নতুন এক গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে যারা নিজের সিদ্ধান্তে বিয়ে করছে তারা ভালো আছে। অভিভাবকের অমতে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার প্রবণতাও বাংলাদেশের কিশোর-তরুণদের মধ্যে কম। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে গতকাল বুধবার এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
ইউনিভার্সিটি অব মালায়ার শিক্ষক এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ ও ইউনিভার্সিটি অব কেন্টের শিক্ষক যাকি ওয়াহহায বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার ওপর জরিপের ভিত্তিতে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তাঁরা বলছেন, সরকার বিয়ের বয়স কমানোর পক্ষে যুক্তি দিচ্ছে। বলা হচ্ছে, কখনো কখনো গ্রামের মেয়েরা স্কুলে যাওয়ার পথে কিংবা শিল্পাঞ্চলে কাজে যাওয়ার পথে যৌন হয়রানির শিকার হয়, যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে অথবা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। বিয়ে এই হুমকিগুলো থেকে মেয়েদের সুরক্ষা দিতে পারে। কিন্তু গবেষকেরা দেখেছেন, মাত্র ৩ শতাংশ নারী বলেছেন, শারীরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাঁদের বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে ৭২ শতাংশ নারী বলেছেন, তাঁদের অভিভাবকেরা মনে করেছেন ‘সুপাত্র’ পাওয়া গেছে। সে কারণে তাঁদের বাল্যবিবাহের শিকার হতে হয়েছে।
গবেষকেরা আশঙ্কা করছেন, প্রস্তাবিত আইনে অভিভাবকদের কর্তৃত্ব আরও বাড়বে। এতে করে বাল্যবিবাহের হারও বাড়বে। নেতিবাচক প্রভাব পড়বে স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ উন্নয়নের সব খাতে। তাঁরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কিশোর-তরুণদের মতামত নেওয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন।
এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ বলেন, ১৯টি জেলায় তাঁরা কিশোর-কিশোরীদের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তাদের মধ্যে মাত্র ১ শতাংশ বলেছে, অভিভাবকদের সম্মতি না পেলে তারা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করতে চায়। অন্যদিকে যাঁরা বাল্যবিবাহ ঠেকাতে সক্ষম হয়েছেন, তাঁরা পরিণত বয়সে বিয়ে করেছেন। তাঁদের শিক্ষার হার বেশি, তাঁরা অল্প বয়সে মা হননি এবং দুই সন্তানের জন্মের মধ্যে বিরতিও বেশি।
গবেষণায় আরও যে বিষয়টি উঠে এসেছে তা হলো, যে মায়েরা নিজের সিদ্ধান্তে বিয়ে করেননি, তাঁদের মেয়েরা নিজের পছন্দে বিয়ে করতে চাইলে তাঁরা বিরোধিতা করেন।
গবেষণার ওপর আলোচনায় বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, বিয়ের বয়স কমানোর উদ্যোগ উন্নয়নের যে ধারা তাকে ভুল পথে পরিচালিত করবে। তবে, বাল্যবিবাহের পেছনে দারিদ্র্য ও নিরাপত্তাহীনতা অন্যতম কারণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
যেসব এলাকায় বাল্যবিবাহের হার কম, সেখানে কী কারণে কম তা খুঁজে বের করে বাল্যবিবাহপ্রবণ এলাকার সমস্যা সমাধান করা যায় কি না তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
ব্র্যাকের উপাচার্য সৈয়দ সাদ আন্দালীব, গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের পরিচালক আবদুল বায়েস অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।