প্রথম দিনেই সুখবর, বাড়ছে মেয়াদ

বইমেলার মাঠে চলছে নির্মাণযজ্ঞ। সাধারণত প্রথম দিনে যেমন থাকে, তার চেয়ে ঢের বেশি অগোছালো অবস্থা। তবে এসব ছাপিয়ে উদ্বোধনী দিনে মেলার বড় খবর হলো মেলার মেয়াদ এক মাসই হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভার্চ্যুয়াল বক্তৃতায় প্রকাশকদের দাবি বিবেচনায় এনে পরিস্থিতি সাপেক্ষে মাসব্যাপী মেলার কথা বলেছেন। তাতেই প্রকাশকদের মনে স্বস্তি ফিরেছে।

করোনা অতিমারির কারণে এবার অমর একুশে বইমেলা শুরু করা নিয়েই অনিশ্চয়তা ছিল। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে দুই সপ্তাহের মেলার অনুমোদন দেন। তার ফলে মেলার অবকাঠামো নির্মাণের আগাম প্রস্তুতির জন্য একাডেমির হাতে পর্যাপ্ত সময় ছিল না। তড়িঘড়ি করে একাডেমির প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার অবকাঠামো নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক কাজ শুরু হয়। বলা হয়েছিল মেলা ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। প্রকাশকেরা এতে মনঃক্ষুণ্ন ছিলেন। দুই সপ্তাহের মধ্যে অন্তত প্রথম তিন দিন স্টল তৈরি করে বই সাজাতেই চলে যায়। কাজেই গতবারের মতো এবারও মেলার খরচই উঠবে না বলে তাঁদের শঙ্কা ছিল। তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই মাসব্যাপী মেলার ঘোষণা আসায় তাঁরা অনেকটা হাঁপ ছেড়েছেন।

সন্ধ্যায় উদ্যান অংশের মেলার পরিস্থিতি দেখতে এসেছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা ও উপপরিচালক শাহাদাৎ হোসেন। মেলার মেয়াদ সম্পর্কে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী ভাষণে মাসব্যাপী মেলার কথা বলেছেন। তবে সেটি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে এবং মেয়াদের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়নি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ১৭ মার্চ। সেই দিন পর্যন্ত মেলা চলতে পারে। তাহলে অবশ্য এক মাসের চেয়ে একটু বেশি হয়ে যায়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে মেলা পরিচালনা কমিটির সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এরপরে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হবে।

আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও মেয়াদ বাড়ছে, এ নিয়ে প্রকাশকেরা মোটামুটি নিশ্চিত। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতাস্তম্ভের সামনেই এবার অন্য প্রকাশের প্যাভিলিয়ন। গতকাল সন্ধ্যায় দেখা গেল, কাঠামো তৈরির কাজই পুরো শেষ হয়নি। ভেতরে–বাইরে রং করা, র‌্যাক তৈরি করা এসব কাজ চলছে। অন্যপ্রকাশের প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বললেন, এক মাসের মেয়াদ অমর একুশে বইমেলার চিরাচরিত ঐতিহ্য। মাসব্যাপী মেলার ঘোষণা প্রকাশকদের জন্য খুবই খুশির খবর। সময় কমে যাওয়ায় প্রকাশকদের মধ্যে যে হতাশা এসেছিল, তা এখন কেটে যাবে। নতুন উদ্যমে সবাই কাজ শুরু করবেন।

প্রথম দিনে প্রকাশকের প্রস্তুতি না থাকলেও গ্রন্থানুরাগী নগরবাসী সময়ক্ষেপণ করেননি। প্রচুর জনসমাগম হয়েছিল মেলায়। আগের দিনই গেছে পয়লা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস। তার রেশ গতকালও ছিল। বাসন্তী-লাল শাড়ি, পাঞ্জাবি আর ফুলের মালায় সাজসজ্জা করে বিভিন্ন বয়সী বিপুল সংখ্যায় নর–নারী এসেছিলেন তাঁদের প্রাণের বইমেলায়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলায় প্রায় ছয় লাখ বর্গফুটের বিশাল পরিসর। মাঠে নির্মাণসামগ্রী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আর চলাচলের পথ তৈরির কাজও শেষ হয়নি। তাই বেশ সাবধানেই পা ফেলতে হয়েছে তাঁদের। যেসব স্টলে বই সাজানো হয়েছে, সেখানে গিয়ে যাচাই–বাছাই, একটি–দুটি কেনাকাটাও করেছেন তাঁরা।

ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন জানালেন, কিছু বিক্রি হয়েছে, প্রথম দিন হিসেবে তাঁরা সন্তুষ্ট। প্রথমার প্যাভিলিয়ন উদ্যানের পশ্চিম পাশে স্বাধীনতাস্তম্ভের সামনে। বই সাজানোর কাজ শেষ। ক্রেতারা নতুন, পুরোনো বই দেখছিলেন হাতে তুলে। বিক্রয়কর্মীরা জানালেন, প্রথম দিনে ড. আকবর আলি খানের জীবনস্মৃতি পুরানো সেই দিনের কথা ও মঈনুস সুলতানের ভ্রমণকাহিনি ইথিওপিয়ার দানাকিল ডিপ্রেশনে নতুন এসেছে। কথা প্রকাশ থেকে নতুন এসেছে মুনতাসীর মামুনের ইতিহাসবিষয়ক বিদ্রোহী বাঙালি, ইউপিএল থেকে এসেছে ফারুক আহমদের বিলেতে বাঙালি অভিবাসন, মাওলা ব্রাদার্স থেকে এসেছে মোহাম্মদ মশিউর রহমানের বঙ্গবন্ধুর আইনি লড়াই।

‘পুরানো সেই দিনের কথা’

পুরানো সেই দিনের কথা আকবর আলি খান

পুরানো সেই দিনের কথা বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব ড. আকবর আলি খানের জীবনের উন্মেষ ও বিকাশের কাহিনি। তাঁর প্রথম বই বের হয় ৫২ বছর বয়সে। দীর্ঘদিন গবেষণা ছাড়া আকবর আলি খান কোনো বই লেখেন না। চমৎকার ও প্রাঞ্জল তাঁর ভাষা। পাঠক হিসেবেও তিনি তুখোড়। আদতে পড়তে পড়তে এবং গবেষণা করতে করতে একসময় লেখকে পরিণত হন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে লাজুক আকবর আলি খান জীবিকার জন্য কাজ করেছেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে। মুক্তিযুদ্ধেও সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। এই আত্মজীবনী লিখতে গিয়ে তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের প্রসঙ্গ, শৈশব, বই পড়ার আগ্রহ এসব সম্পর্কে লিখেছেন। বর্ণনা করেছেন সিভিল সার্ভিসের বিচিত্র কাজের অভিজ্ঞতা। এ ছাড়া এ বইয়ের তিনটি অধ্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস তুলে ধরেছেন। সাধারণ পাঠকদের ভালো লাগবে এবং বর্তমান প্রশাসকদের কাজে লাগবে।