শনিবার বেলা ১১টা। রাজশাহী নগরের মালোপাড়া এলাকা। প্রায় সব দোকানের সামনেই মানুষের কমবেশি ভিড়। ভুবনমোহন পার্কের পশ্চিম-দক্ষিণ কোণের প্রথম দোকানটির পাশে পুলিশের একটি গাড়ি দাঁড়ানো। গাড়ির একেবারে সামনের কাপড়ের দোকানটির শাটার অর্ধেক খোলা। সামনে টুল পেতে দোকানি বসে আছেন। চার-পাঁচজন খদ্দের রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে ওই দোকানে পছন্দের কাপড় খুঁজছিলেন। পুলিশ সদস্যরা আশপাশে দাঁড়িয়ে মানুষের সঙ্গে আলাপ করছিলেন।
রাস্তার বিপরীত পাশে একটি জুতার দোকান পুরোপুরি মেলে বসে ছিলেন একজন দোকানি। ছবি তুলতে দেখে বললেন, ‘আংকেল, ছবি তুলছেন? আমাদের যে পেট মানছে না। আমার তো এক পেট না। বাড়িতে আর ১০টা আছে। তাই খুলে বসেছি।’ এই দোকানের পাশেও এক পুলিশ সদস্য এসে দাঁড়ালেন। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও দোকান খোলার ব্যাপারে তাঁদের কোনো মাথাব্যথা নেই।
ততক্ষণে পার্কের দক্ষিণ পাশের জুতার পট্টির দোকানিরাও আস্তে আস্তে দোকান মেলে বসেছেন। তাঁদের একজন বললেন, ‘কলকারখানা সব কাল থেকে খুলে দেওয়া হচ্ছে। শ্রমিকেরা সারা দেশ থেকে ঢাকায় যাচ্ছেন। এখন আর কঠোর বিধিনিষেধের কথা বলে আমাদের কষ্টে রাখার কোনো মানে হয় না।’
রাজশাহী নগরে এভাবেই চলমান কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল হয়ে আসছে। ব্যবসায়ীরা নানাভাবে দোকান খুলে বেচাকেনা শুরু করে দিয়েছেন। বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের দায়িত্ব যাদের, তারাও প্রকারান্তরে বিষয়টি মেনে নিয়েছে। শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমনটিই দেখা গেছে।
গণকপাড়ার মোড়ের জনপ্রিয় একটি মিষ্টির দোকান সামনে থেকে সম্পূর্ণ বন্ধ। পেছনের দিকে একটি পকেট গেট খোলা। সেখানে দোকানের একজন কর্মচারী দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি ইশারায় ক্রেতাদের ডাকছিলেন। ওই দিক দিয়ে ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, রীতিমতো বাজার বসে গেছে। ক্রেতারা লাইন ধরে মিষ্টি নিচ্ছেন।
নগরের নিউমার্কেট এলাকায় সব দোকানের সামনেই কর্মচারীরা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ক্রেতা দেখলেই জানতে চাইছেন কিছু লাগবে কি না। নিউমার্কেটের পূর্ব পাশে রাস্তা পার হলেই সারি সারি দোকান। সেগুলোর সামনে স্বাভাবিক সময়েই মতোই ভিড় লেগে আছে। একটি চশমার দোকানের শাটারের নিচের অংশ খোলা। মাথা নিচু করে ক্রেতারা দোকানে ঢুকছেন। পাশেই একজন আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্য দাঁড়িয়ে রয়েছেন। দোকান খোলা ও ক্রেতাসমাগমের ব্যাপারে কিছুই বলছেন না।
নগরের অলকার মোড়ের মুঠোফোনের দোকানগুলোর সামনে এত দিন শুধু কর্মচারীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যেত। ক্রেতা পেলে দরজা খুলে ভেতরে ঢোকাতেন। এখন সেই দোকানের শাটার পুরোপুরিই খোলা। ভেতরে খদ্দেরও রয়েছেন।
নগরের রানিবাজার এলাকায় রাস্তার ধারের দোকানগুলো আধখোলা। কিন্তু দোকানগুলোর সামনে ক্রেতাদের উপস্থিতি রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেল একটি মোটরসাইকেলের যন্ত্রপাতির দোকানের সামনে। সাহেববাজারে আগের চেয়ে মানুষের ভিড় বেড়েছে। জিরো পয়েন্টে কয়েকজন পুলিশ সদস্য দাঁড়িয়ে থাকেন। কে কী কাজে বাইরে এসেছেন, তার তদারকি করেন। আজ সেই তৎপরতা দেখা গেল না। কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে আশপাশে নির্বিকার দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল।
অবশ্য সাহেববাজার বড় মসজিদের পশ্চিম পাশের গলিতে কিছুটা ব্যতিক্রম চিত্র মিলল। সেখানে রাস্তার দুই ধারের সব দোকানই খোলা। কিন্তু রাস্তার মাঝখানে একটা বাঁশ ফেলে একজন আনসার সদস্য দাঁড়িয়ে। কোনো যানবাহনকে বাঁশের এপার-ওপার হতে দিচ্ছেন না। কেউ হেঁটে গেলে পাশ দিয়ে যেতে পারছেন।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানাগুলো কাল থেকে খোলার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এটা সবার জন্য নয়। এ পর্যন্ত সরকার সময়োপযোগী সব পদক্ষেপ নিয়েছে। করোনা থেকে কীভাবে বাঁচা যাবে, সে সম্পর্কে মানুষকে যথেষ্ট সচেতন করেছে। এখন যার যার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদেরই নিতে হবে। সরকারের একার পক্ষে আর সম্ভব নয়।