পাড়া-মহল্লায় বিশ্বকাপের মিনি স্টেডিয়াম

খেলা চলছে বড় পর্দায়। তবে আমেজ স্টেডিয়ামে খেলা দেখার মতোই। গত সোমবার রাতে ব্রাজিল–মেক্সিকোর খেলা চলাকালে রবীন্দ্রসরোবর থেকে তোলা ছবি।  প্রথম আলো
খেলা চলছে বড় পর্দায়। তবে আমেজ স্টেডিয়ামে খেলা দেখার মতোই। গত সোমবার রাতে ব্রাজিল–মেক্সিকোর খেলা চলাকালে রবীন্দ্রসরোবর থেকে তোলা ছবি। প্রথম আলো

গ্যালারিতে তিল ধারণের মতো জায়গা ফাঁকা নেই। দর্শকদের গায়ে প্রিয় দলের জার্সি, হাতে পতাকা, কেউবা আবার পতাকা এঁকেছেন মুখে, মাথায় রঙিন চুল। সমর্থন জোগাতে আরও চলছে স্লোগান, চিৎকার-চেঁচামেচি। একটু পরপর আসছে সমর্থকদের ছোটখাটো মিছিল। গ্যালারির বাইরে রাস্তার পাশে অস্থায়ী খাবারের দোকান। জায়গা ফাঁকা নেই সেখানেও।

সাধারণত স্টেডিয়াম এলাকায় এমন দৃশ্য চোখে পড়লেও এখন বিশ্বকাপ ফুটবলের মৌসুমে রাজধানীর রবীন্দ্রসরোবরে দেখা মিলছে এমন দৃশ্যের। বিশ্বকাপের মূল কেন্দ্র রাশিয়ার লুঝনিকি, কাজান কিংবা সামারার মতো স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার আমেজের সঙ্গে হয়তো তুলনা চলে না, কিন্তু আনন্দ-উত্তেজনারও কমতি নেই এখানে। শুধু স্টেডিয়ামের সবুজ মাঠ এখানে ভেসে উঠছে বড় সাদা পর্দায়। এটাই মূল পার্থক্য।

এ বছর দিয়ে তৃতীয়বারের মতো রবীন্দ্রসরোবরে খেলা দেখানোর আয়োজন করেছে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান নেক্সট গেম। বিশ্বকাপের প্রথম দিন থেকেই ম্যাচ দেখানো হচ্ছে এখানে। ইভেন্ট ম্যানেজার সুমন মোল্লা জানালেন, প্রতি ম্যাচে এখানে ৫ থেকে ১০ হাজার দর্শকসমাগম ঘটে। আর বড় দলের খেলা থাকলে এ সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যায়।

বিশ্বকাপ উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বসেছে বড় পর্দায় খেলা দেখার আয়োজন। খেলা শুরু হলে সেগুলোই হয়ে উঠছে একেকটি মিনি স্টেডিয়াম। রবীন্দ্রসরোবর ছাড়াও গ্রিন রোড সরকারি স্টাফ কোয়ার্টার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, আজিমপুরের ২৭-এ মাঠ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকা, মগবাজার চৌরাস্তা মোড়, মেরুল বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্ট, টিকাটুলীর হাটখোলা রোড, নারিন্দা, উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের পার্কে বড় পর্দায় খেলা দেখার আয়োজন করা হয়েছে।

গত কয়েক দিনে এই এলাকাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, খেলোয়াড়ের পায়ে বল মাঝমাঠ পার হতে না-হতেই শুরু হয়ে যায় সমর্থকদের চিৎকার। আর সে আক্রমণ যদি গোলে পরিণত হয়, তাহলে তো কথাই নেই। চলে বাঁধভাঙা উল্লাস, উদ্‌যাপন।

ধানমন্ডির ক্যাপিটাল মার্কেটের দেয়ালের একাংশে সাদা রং করা হয়েছে। প্রজেক্টরের মাধ্যমে সেখানে সরাসরি খেলা দেখার আয়োজন করেছে গ্রিন রোড সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের তরুণেরা। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল বড় মাঠে বসে খেলা দেখছেন দর্শকেরা। মূল সড়কের পাশে হওয়ায় বিভিন্ন পরিবহনে যাতায়াত করা যাত্রীরাও একবারের জন্য চোখ বুলিয়ে নিতে পারছেন স্কোর লাইনে। দর্শকেরা এসেছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে। আর কোয়ার্টারের বাসিন্দারা তো আছেনই। পরিবারসহ তাঁরাও মাঠে এসেছেন খেলা দেখতে। কেউবা আবার বাসায় বসে জানালায় উঁকি দিয়েও খেলা দেখছেন। রায়হান হোসেন নামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘পুরো কোয়ার্টারে এখন বিশ্বকাপের আমেজ। খেলা শুরু হলেই নারী-পুরুষ সবাই চলে আসেন মাঠে। বাইরে থেকেও আসেন অনেকে। মনে হয় এটাই যেন স্টেডিয়াম।’

নকআউট পর্ব থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১১ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮ ফুট প্রস্থের পর্দায় খেলা দেখানো হচ্ছে টিএসসিতে। আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইটি সোসাইটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও সেখানে ভিড় করছেন আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ। গত সোমবার ব্রাজিল-মেক্সিকোর খেলা চলাকালে কথা হচ্ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারহানা ইসলাম ও শফিকুর রহমানের সঙ্গে। নিজ নিজ হলে খেলা দেখালেও বন্ধুদের সঙ্গে টিএসসিতে এসেছেন খেলা দেখতে। ফারহানা ইসলাম বলেন, ‘ক্রিকেট কিংবা ফুটবলের বড় আসরে টিএসসিতে খেলা দেখার আমেজই আলাদা। চেনা-অচেনা, নানা পেশার হাজার হাজার মানুষ আসেন। উদ্‌যাপনের সময় দেখা যায় সবাই এক। খেলার স্পিরিটটাই যেন এটা।’

গতকাল মঙ্গলবার বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর পর দুই দিনের বিরতির পর থাকবে কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনাল। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বড় দল বিদায় নিলেও রাজধানীবাসীর খেলা দেখার আগ্রহে ভাটা পড়েনি। বরং এবার অনেকের অনেক আগাম ধারণা পাল্টে দিয়ে বিশ্বকাপ ঠিকই তার রহস্য ধরে রেখেছে। সেই রহস্যময়তাই ফুটবলপ্রেমীদের খেলা দেখার আগ্রহ টিকিয়ে রাখবে শেষাবধি।