পুরোনো বাজারে নতুন চশমা

বাইরে থেকে দেখেই বোঝা যায়, বেশ পুরোনো দোকান। ভেতরে গিয়েও চোখে পড়ে ঐতিহ্যের ছাপ। চশমা রাখার তাকগুলোর নকশায় পুরোনো দিনের আবহ। দোকানটির বয়স অর্ধশতাব্দী পেরিয়েছে। এটি পাটুয়াটুলীর অন্যতম পুরোনো চশমার দোকান কামাল অপটিক্যাল সার্ভিস।
পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলীতে প্রবেশ করতেই ডানে-বাঁয়ে চোখে পড়বে অনেক চশমার দোকান। বাহারি রং, বিচিত্র গড়নের হরেক রকম হালফ্যাশনের চশমার ছড়াছড়ি। এটা দেশে চশমার সব থেকে বড় পাইকারি বাজার। এখান থেকেই সারা দেশের খুচরা বিক্রেতাদের কাছে চশমাগুলো যায়। আবার এখানে খুচরাও বিক্রি হয়।
কামাল অপটিক্যাল সার্ভিসের একজন নিয়মিত ক্রেতা শেখ ওমর উদ্দিন। তবে ব্যবসার জন্য নয়, নিজের প্রয়োজনেই তিনি এখান থেকে চশমা কেনেন। তিনি বলেন, কম দামে ভালো জিনিস পাওয়া যায়। আর নতুন ঢাকার চশমার দোকানদারেরা তো অনেক চড়া দাম রাখেন।
এই দোকানের মালিক ও বাংলাদেশ চশমা বণিক সমিতির সহসভাপতি আতাউর রহমান বলেন, ১৯৪৫-৪৬ সালের দিকে পাটুয়াটুলীতে পাঁচটি দোকান ছিল। এখন বেড়ে ৩৫০টি দোকান হয়েছে। সারা দেশেই এখান থেকে চশমা যায়। নতুন ঢাকার দোকানিরাও তাঁদের কাছ থেকে চশমা নেন। এখানকার বেশির ভাগ চশমাই দেশের বাইরে থেকে আসে।
জমির আহমদ ১৯৪৮ সালে মেহবুব অপটিকস নামে একটি দোকান চালু করেন। বর্তমানে এই দোকান চালাচ্ছেন তাঁর দুই ছেলে। ছোট ছেলে হাফিজ কমর, মেহবুব অপটিকসের একটি অংশ দেখেন। তিনি বলেন, ২০০৪-০৫ সাল পর্যন্ত দেশের লিডিং দোকান ছিল মেহবুব অপটিকস। তাঁর দাদা ১৯৩৬ সালে কলকাতায় চশমার দোকান শুরু করেন। সেখান থেকেই অনুপ্রেরণা নিয়ে তাঁর বাবা মেহবুব অপটিকস শুরু করেন।
বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণী মেহবুব অপটিকসে এসেছেন। কেউ দেখছেন চশমার ফ্রেম, কেউ রংবেরঙের রোদচশমা।
হাফিজ কমর বলেন, বাজারে এখন সানগ্লাস (রোদচশমা) বেশি চলছে। মানুষের চশমার ব্যবহার নিয়ে বললেন, আগে শতকরা ১০-১৫ জন চশমা পরতেন। বয়স ৫০-৬০ হলে চোখের ডাক্তার দেখাতেন। কিন্তু এখন স্কুলের বাচ্চারাও চশমা ব্যবহার করছে।
মানুষ সচেতন হচ্ছে। এ ছাড়া আগের চেয়ে ঘরে ঘরে টেলিভিশন বেড়েছে। এতেও চোখের ওপর প্রভাব পড়ছে।
সিয়াম চশমা সেন্টারের মালিক নূর আলম পাঁচ বছর ধরে পাটুয়াটুলীতে চশমার দোকান দিয়েছেন। এখানে চশমার
বাজার ভালো, তাই এ ব্যবসায় ঝুঁকেছেন।
পাটুয়াটুলীতে ব্র্যান্ড, নন-ব্র্যান্ড সব ধরনের চশমা ও রোদচশমা পাওয়া যায়। দাম তুলনামূলক কম। একটু ভালো মানের চশমার ফ্রেমের দাম ৩০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত। রোদচশমা মিলবে ১৫০ থেকে ৫০০০ টাকায়।