প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য নেই একজনও পেশাদার ধাত্রী

রাজধানীর মিরপুরে মিডওয়াইফারি লিড কেয়ার সেন্টারে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে দেখভাল করছেন একজন মিডওয়াইফ।
ফাইল ছবি

নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য মিডওয়াইফারি সেবা অপরিহার্য। এই সেবা মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তবে দেশে প্রতি ১০ হাজার জনে আছেন শূন্য দশমিক ৩ জন পেশাদার মিডওয়াইফ বা ধাত্রী। দেশে মোট পেশাদার ধাত্রী আছেন ৪ হাজার ৩৯৬ জন আর সহযোগী ধাত্রী আছেন ৭ হাজার ২০২ জন। বন্ধ আছে মিডওয়াইফারি শিক্ষায় সরাসরি পড়াশোনার সুযোগও।

আন্তর্জাতিক ধাত্রী দিবস উপলক্ষে গতকাল বুধবার প্রকাশিত ‘দ্য স্টেট অব দ্য ওয়ার্ল্ডস মিডওয়াইফারি ২০২১’ শীর্ষক এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ৩৩টি সংস্থার সহযোগিতায় প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং ইন্টারন্যাশনাল কনফেডারেশন অব মিডওয়াইফস (আইসিএম)।

আন্তর্জাতিক ধাত্রী দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ছিল, ‘ডেটা অনুসরণ করুন, ধাত্রীবিদ্যায় বিনিয়োগ করুন’। যৌন, প্রজনন, মাতৃ, নবজাতক ও কৈশোরকালীন স্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। তবে এবার বিশেষ করে জোর দেওয়া হয় মিডওয়াইফ বা ধাত্রীদের নিয়ে। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ধাত্রীবিদ্যায় জরুরি ভিত্তিতে বিনিয়োগ করা দরকার বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। এবারের প্রতিবেদনটি উৎসর্গ করা হয়েছে করোনাকালে সারা বিশ্বে প্রাণ হারানো স্বাস্থ্যকর্মীদের।

বৈশ্বিক ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ২৮ লাখ ৯৬ হাজার ৭২০ শিশুর জন্ম হয়। তবে কেবল ৫৩ শতাংশ শিশুর জন্মের ক্ষেত্রে দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী উপস্থিত ছিলেন। দেশে যেসব স্বাস্থ্যকর্মীকে মিডওয়াইফারি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স হিসেবে ধরা হয়, তাঁরা ধাত্রীবিদ্যায় খুবই সীমিত দক্ষতার প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন।

এসব স্বাস্থ্যকর্মীর প্রশিক্ষণ কোনোভাবেই আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সমান নয়। অথচ এসব স্বাস্থ্যকর্মীকে পেশাদার নার্সের মতো দক্ষ বলে ধরা হয়। তাঁরা চিকিৎসাসেবার ৪৪ শতাংশ সময় যৌন, প্রজনন, মাতৃ, নবজাতক এবং কৈশোরব্যাপী স্বাস্থ্যে ব্যয় করেন এবং পেশাদার নার্সদের মতো করে তাঁরা সেবা দিতে পারবেন বলে ভাবা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মিডওয়াইফারি শিক্ষায় সরাসরি পড়াশোনার সুযোগের আগে বাংলাদেশে একটি ছয় মাসের কোর্স চালু ছিল। এই কোর্সের মাধ্যমে নার্স-মিডওয়াইফরা প্রশিক্ষিত হতেন। এই ছয় মাসের কোর্সটি নার্সিং পড়াশোনায় ১৮ মাসের বৈশ্বিক মানদণ্ডের সমান শিক্ষা বলে ধরা হতো। বর্তমানে বাংলাদেশে ওই নার্সিং কোর্সটি বন্ধ আছে।

বাংলাদেশে কর্মরত ধাত্রীদের শতভাগই নারী এবং এঁদের ৭৭ শতাংশের বয়স–৩৫ এর নিচে। দেশে মিডওয়াইফারি শিক্ষায় একটি জাতীয় নীতিমালা এবং ধাত্রীবিদ্যা চর্চায় একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা আছে। এ দেশে ধাত্রীবিদ্যা চর্চা করতে হলে লাইসেন্স বা নিবন্ধন নেওয়া বাধ্যতামূলক। তবে সে পুনর্নিবন্ধনের ক্ষেত্রে পেশাদার উন্নতির বিষয়টি উপেক্ষিত।

প্রতিবেদনও আরও বলা হয়, ২০১৯ সালে মিডওয়াইফারি নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

কিন্তু ধাত্রীদের নিবন্ধনসংক্রান্ত বিবাদের কারণে এই নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীকালে তা সমাধান হলেও নিয়োগ হয়নি।