প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠির জবাব পেল চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র

শীর্ষেন্দু বিশ্বাসের কাছে লেখা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিঠি
শীর্ষেন্দু বিশ্বাসের কাছে লেখা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিঠি

পটুয়াখালীর চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লিখেছিল। সেই চিঠির জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। চিঠি এখনো হাতে না পেলেও জবাব আসার খবরে উচ্ছ্বসিত সে। চিঠিতে পায়রা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

চতুর্থ শ্রেণির ওই ছাত্রের নাম শীর্ষেন্দু বিশ্বাস। পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র সে।
শীর্ষেন্দুর চিঠির জবাবে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন,

স্নেহের শীর্ষেন্দু,
আমার স্নেহাশীষ নিও। তোমার চিঠি পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। তুমি শুধু এ দেশের একজন সাধারণ নাগরিক নও বরং দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেওয়ার অগ্রজ সৈনিক। আমি জানি, পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার পায়রা নদীটি অত্যন্ত খরস্রোতা। নিজের পিতামাতাসহ অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এই নদীকেন্দ্রিক তোমার নিরাপত্তা সচেতনতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি বুঝতে পারি তোমার বীর মুক্তিযোদ্ধা দাদুর প্রভাব রয়েছে তোমার ওপর। মির্জাগঞ্জের পায়রা নদীতে একটি সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তোমাকে আশ্বস্ত করছি।

তোমার সার্বিক মঙ্গল কামনা করি। আমার দোয়া নিও। তোমার বাবা-মাসহ মুরুব্বিদের সালাম ও ছোটদের দোয়া দিও। অনেক অনেক আদর নিও।
—শেখ হাসিনা

চিঠিটি এসেছে শীর্ষেন্দুর স্কুলের ঠিকানায়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, শীর্ষেন্দুর কাছে লেখা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চিঠিটি আগামীকাল সোমবার বেলা ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে তুলে দেওয়া হবে। এই চিঠি ২০ সেপ্টেম্বর স্কুলে এসে পৌঁছে। বিষয়টি শীর্ষেন্দু ও তার বাবা-মাকে জানানো হয়েছে।

উচ্ছ্বসিত শীর্ষেন্দু জানায়, গত ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে স্কুলে গিয়ে সে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে চিঠিটি লেখে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানোর জন্য চিঠি সে মায়ের কাছে দেয়। তার মা চিঠিটি প্রধানমন্ত্রী বরাবর পোস্ট করেন।

তিন পৃষ্ঠার সেই চিঠিতে শীর্ষেন্দু লিখেছে,

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

শীর্ষেন্দু বিশ্বাস
শীর্ষেন্দু বিশ্বাস


সালাম ও শুভেচ্ছা নেবেন। আমি একজন সাধারণ নাগরিক। আমার নাম শীর্ষেন্দু বিশ্বাস। পিতা বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, মা শীলা রানী। আমি পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির একজন নিয়মিত ছাত্র। আমার দাদু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর নাম অবিনাশ সন্নামত। আমার মা সরকারি চাকরি করেন। আমি আপনার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎবার্ষিকীতে আপনার পিতার শৈশবকাল নিয়ে রচনা লিখে তৃতীয় স্থান অধিকার করি। আমাদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠিতে। আমাদের মির্জাগঞ্জ পায়রা নদী পার হয়ে যেতে হয়। এটি পটুয়াখালীর একটি উপজেলা। এ নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ। মানুষ ভয় পায়। কখনো নৌকা ডুবে যায়। কখনো কখনো ট্রলার ডুবে যায়।
আমার চেয়ে ছোট ভাইবোন তাদের মা-বাবাকে হারায়। তাই আমি চাই না কারও মা-বাবা চলে যান। আমি আমার মা-বাবাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। তাঁদের হারাতে চাই না। তাই আপনার কাছে একটাই অনুরোধ যে আপনি মির্জাগঞ্জ পায়রা নদীর ওপর ব্রিজের ব্যবস্থা করুন। তা যদি আপনি পারেন, তা হলে একটু আমাদের জন্য কষ্ট করে এই ব্রিজ তৈরি করার ব্যবস্থা করুন। আজ আর নয়। ইতি আপনার দেশের একজন সাধারণ নাগরিক।
—শীর্ষেন্দু বিশ্বাস।

মা-বাবার চাকরির সুবাদে পটুয়াখালী শহরের মুকুল সিনেমা সড়কে ভাড়া বাসায় থাকে শীর্ষেন্দুরা। জেলা শহরে বসবাস করলেও তাদের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলার আওরাবুনিয়া ইউনিয়নের ছয়আনি গ্রামে। আজ রোববার দুপুরে তাদের ভাড়া বাসায় গিয়ে কথা হয় শীর্ষেন্দু ও তার মা-বাবার সঙ্গে।

শীর্ষেন্দুর মা শীলা রানী সমবায় অধিদপ্তর পটুয়াখালী কার্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর। বাবা বিশ্বজিৎ বিশ্বাস একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। মা-বাবার একমাত্র সন্তান শীর্ষেন্দু। শীলা রানী বলেন, ২৬ আগস্ট ছেলের লেখা চিঠিটি তিনি ডাকযোগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠান। ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে মুঠোফোনে জানানো হয়, শীর্ষেন্দুর চিঠি পেয়ে প্রধানমন্ত্রী উচ্ছ্বসিত। শীলা রানী জানান, প্রধানমন্ত্রীর চিঠিটি কাল সোমবার শীর্ষেন্দুর হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে তার স্কুল থেকে জানানো হয়েছে।

বাবা বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘শীর্ষেন্দু আমাদের গর্বিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী তার চিঠির জবাব দিয়েছেন বলে আমরা আনন্দিত।’

শীর্ষেন্দুর সহপাঠী ও স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীর্ষেন্দু একটু অন্য রকমের। লেখাপড়ার পাশাপাশি সে সংস্কৃতিমনাও। অভিনয়সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিতি রয়েছে তার। গত মার্চ মাসে ঢাকায় ১৩তম জাতীয় নাট্যোৎসবে সে অভিনয়ও করেছে।