পুলিশ-পোশাকশ্রমিক সংঘর্ষে আহত ২০

রাজধানীর রামপুরায় প্রধান সড়কে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পোশাকশ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের ১৩ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা বলেছেন, নয়জন পোশাকশ্রমিক শটগানের গুলিতে আহত হয়েছেন।
রামপুরা টিভি ভবনের কাছে মোল্লা টাওয়ারে লিরিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের পোশাক কারখানা কোনো ঘোষণা ছাড়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। শ্রমিকেরা কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে গতকাল সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত রামপুরার প্রধান সড়ক অবরোধ করেন। তাঁরা যানবাহন ভাঙচুর করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সাতজন পোশাকশ্রমিককে আটক করেছে।
শ্রমিকেরা জানান, আজ শুক্রবার পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া না হলে রামপুরা এলাকার সব পোশাক কারখানার শ্রমিকদের নিয়ে তাঁরা আবার রাস্তায় নামবেন।
পোশাকশ্রমিকেরা অভিযোগ করেন, গত বুধবার সকালে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিতে এসে দেখেন, রামপুরা টিভি ভবনের পাশে মোল্লা টাওয়ারের সপ্তম, অষ্টম ও নবম তলায় লিরিক ইন্ডাস্ট্রিজের ফটকে তালা ঝুলছে। আগে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। রাতে ওই কারখানার যন্ত্র, সরঞ্জাম ও মালপত্র ট্রাকে ভরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে—এমন খবরের ভিত্তিতে পোশাকশ্রমিকেরা কারখানায় গিয়ে দেখেন নোটিশ ঝুলছে। এতে লেখা রয়েছে: ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ থাকবে’। উপস্থিত শ্রমিকেরা কারখানার টাইমকিপার হুমায়ুন কবিরকে রাতভর আটকে রাখেন। সকালে হুমায়ুনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, প্রধান সড়কটি অবরুদ্ধ থাকায় অফিস ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা আটকে পড়ে। সকাল ১০টা পর্যন্ত এ অবস্থা চলার পর রামপুরা ব্রিজের দুই দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে শ্রমিকেরা আটকে পড়া যানবাহন ভাঙচুর করতে যান এবং পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে হামলা চালান। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে পোশাকশ্রমিকেরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়ে মারেন। এ সময় পুলিশ শ্রমিকদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। আধা ঘণ্টা ধরে এ অবস্থা চলার পর পুলিশ শটগানের গুলি ছুড়ে পোশাকশ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সকাল সাড়ে ১০টার পর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসে এবং যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। সংঘর্ষকালে শ্রমিকদের ইটের আঘাতে নারীসহ চার পুলিশ আহত হন। পুলিশের শটগানের গুলিতে নারীসহ অন্তত ১৬ শ্রমিক আহত হন। তাঁদের মধ্যে ১৩ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
আহত পোশাকশ্রমিকেরা হলেন রহিমা বেগম (৩৫), শিউলি আক্তার (৩০), নার্গিস বেগম (২৫), ঝরনা আক্তার (২৫), মো. রাসেল (২৮), সাহিদা বেগম (৩৭), মো. মামুন (২৩)। আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন রামপুরা থানার পুলিশ সদস্য মনিরুজ্জামান, সাথী আক্তার, মাইনুল ইসলাম ও রেজাউল ইসলাম।
পোশাকশ্রমিক শিলা আক্তার ও মো. সোহেল দাবি করেন, তাঁরা কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে টিভি ভবনের সামনের রাস্তায়
শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়েছিলেন। কোনো কারণ ছাড়াই পুলিশ তাঁদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল ও গুলি ছোড়ে।
শ্রমিকেরা অভিযোগ করেন, গত মঙ্গলবার একজন শ্রমিককে ছুটি না দেওয়ায় সব শ্রমিক কাজ বন্ধ করে কারখানার নিচে অবস্থান নিলে মালিকপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা হয়। কিন্তু বুধবার বিনা নোটিশে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। লিরিক কারখানায় অন্তত ৮০০ শ্রমিক কাজ করেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, এই কারখানার যন্ত্র ও মালামাল গাজীপুরে মালিকের নতুন কারখানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রলয় কুমার বলেন, শ্রমিকেরা আক্রমণাত্মক ছিলেন। এতে টিভি ভবনও আক্রান্ত হতে পারত। বুঝিয়ে সরিয়ে দিতে গেলে তাঁরা পুলিশের ওপর বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ছোড়েন। এতে চারজন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়েছে পুলিশ।