বভৌমের পরিপন্থী বলে ইসি মত দেয়। এ ছাড়া দলের ২০২০ সালের মধ্যে বিভিন্ন স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে বলেছে ইসি।
গত ৪ ডিসেম্বর জামায়াত আরেক দফা গঠনতন্ত্রে সংশোধনী এনে ইসিতে জমা দেয়। দলটি তখন অতীতের অসংশোধিত গঠনতন্ত্রকে মুদ্রণজনিত ভুল বলে উল্লেখ করে। তত দিনে জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা নিয়ে আদালতে মামলা হলে ইসি গঠনতন্ত্র পর্যালোচনার কাজ স্থগিত রাখে।