পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে হিমাগার তৈরি করা এখন সময়ের দাবি

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা কুষ্টিয়ায় চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। তবে দাম কম পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি নেই। বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে গিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে তাঁরা কম দাম পাচ্ছেন। গত বছরের তুলনায় এবার কুষ্টিয়ায় পেঁয়াজের দাম অনেকটাই কমেছে। ফলে উৎপাদন খরচ তোলা নিয়ে শঙ্কায় আছেন কৃষকেরা। এসব নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপপরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামাণিকের সঙ্গে।

সুশান্ত কুমার প্রামাণিক

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: এবার জেলায় পেঁয়াজের আবাদ বেশি হওয়ার কারণ কী?

সুশান্ত কুমার প্রামাণিক: কয়েক বছর ধরে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। ২৫০ টাকা কেজি পর্যন্তও উঠেছিল। সে কারণে কৃষক পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। আবাদের পরিমাণ বাড়িয়ে দেন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ফলন বেশি হওয়ার পেছনে কোনো কারণ ছিল?

সুশান্ত কুমার প্রামাণিক: জেলার কৃষকেরা দেশীয় জাতের চেয়ে উচ্চফলনশীল (হাইব্রিড) জাতের পেঁয়াজ বেশি আবাদ করেছেন। কেননা এই জাতের পেঁয়াজ বিঘাপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ মণ পর্যন্ত উত্তোলন করা হয়েছে। তা ছাড়া এবার আবহাওয়াও অনুকূলে ছিল।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ফলন ভালো, কিন্তু দাম নিয়ে কৃষকের মুখ মলিন কেন?

সুশান্ত কুমার প্রামাণিক: আমরা (কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়) কাজ করি কৃষকের আবাদ এবং ফলন কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়, সেই বিষয় নিয়ে। দাম কী হবে বা কৃষকেরা কীভাবে দাম পেয়ে লাভবান হবেন, সেটা দেখার বিষয় আমাদের না। এটা দেখার জন্য অন্য বিভাগ আছে। তারপরও কিছু পরামর্শ দিয়ে থাকি।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: কী ধরনের পরামর্শ সেগুলো?

সুশান্ত কুমার প্রামাণিক: প্রথমত, কৃষকেরা যখন পেঁয়াজ তোলার কাজ করেন, তখন আমদানি বন্ধ রাখা যেতে পারে। তাহলে দেশের কৃষক তাদের উৎপাদিত পেঁয়াজের বেশি দাম পাবেন। দ্বিতীয়ত, পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য হিমাগার নির্মাণ করা দরকার। বাইরের দেশে এটা আছে। পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে হিমাগার তৈরি করতে হবে, এটা এখন সময়ের দাবি। কৃষক সেখানে রাখবে। ইচ্ছেমতো বের করে বিক্রি করবেন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: যেহেতু এ দুটি বিষয়ে কৃষকেরা এখনো সুবিধা পাননি। তাহলে কী করবেন তাঁরা?

সুশান্ত কুমার প্রামাণিক: জরুরিভাবে যেটা প্রয়োজন, সেটা হলো কৃষকদের এককাট্টা থাকতে হবে। নির্দিষ্ট লাভের দাম ছাড়া তারা যেন ব্যবসায়ী বা ফড়িয়াদের কাছে মাঠ থেকে পেঁয়াজ না দেন। কৃষকেরা এককাট্টা হলে ব্যবসায়ী বা ফড়িয়ারা কম দামে কিনতে পারবেন না। এতে কৃষকেরা দাম বেশি পাবেন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: আর কী করা যেতে পারে?

সুশান্ত কুমার প্রামাণিক: মোট কথা হলো, কৃষকদের উন্নয়ন ও উদ্বুদ্ধ করতে ভালো উদ্যোগ নেওয়া উচিত। কৃষক আবাদ করতে চান। ফলন বাড়াতে চান। তাঁরা বসে থাকতে চান না। তাই তাঁদের বিমুখ করা যাবে না। দাম না পেয়ে তাঁরা মুখ ফিরিয়ে নিলে সমস্যা হতে পারে। প্রয়োজনে পেঁয়াজ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে গুঁড়া করে প্যাকেটজাত করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এটা নিয়েও গবেষণা হচ্ছে।