প্রথম তদন্ত ভুল, বদলে গেল সাক্ষীর বয়ানও

জঙ্গি গ্রেপ্তারের ঘটনায় দায়ের করা চারটি মামলা অধিকতর তদন্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। সেই অভিযোগপত্রে বদলে যায় সবকিছু। আগের তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্য ভুল প্রমাণিত হয় নতুন তদন্তে। আবার একই সাক্ষী আগে যে বক্তব্য দেন, নতুন তদন্তে সেটাও বদলে যায়।
আইনজীবীরা বলছেন, এভাবে তদন্ত করে মামলাটি দুর্বল করা হয়েছে। তদন্ত প্রক্রিয়ার এই ত্রুটির সুবিধা পাবে আসামিপক্ষ।
তবে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান সরকারি কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু সেটা মানতে নারাজ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, আসামির বিরুদ্ধে সম্পূরক প্রতিবেদন দেওয়ায় বিচারে কোনো সমস্যা হবে না। আসামিরা আইএস না জেএমবি, সেটাও বড় কথা নয়। তদন্তকারীরা দেখছেন, আসামিদের সঙ্গে আইএসের সম্পৃক্ততা নেই।
২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও ও সূত্রাপুর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে চারটি মামলা করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তদন্ত শেষে এসব মামলার অভিযোগপত্রও দেওয়া হয়। আদালত অভিযোগপত্র আমলে নেন। বিচার পর্যায়ে থাকা অবস্থায় মামলাগুলোর পুনঃ তদন্ত চেয়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আবেদন করে পুলিশ। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের মার্চ মাসে পুনঃ তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। তদন্ত শেষে গত বছরের অক্টোবর, নভেম্বর ও চলতি বছরের জানুয়ারিতে সম্পূরক প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ।
পুলিশের দেওয়া সম্পূরক অভিযোগপত্রগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সম্পূরক প্রতিবেদনে নতুন সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেনি পুলিশ। আগের প্রতিবেদনে যেসব আলামত ছিল, সম্পূরক প্রতিবেদনেও তা-ই রাখা হয়েছে। নতুন কোনো আলামত কিংবা নতুন কোনো আসামিকে সম্পূরক অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কেবল আগের তদন্ত প্রতিবেদনে যেসব স্থানে আইএস লেখা শব্দ ছিল, সেগুলো বাদ দেওয়া হয়।
২০১৫ সালে আদালতে জমা দেওয়া যাত্রাবাড়ী থানার মামলার অভিযোগপত্রে প্রধান আসামি ছিলেন শাখাওয়াতুল কবির। শাখাওয়াতুলসহ চারজনের বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, শাখায়াতুল জেএমবির আঞ্চলিক সমন্বয়ক। তিনি পাকিস্তান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে জেএমবির পাশাপাশি বাংলাদেশে আইএসের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। ১৬১ ধারার জবানবন্দিতে সাক্ষীরা বলেন, আসামিরা আইএসের সক্রিয় সদস্য।
কিন্তু এই মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রে বলা হয়, শাখাওয়াতুলসহ চারজনের কেউই আইএসের সদস্য নন। আইএসের সঙ্গে তাঁদের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। সবাই জেএমবির সদস্য। আগের প্রতিবেদনের সাক্ষীদের ১৬১ ধারার জবানবন্দিতে যে স্থানে আইএস শব্দ ছিল, তা বাদ দেওয়া হয়। যেমন প্রথম প্রতিবেদনে সাক্ষী এসআই মশিউর রহমান তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, আসামি শাখাওয়াতুল আইএসের সমন্বয়ক। অন্য আসামি আনোয়ার বাতেন বাংলাদেশে আইএসের আঞ্চলিক সমন্বয়ক। অথচ এই মশিউর রহমান সম্পূরক অভিযোগপত্রে বলেছেন যে তাঁরা জেএমবির সদস্য।
জমা দেওয়া সম্পূরক অভিযোগপত্রের তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, আগের অভিযোগপত্রে শাখাওয়াতুল কবিরকে আইএসের সমন্বয়ক বলা হলেও তদন্তে তাঁর আইএসে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ মেলেনি। অন্য আসামিরাও আইএসের সদস্য নন। সবাই জেএমবির সদস্য।
এভাবে সম্পূরক অভিযোগপত্র দিলে মামলার কোনো ক্ষতি হবে কি না, জানতে চাইলে আইনজীবী আমিনুল গনি টিটো বলেন, ফৌজদারি মামলায় যদি একই সাক্ষী দুজন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দুই ধরনের বক্তব্য দেন, তাহলে সেই সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না। সম্পূরক তদন্ত প্রতিবেদনে মামলার মোটিভ যদি বদলে যায়, তাহলে মামলার বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যায়। ধরে নিতে হবে তা সাজানো। স্বাভাবিকভাবেই এর সুফল যায় আসামিপক্ষের দিকে।