প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা 'শশী লজ' চার মাস ধরে অরক্ষিত

দেয়াল ধসে পড়ায় ময়মনসিংহে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে শশী লজ। গত মঙ্গলবার তোলা ছবি l প্রথম আলো
দেয়াল ধসে পড়ায় ময়মনসিংহে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে শশী লজ। গত মঙ্গলবার তোলা ছবি l প্রথম আলো

ময়মনসিংহ শহরে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা ‘শশী লজ’ প্রায় চার মাস ধরে অরক্ষিত। আনুমানিক ১৩০ বছর আগে নির্মিত এ লজের পেছনের দিকের সীমানাপ্রাচীরের ১০০ গজ ধসে পড়ে গত জুন মাসে। কিন্তু এখনো তা মেরামত করা হয়নি।
গত বুধবার দেখা যায়, সীমানাপ্রাচীরটি ধসে পড়ায় পুরোপুরি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে এই স্থাপনা। ধসে পড়া অংশের লাগোয়া শশী লজের পুকুর। অনেকে ওই পুকুরে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছেন। তা ছাড়া পুকুরপাড়ে অনেককে শুয়ে-বসে থাকতে দেখা যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ময়মনসিংহের মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজ সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী নয় একর জমির ওপর দৃষ্টিনন্দন দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেন। সূর্যকান্ত নিঃসন্তান ছিলেন। তিনি তাঁর দত্তক ছেলে মহারাজ শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর নামে এর নাম দেন ‘শশী লজ’। ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে প্রাসাদটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী বাড়িটি পুনরায় নির্মাণ করেন।
১৯৫২ সালে এ বাড়িতে মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। বাড়িটির মূল অংশ মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয় ও দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। ২০১৫ সালে ৪ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর জাদুঘর স্থাপনের জন্য শশী লজটি নিয়ে নেয়। বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ও শশী লজের সীমানা নির্ধারণের কাজ করছে।
মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষকেরা বলেন, গত ১২ জুন রাতভর ভারী বৃষ্টিতে শশী লজের পেছনের অংশের আনুমানিক ১০০ গজ সীমানাপ্রাচীর ধসে পড়ে। এ ছাড়া প্রাচীরের বাকি অংশটুকু ঝুঁকিপূর্ণ। দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদি বিভিন্ন কোর্সে এখানে প্রায় ৩০০ প্রশিক্ষণার্থী আছেন। তাঁর মধ্যে অনেকেই থাকেন কলেজের ভেতরের হোস্টেলে। শশী লজ থেকে কলেজ পৃথক হয়ে গেলেও এখানে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়নি। এতে করে হোস্টেলে থাকা প্রশিক্ষণার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
নাম প্রকাশ না করার সূত্রে মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী বলেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কলেজের অধীনে থাকা শশী লজটি নিজেদের অধিকারে নিয়ে নিয়েছে। কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীরা বিষয়টি সহজে মেনে নিতে পারেননি। তাঁরা (প্রশিক্ষণার্থী) এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মানববন্ধনও করেছেন। এ কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষ শশী লজ রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে কিছুটা উদাসীন ভাব দেখাচ্ছে।
কলেজের অধ্যক্ষ ফেরদৌস বেগম মনসুরা বেগম এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। গত বুধবার তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যমে কোনো কথা বলা তাঁর নিষেধ আছে।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিচালক রাখী রায় বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ হলে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কাজ শুরু করা হবে।