প্রজ্ঞাপনের দাবিতে বিক্ষোভ, ক্লাস বর্জন কর্মসূচি প্রত্যাহার

আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। ছবি: প্রথম আলো
আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। ছবি: প্রথম আলো

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা সরকারকে তিন দফা শর্ত দিয়ে অবিলম্বে কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন দিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের দাবি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় শহীদ রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে বাসচাপা দিয়ে মারার প্রতিবাদে কালো কাপড় মাথায় বাঁধেন শিক্ষার্থীরা। এক মিনিট তাদের স্মরণে নীরবতা পালন করা হয়।

লাইব্রেরির সামনে থেকে মিছিল বের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে সেই মিছিল নিয়ে যান তাঁরা। এ সময় মিছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়। শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নেই’, ‘আর নয় কালক্ষেপণ এবার দিতে হবে প্রজ্ঞাপন’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘হামলা করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’।

বিক্ষোভ শেষে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক বলেন, ‘আমরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের যে ঘোষণা দিয়েছিলাম, তা তুলে নিলাম। আমাদের তিনটি শর্ত অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। সেগুলো হচ্ছে গ্রেপ্তারকৃত আন্দোলনকারীদের মুক্তি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বিচার এবং পাঁচ দফা দাবি মেনে নিয়ে অবিলম্বে কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি করা।’

নুরুল হক বলেন, ‘আমরা যেকোনো সময় সরকারের সঙ্গে বসতে রাজি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের একটু সময় দিলেই আমরা কোটা সংস্কারের বিষয়টি তাঁকে বুঝিয়ে বলব।’

কোটা সংস্কারে কমিটি গঠনের নাম করে কোটা সংস্কার না করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে উল্লেখ করে নুরুল হক বলেন, প্রথমে ১৫ দিন, পরে ৯০ দিন সময় নিয়েছে সরকার। এটি মেনে নেওয়া যায় না। এর মাধ্যমে কোটা সংস্কার না করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে বক্তব্য দিচ্ছেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক। ছবি: প্রথম আলো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে বক্তব্য দিচ্ছেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক। ছবি: প্রথম আলো

নুরুল হক বলেন, ‘আপাতত আমরা কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করছি না। তবে আমাদের কোনো ভাই বা বোনের গায়ে একটু আঁচড় লাগলে আমরা আবার কঠোর আন্দোলনে নামব।’

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বর্তমানে ৫৫ শতাংশ নিয়োগ হয় অগ্রাধিকার কোটায়। বাকি ৪৫ শতাংশ নিয়োগ হয় মেধা কোটায়। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতেও আছে বিভিন্ন ধরনের কোটা। সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। আন্দোলনের একপর্যায়ে গত মার্চ মাসে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে। পরে গত ৮ এপ্রিল ঢাকার শাহবাগে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা করলে এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে মারলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ঘটনার পরদিন এই আন্দোলন সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন।

কোটা সংস্কার নিয়ে সরকারি কোনো প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় ৩০ জুন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাঁদের অবস্থান জানাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন। সংবাদ সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালান। এ ঘটনার জের ধরে গ্রেপ্তার হন কোটা আন্দোলনের ১০ জন নেতা।

তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ছাত্রলীগের এক নেতার করা মামলায় ১ জুলাই গ্রেপ্তার হন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা, পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্যের মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও ওয়াকিটকি কেড়ে নেওয়ার অভিযোগে গত ১০ এপ্রিল শাহবাগ থানায় পৃথক তিনটি মামলা হয় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। রাশেদ খানের পর বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হন ফারুক হোসেন, তরিকুল, জসিমউদ্দিন, মশিউর, আমানুল্লাহ, মাজহারুল, জাকারিয়া, রমজান ওরফে সুমন ও রবিন।