পাইলট–সংকটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস

এখন পাইলট আছেন ১৫৮ জন। ঘাটতি আছে ৪৩ জনের। এর ওপর ২৬ জনকে রাখা হয়েছে ছুটিতে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস
ফাইল ছবি

দীর্ঘ বিরতির পর সারা বিশ্বে আকাশপথে চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসছে। ঠিক এই সময়েই পাইলট–সংকটে পড়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। ফ্লাইটের চাপের বিপরীতে পাইলটের সংখ্যা কম সংস্থাটিতে। পাইলটরা নির্ধারিত কর্মঘণ্টার চেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেন না। প্রায়ই ফ্লাইট বিলম্বিত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বিমানে এখন পাইলট আছেন ১৫৮ জন। ফ্লাইটের সংখ্যা অনুযায়ী প্রয়োজন আরও ৪৩ জন। এর মধ্যে ২৬ জনকে আংশিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ছুটিতে রাখা হয়েছে। ১৫ জনের এখনো প্রশিক্ষণ শুরুই হয়নি।

পাইলটদের অভিযোগ, করোনাকালে প্রশিক্ষণ না দিয়ে এবং পাইলটদের বেতনসহ এবং বিনা বেতনে ছুটি দিয়ে ইচ্ছাকৃত সংকট তৈরি করা হয়েছে।

বিমানের সূত্র জানায়, একসময় বিমানবহরে উড়োজাহাজ ছিল সর্বোচ্চ ১৪টি। এখন আছে ২১টি। যে হারে উড়োজাহাজ ও ফ্লাইটের সংখ্যা বেড়েছে, সে হারে পাইলট নিয়োগ করা হয়নি।

বিমানের একজন জ্যেষ্ঠ পাইলট নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, যখনই বিমানে পাইলটের সংকটটি সামনে এসেছে, তখনই সামান্য কয়েকজন পাইলট নিয়োগ দিয়ে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা হয়। ফলে পাইলট–সংকট চলতেই থাকে।

বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পাইলট অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) সূত্র জানায়, ২১টি উড়োজাহাজের বিপরীতে বিমানের পাইলট প্রয়োজন ২০১ জন। এখন আছেন ১৫৮ জন। বিমানের সঙ্গে চাকরির চুক্তি অনুযায়ী, একজন পাইলটের মাসে নির্ধারিত কর্মঘণ্টা হচ্ছে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে ৬০ ঘণ্টা এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে ৭৫ ঘণ্টা।

পাইলটরা বলছেন, করোনাকালে পাইলটদের ডিউটি রোস্টার প্রকাশ করা হয়নি, যা পূর্ববর্তী মাসের ২০ তারিখের আগেই প্রকাশ করার নিয়ম। এ ছাড়া কয়েকজন পাইলট অপেক্ষমাণ (স্ট্যান্ডবাই) রাখার কথা। যাতে কেউ পারিবারিক, ব্যক্তিগত বা অসুস্থতায় পড়লে বিকল্প হিসেবে অপেক্ষমাণ পাইলটদের দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করা যায়। এখন প্রায়ই সেটা হচ্ছে না। মাসে আট দিন ছুটি (ডে-অফ) দেওয়ার কথা থাকলেও পাইলটরা চার দিনের বেশি ছুটি পাচ্ছেন না।

বিমানের একজন জ্যেষ্ঠ পাইলট নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, যখনই বিমানে পাইলটের সংকটটি সামনে এসেছে, তখনই সামান্য কয়েকজন পাইলট নিয়োগ দিয়ে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা হয়। ফলে পাইলট–সংকট চলতেই থাকে।

এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে গত বছর বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পাইলটদের বেতন–ভাতা কমানো হয়। গত জুলাইয়ে অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর কর্তন বন্ধ করে পূর্বের নিয়মে বেতন-ভাতা দেওয়া শুরু হয়। কিন্তু পাইলটদের বেতন-ভাতা কর্তন পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এ নিয়ে অসন্তুষ্ট পাইলটরা গত ২৫ অক্টোবর থেকে তাঁদের চুক্তির বাইরে অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা কাজ করা থেকে বিরত থাকেন। তাতে বিমানের বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বিলম্বিত হয়। যার জের ধরে পাইলট অ্যাসোসিয়শেনর সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানকে চাকরিচ্যুত করা হয়। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার এক ঘণ্টার বেশি বিলম্বিত হয়েছে অন্তত পাঁচটি ফ্লাইট।

বিমান সূত্রে জানা গেছে, বিমানে সর্বশেষ ২০১৯ সালে ৩০ জন ক্যাডেট পাইলট নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে ১৫ জন প্রশিক্ষণ শেষে উড়োজাহাজ পরিচালনায় যুক্ত হয়েছেন। গত বছর করোনা শুরুর পর তাঁদের বিনা বেতনে ছুটিতে পাঠানো হয়, এখনো ছুটিতে আছেন।

বাপা সূত্র জানায়, করোনার সংক্রমণ শুরুর আগে বোয়িং–৭৮৭ উড়োজাহাজের পাইলটদের প্রশিক্ষণ হওয়ার কথা ছিল। তা না হওয়ায় ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ১৫ জন বিদেশি পাইলট আনতে হয়। গত বছর করোনা সংক্রমণ শুরুর পর ফ্লাইট চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেলে তখন ওই বিদেশি পাইলটদের ছেড়ে দেওয়া হয়। করোনার আগে বিমানের ২৬ জন পাইলটকে আংশিক প্রশিক্ষণ (সিমুলেটর) দেওয়া হয়। পরে তাঁদের বাকি প্রশিক্ষণ (গ্রাউন্ড) দেওয়া হয়নি। এখন তাঁদের ছুটিতে রাখা হয়েছে।

এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে বিমানের মুখপাত্র উপমহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকারের কাছে দুই দফায় গত ২২ নভেম্বর ও ৬ ডিসেম্বর লিখিত প্রশ্ন পাঠানো হয়। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

তবে পাইলট–সংকটের বিষয়টি স্বীকার করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পাইলটের ঘাটতি কমাতে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। নতুন নিয়োগ হলে সংকট কমবে। তিনি বলেন, যেসব পাইলটের প্রশিক্ষণ বাকি আছে, সেগুলো শুরু করতে নির্দেশ দেওয়া হবে।