প্রবাসে দক্ষ কর্মী পাঠানোর সুযোগ নিতে পারেনি দেশ

এ বছরের প্রথম আট মাসে অনিয়মিত প্রক্রিয়ায় সাগরপথ ব্যবহার করে ইতালিতে পৌঁছানো অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ১৩ শতাংশ বাংলাদেশি।

ফাইল ছবি

করোনার প্রভাবে গত বছর (২০২০) বিদেশে কর্মসংস্থান ব্যাপকভাবে কমে যায়। তাই এর আগের বছরের (২০১৯) সঙ্গে তুলনা করলে চলতি বছর (২০২১) বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠানো কমে গেছে। ২০১৯ সালে বিভিন্ন দেশে পাঠানো কর্মীদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ ছিল দক্ষ। আর এ বছর এটি ২৩ শতাংশে নেমে এসেছে। মহামারির প্রভাবে দক্ষ কর্মীর বড় সুযোগ তৈরি হলেও তা নিতে পারেনি বাংলাদেশ।

অভিবাসন খাত নিয়ে মূল্যায়ন প্রতিবেদন তুলে ধরতে গিয়ে এমনটাই জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু)। ‘বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসনের গতি-প্রকৃতি-২০২১: সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে সংস্থাটি।

কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, রিক্রুটিং এজেন্সি বিদেশ থেকে তেমন কোনো কর্মসংস্থানের চাহিদাপত্র আনতে পারেনি। নিয়োগকর্তাদের মাধ্যমে অধিকাংশ কর্মী নিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যে থাকা প্রবাসীরা, যার সবই অদক্ষ শ্রেণির।

রামরুর প্রতিবেদন বলছে, দক্ষ, কম দক্ষ, আধা দক্ষ ও পেশাদার—এমন চার খাতে বিদেশে কর্মী পাঠানো হয়। ২০২০ সালে মাত্র ১ শতাংশ কর্মী যান পেশাদার খাতে। এ বছর এটি শূন্য দশমিক ০৬ শতাংশে নেমে আসে। ২০১৯ সালে কম দক্ষ কর্মী গেছেন ৪১ শতাংশ। এ বছর এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪ শতাংশে। এসব কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে রিক্রুটিং এজেন্সির তেমন ভূমিকা নেই। প্রবাসী কর্মীরা নিজেরা ব্যবস্থা করেই এমন খাতে নতুন কর্মী নিয়ে যান। এসব কর্মীর আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায় না। তা ছাড়া এ বছর আধা দক্ষ কর্মী গেছেন ৩ শতাংশ, ২০১৯ সালে যা ছিল ১৪ শতাংশ।

মালয়েশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ভালো দিক। তবে জবাবদিহি নিশ্চিত না করা গেলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আগের মতো মুখ থুবড়ে পড়বে।
তাসনিম সিদ্দিকী, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার, রামরু

রামরুর লিখিত প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে দক্ষ কর্মীর বাজার তৈরি হয়েছিল, যার সুযোগ নেওয়া যায়নি। ২০২১ সালে প্রায় সব কর্মী গেছে ‘ফ্রি ভিসা’ বা আত্মীয়দের মাধ্যমে। কাজের সুযোগ তৈরি করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ভিসা আনতে পারেননি।

রামরু বলছে, মধ্যপ্রাচ্য ছাড়া সরকার এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে নতুন শ্রমবাজার উন্মোচনের চেষ্টা করছে। মহামারির প্রভাবে নানা খাতে অভিবাসন খরচ বেড়েছে এই বছরে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে সরকার।

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার সুযোগ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ভালো দিক। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করা গেলে প্রবাসী কর্মীদের স্রোত দেখা যেতে পারে। জবাবদিহি নিশ্চিত না করা গেলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আগের মতো মুখ থুবড়ে পড়বে।

রামরুর প্রতিবেদন বলছে, ২০২০ সালে কেবল ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৯৯ কর্মী অভিবাসন করতে পেরেছিল। এটি আগের বছরের তুলনায় ৬৯ শতাংশ কম ছিল। এ বছর এটি বেড়ে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৮৯৩ জনে পৌঁছেছে। এর মধ্যে সৌদি আরব গেছেন ৭৬ দশমিক ১৫ শতাংশ কর্মী। বিএমইটির তথ্যভান্ডারে প্রবাসীদের গন্তব্য দেশ হিসেবে ১০০টির বেশি দেশের নাম আছে। সৌদির বাইরে ওমান, সিঙ্গাপুর, কাতার, মালয়েশিয়া, বাহরাইনে গেছে বেশির ভাগ কর্মী। অতিমারি চলাকালে সৌদি বাজার চালু না থাকলে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতো।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের কয়েকটি উৎস এলাকা রয়েছে, যেখান থেকে অভিবাসন বেশি হয়। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫০ শতাংশ অভিবাসন হয় ১০টি জেলা থেকে। এগুলো হলো কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, নোয়াখালী, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও লক্ষ্মীপুর।

অনিয়মিত অভিবাসন ও মানব পাচার বেড়ে যাওয়া নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রামরু। সংস্থাটি বলছে, ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম আট মাসে অনিয়মিত প্রক্রিয়ায় সাগরপথ ব্যবহার করে ইতালিতে পৌঁছানো অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ১৩ শতাংশ হচ্ছে বাংলাদেশি। ভূমধ্যসাগর পথে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উৎস দেশের তালিকায় দ্বিতীয় বাংলাদেশ।