প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটি নাইমুলকে উৎসর্গ করল প্রথম আলো

প্রথম আলোর ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের শুরুতে নাইমুল আবরারের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। কারওয়ান বাজারে সিএ ভবন মিলনায়তনে এই আয়োজনে ছিলেন প্রথম আলো পরিবারের সবাই। ঢাকা, ৪ নভেম্বর। ছবি: দীপু মালাকার
প্রথম আলোর ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের শুরুতে নাইমুল আবরারের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। কারওয়ান বাজারে সিএ ভবন মিলনায়তনে এই আয়োজনে ছিলেন প্রথম আলো পরিবারের সবাই। ঢাকা, ৪ নভেম্বর। ছবি: দীপু মালাকার

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটি প্রথম আলো উৎসর্গ করেছে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরারকে। এই শিক্ষার্থীর স্মরণে কালো ব্যাজ ধারণ করেন প্রথম আলোর সব বিভাগের কর্মীরা। নাইমুলের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কর্মী সম্মিলন।

সোমবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সি এ ভবন মিলনায়তনে এই সম্মিলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রকাশনার ২১ বছর পূর্ণ করে গতকাল (৪ নভেম্বর) ২২ বছরে পা রেখেছে দেশের সর্বাধিক পঠিত ও প্রচারিত দৈনিক প্রথম আলো।

নাইমুল গত শুক্রবার রেসিডেনসিয়াল কলেজের মাঠে কিশোরদের মাসিক পত্রিকা কিশোর আলোর বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান দেখতে এসে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যায়। তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রথম আলো বন্ধুসভার আজ মঙ্গলবার এবং আগামীকাল বুধবার ও পরদিন বৃহস্পতিবারের পূর্বনির্ধারিত সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে অনুষ্ঠেয় ৮ নভেম্বরের প্রীতিসম্মিলনীও বাতিল করা হয়েছে।

গতকালের কর্মী সম্মিলনের শুরুতে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক প্রথম আলোর বিশেষ বার্তা সম্পাদক শওকত হোসেন বলেন, একটি দুর্ঘটনায় নাইমুল আবরারের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি প্রথম আলোর প্রত্যেক কর্মীর পক্ষ থেকে সমবেদনা জানাই। নাইমুলের পরিবারের পাশে আজীবন থাকবে প্রথম আলো।

নাইমুল আবরারের বাবা-মায়ের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রথম আলোর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মিডিয়াস্টারের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য রোকিয়া আফজাল রহমান বলেন, ‘নাইমুলের মৃত্যুতে কষ্ট পেয়েছি। ওর আত্মা শান্তি পাক, এই দোয়া করি।’

একদিকে চ্যালেঞ্জ, অন্যদিকে সুযোগ
প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ২১ বছর ধরে প্রথম আলো সুসাংবাদিকতা, দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা করেছে। আগামী দিনেও প্রথম আলো বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করবে।
অনুষ্ঠানে রাজশাহীর পবা উপজেলার সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহাদত হোসেনের ‘মাটির মায়া’ উদ্যোগের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছেন রেদওয়ান রনি। ভূমি অফিসের অনিয়ম–দুর্নীতি–ভোগান্তি কমাতে শাহাদত হোসেনের উদ্যোগ নিয়ে ২০১৫ সালের ১৭ অক্টোবর ‘এসি ল্যান্ডের মাটির মায়া’ শিরোনামে প্রথম আলোয় বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। সারা দেশে শতাধিক ভূমি অফিসে এখন মাটির মায়ার আদলে সেবা কার্যক্রম চলছে।

অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন শাহাদত হোসেন। তিনি এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব। তিনি বললেন, প্রতিবেদনটি ছাপা হওয়ার পর সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সব ভূমি অফিসে মাটির মায়ার মতো ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

প্রথম আলোয় প্রতিবেদন ছাপা হওয়ার পর নিজের জীবন বদলে যাওয়ার গল্প শোনান বগুড়ার ডিজিটাল স্কেল নির্মাতা সৈয়দ আহমেদ কিরণ। প্রথম আলো ট্রাস্টের মাদকবিরোধী পরামর্শ সভার সহায়তায় নিজের ছেলেকে মাদকমুক্ত করতে পারার অভিজ্ঞতার কথা শোনান ফরিদা বেগম।

প্রথম আলোর কর্মীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসার একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জ, অন্যদিকে তা বড় সুযোগও। পাঠকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের বড় সুযোগ ডিজিটাল মাধ্যম। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, যদি তার সুযোগ আমরা নিতে পারি। যে যা–ই বলুক না কেন, বাংলাদেশে সাংবাদিকতার প্রসার হবেই।’

প্রথম আলোর নিয়মিত পাঠক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জিপিএইচ ইস্পাতের চেয়ারম্যান আলমগীর কবির এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
আলমগীর কবির বলেন, প্রথম আলো শুধু খবরই ছাপায় না, অনেক কিছু শেখায়ও।

ভবিষ্যতেও প্রথম আলো বস্তুনিষ্ঠ, জনবান্ধব সংবাদ প্রকাশ করে যাবে, নিজের এমন প্রত্যাশার কথা জানান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

আগামী দিনের নেতৃত্বের বিষয়ে কর্মীদের ধারণা দেন ফিউচার লিডার্সের লিড কনসালট্যান্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী এম আহমেদ।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মিডিয়াস্টারের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য আতিকুর রহমান ও আরশাদ ওয়ালিউর রহমান, ট্রান্সকমের নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) কামরুল হাসান, রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান। তাঁরা বিভিন্ন বিভাগের বর্ষসেরা কর্মী এবং বর্ষসেরা বিভাগকে পুরস্কার তুলে দেন।

সমাপনী বক্তব্যে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, দেশ ও মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করে যাবে প্রথম আলো। সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জয় দেখতে চায় প্রথম আলো।