পোস্টমাস্টারের সঙ্গেই পোস্ট অফিস

খাতাপত্র এক হাতে, আরেক হাতে টিকিটের ব্যাগ। সঙ্গে নিয়েছেন মাদুর। বাজারে খালি জায়গায় এই মাদুর পেতে তিনি বসেন। আর এটাই হয় তখন প্রায় ১০০ বছরের পুরোনো গান্না ইডি (এক্সট্রা ডিপার্টমেন্ট) পোস্ট অফিস। এর কার্যক্রম চালান পোস্টমাস্টার মিজানুর রহমান।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিশাল বাজার গান্না। চিত্রা নদীর পারে কোটচাঁদপুর, কালীগঞ্জ ও সদর উপজেলার সীমান্তে এই বাজারের অবস্থান। গান্না বাজারে একটি কলেজ, একটি মাধ্যমিক ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এখানে ১ হাজারের বেশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। একটি ব্যাংক, পাঁচটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। একসময় গান্না গ্রামে ছিল রাজাদের বাস। তাঁদেরই একজন অভিলাষ বাবু ১৯২৫ সালের দিকে এই পোস্ট অফিস স্থাপন করেছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল কুদ্দুস বলেন, শুরুতে পোস্ট অফিসটি গান্না রাজাদের বাড়িতেই ছিল। পরে রাজারা দেশত্যাগ করলে এলাকার মানুষ তাঁদের প্রয়োজনে ৪০ থেকে ৪৫ বছর আগে সেটি এই গান্না বাজারে নিয়ে আসেন। বাজারের একটি টিনের ঘরে এর কার্যক্রম চলত।
পোস্টমাস্টার মিজানুর রহমান বলেন, শুরুর দিকে আবদুল করিম নামের এক ব্যক্তি পোস্টমাস্টারের দায়িত্ব পালন করেন। পরে মিজানুরের বাবা হাতেম আলী প্রায় ৪৫ বছর এই দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর মৃত্যুর পর মিজানুর দায়িত্ব নেন। প্রায় ১৮ বছর ধরে এই কাজ করছেন। স্থানীয় লোকজনই সহযোগিতা দিয়েছেন। বাজারে টিনের চালাঘরে বেশ কিছুদিন পোস্ট অফিসের কার্যক্রম চালানো হয়। পরে আরেকটি স্থানে চলে এর কার্যক্রম। সর্বশেষ ১৯৮০ সালে বাজারের ব্যবসায়ীরা আরেকটি টিনের ঘর নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু পাঁচ বছর আগে সেই ঘর পরিত্যক্ত হয়ে যায়। বর্তমানে তাঁদের বসার নির্ধারিত কোনো জায়গা নেই।
মিজানুর রহমান আরও বলেন, এখনো এই পোস্ট অফিসের মাধ্যমে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০টি রেজিস্ট্রি চিঠি আসে। সাধারণ চিঠি আসে ১৫ থেকে ২০টি। এ ছাড়া চাকরির কার্ড, যোগদানপত্র, সরকারি সব চিঠিপত্র তাঁদের মাধ্যমে আদান-প্রদান করা হয়। আর এই কাজের জন্য তিনি ছাড়া আরেকজন কর্মী (ডেলিভারি ম্যান) আছেন। তিনি প্রতিদিন সকাল ১০টা বাজলেই ব্যাগ, মাদুর ও খাতাপত্র নিয়ে বাজারে চলে আসেন। তিনি দুঃখ করে বলেন, সরকারের একটি পুরোনো বিভাগ এই ডাক বিভাগ। ইডি পোস্ট অফিসে কাজ করেন। এ কারণে তাঁরা সামান্য সম্মানী পেয়ে থাকেন। সরকারের উচিত তাঁদের রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করা।
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রধান পোস্ট অফিস নলডাঙ্গা-৭৩৫০-এর পোস্টমাস্টার মাহফুজা বেগম বলেন, ডাক বিভাগ ইডি পোস্ট অফিসগুলোর জন্য ভবন বরাদ্দ করেছে, কিন্তু জমি বরাদ্দ নেই। স্থানীয় ব্যক্তিরা জমি দিলে ভবন করার জন্য তাঁরা উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করবেন।