পূর্ব নাখালপাড়ায় জমি নিয়ে মুখোমুখি ডিএনসিসি ও সমবায় সমিতি

একদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), অন্যদিকে ভূমির মালিক দাবিদার ২০১ সদস্যের সমবায় সমিতি। দুই পক্ষই বলছে, পূর্ব নাখালপাড়া কাঁচাবাজারের প্রায় ৭৬ শতাংশ জায়গার মালিক তারা। মালিকানা নিয়ে দুই পক্ষ এখন মুখোমুখি অবস্থানে।
ডিএনসিসির সম্পত্তি বিভাগ জানায়, সিটি করপোরেশন ১৯৭৯ সালে পেরিফেরির মাধ্যমে পূর্ব নাখালপাড়া কাঁচাবাজারের এসএ ৬১০ ও ৬১৩ নম্বর দাগের ৭৬ শতাংশ জায়গার মালিক। আশির দশকের শুরুতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ১১টি বাজার ঢাকা সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দেয়। নাখালপাড়া কাঁচাবাজারটি ছাড়া বাকি সব কটিই সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণে আছে। নাখালপাড়ার বাজারের দোকানদারেরা বিভিন্ন দলিলের মাধ্যমে জমির মালিক বলে দাবি করেন। তাঁরা সমিতি করে পুরো জায়গাটি নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন।
ডিএনসিসির সম্পত্তি বিভাগ দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকা উচ্ছেদের চেষ্টা করেও পারেনি। গত ২৪ জানুয়ারি একবার দখলদারদের উচ্ছেদের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেদিনের উচ্ছেদ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। গত বুধবার ডিএনসিসির উচ্ছেদকারী দল অবৈধ দখলে থাকা জমি উদ্ধার করতে অভিযান চালায়। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দা ও ডিএনসিসির ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বাধার কারণে উচ্ছেদ অভিযান অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় রেখেই ফিরে যান ডিএনসিসির কর্মকর্তারা।
উচ্ছেদকারী দলের কাছে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুজিবুর রহমান ওই জায়গার একটি অংশ নিজের পারিবারিক বলে দাবি তোলেন। মুজিবুর রহমান বলেন, ‘পূর্ব নাখালপাড়া হোসেন আলী স্কুলের পেছনের জায়গা আমার বাবা ও চার চাচার। সিটি করপোরেশন অবৈধ দখলে থাকা বাজার উচ্ছেদ না করে আমার পারিবারিক জায়গায় উচ্ছেদ চালাতে আসে।’
তবে উচ্ছেদের সময় উপস্থিত ডিএনসিসির সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর শামীমা রহমান অভিযোগ করেন, কাউন্সিলর মুজিবুর রহমান সিটি করপোরেশনের জায়গায় অবৈধভাবে দোকানপাট গড়ে তুলেছেন। ওই সব দোকান ভাড়া দিয়ে তিনি বাণিজ্য করছেন। এ কারণে ওই জমিকে নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি বলে দাবি করছেন।
গতকাল শনিবার দেখা যায়, হোসেন আলী স্কুলের পেছনের দেয়াল ঘেঁষে গড়ে ওঠা দোকানপাট উচ্ছেদ করেছে ডিএনসিসি। সেখানে মূলত শাকসবজি, আলু, পেঁয়াজ বিক্রির দোকান ছিল। লোকজন ভেঙে দেওয়া দোকানে আবার সামগ্রী নিয়ে বসেছেন।
জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন এই জায়গার মালিক। ১৯৭৯ সালে এই জায়গা সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, সেই কাগজপত্র আছে। জমি অধিগ্রহণ না করায় মালিকদের কাছে দলিল রয়ে গেছে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষতিপূরণ দিয়ে তাঁদের কাছ থেকে অধিগ্রহণ করতে হবে।’
উচ্ছেদ করা জায়গা থেকে খানিক দূরে অবস্থিত পূর্ব নাখালপাড়া কাঁচাবাজারটি অক্ষত আছে। পূর্ব নাখালপাড়া ভূমি মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সামছুল হক বলেন, নাখালপাড়া বাজারসংলগ্ন এসএ ৬১০ ও ৬১১ নম্বর দাগে ১০৬ দশমিক ২৫ শতাংশ জায়গা ১৯৭০ সালে কেনেন ২১০ জন মালিক। সেখানে কেউ কেউ রাজউকের নকশা অনুমোদন করে বহুতল ভবন বানিয়েছেন। সিটি করপোরেশন ১৯৭৯ সালে পেরিফেরির মাধ্যমে এসএ ৬১০ ও ৬১৩ নম্বর দাগের ৭৬ শতাংশ জায়গার মালিকানা দাবি করে। এরপর দোকানমালিকেরা স্বত্ব ঘোষণার জন্য মামলা করেন। সিটি করপোরেশন সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে একই আদালতে মামলা করে। উভয় মামলা বিচারাধীন।