প্রমত্ত পদ্মার বুকে সবচেয়ে বড় অবকাঠামো

পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ আগাগোড়াই চ্যালেঞ্জের ছিল। নির্মাণকাজের প্রতিটি পর্বেই কোনো না কোনো চ্যালেঞ্জ এসেছে। এখানে নদীশাসন যেমনটা চ্যালেঞ্জিং ছিল, তেমনি নদীর তলদেশে পাথর না থাকায় পাইলিং করাটাও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সেতুর নকশা পরিবর্তন করতে হয়েছে।

সেতু বিভাগ বলছে, পদ্মা সেতুর পাইল বিশ্বে গভীরতম। এ কাজ ছিল সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং। যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু যখন হয়, তখন সেটির পাইলও ছিল বিশ্বে গভীরতম। এখন পদ্মা সেতু বিশ্বে গভীরতম ভিত্তির সেতু বলা যেতে পারে।

ভরা বর্ষায় পদ্মা নদীর পানির প্রবাহ প্রতি সেকেন্ডে চার থেকে সাড়ে চার মিটার। সাধারণত পাহাড়ি নদীতে স্রোত বেশি থাকে। কিন্তু সমুদ্রে মিশে যাওয়ার আগের অবস্থানে এত স্রোত পদ্মার মতো অন্য কোথাও তেমন দেখা যায় না। এমন অবস্থা একমাত্র দক্ষিণ আমেরিকার নদী আমাজনেই দেখা যায়।

ব্রহ্মপুত্র সিরাজগঞ্জে ১৪ কিলোমিটার চওড়া। রাজশাহীর দিকে পদ্মা ৬ কিলোমিটার। এ রকম দুটি মিলিত ধারা মাওয়ার কাছে ৩ কিলোমিটার চওড়া এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মা সেতু যেখানে নির্মিত হয়েছে, সেখানে ভরা বর্ষায় নদীর গভীরতা দাঁড়ায় প্রায় ৬০ মিটার। এ সময় পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত বড় ক্রেন, বার্জ ও ড্রেজারকে থর থর করে কাঁপতে দেখা গেছে।

নদীর তলদেশে মাটির ১২৫ মিটার গভীরে পাইল বসানো ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এর আগে পৃথিবীর অন্য কোথাও কোনো সেতুতে এত গভীরে পাইল বসাতে হয়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পাইলিংয়ের নিচে পাথর ও বালু থাকে। কিন্তু পদ্মা সেতুতে কাদামাটি ছিল।

পাইলিংয়ের সময় নদীর তলদেশে নরম মাটি শক্ত করতে স্কিন গ্রাউটিং করা হয়। এ কাজে বিশেষ ধরনের অতি মিহি সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়। এতে পাইলের ওজন বহনক্ষমতা বাড়ে। পিলার ও স্টিলের কাঠামোর সংযোগস্থলে ভারী বিয়ারিং বসানো হয়েছে। সাধারণত সেতুতে দুটি করে বিয়ারিং বসানো হয়। কিন্তু পদ্মা সেতুতে দুই স্প্যানের সংযোগ স্থলে তিনটি করে বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়েছে।

পদ্মা সেতুকে ভূমিকম্প–সহনীয় করতে অনেক কাজ করা হয়েছে। ভূমিকম্পের সময় মাটির যে কম্পন, তার সবটা যেন সেতুর উপরিকাঠামোয় যেতে না পারে, তার জন্য ব্যবহার করা হয় ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং। এটি ব্যবহার করলে ভূমিকম্পের সময় সেতুর পাইলিং নড়াচড়া করলেও মূল সেতুর কাঠামোয় এটি কোনো প্রভাব ফেলবে না। নকশা অনুসারে, এটি প্রায় ১০ হাজার টন লোড সামলাতে সক্ষম।

পদ্মার মতো স্রোতস্বিনী নদীর পানির উচ্চতা বর্ষাকালে বেশ বাড়ে। তাই সেতুর নিচে নদীতে যেন নৌযানগুলো অনায়াসে চলাচল করতে পারে, সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হয়। পদ্মা নদীর ক্ষেত্রে এ জন্য প্রায় ৬০ ফুট ক্লিয়ারেন্স রাখতে হয়েছে।