প্রিয় দলের পতাকা ওড়াতে গিয়ে...

>

• পতাকা ওড়াতে গিয়ে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে
• দগ্ধ হয়ে ১০ জন ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছে
• ১০ জনের মধ্যে তিনজনই আইসিইউতে
• অসাবধানতাবশত এসব দুর্ঘটনাকে দুঃখজনক বলছেন চিকিৎসকেরা

‘পতাকাটি খুঁটিতে জড়িয়ে গিয়েছিল। রড নিয়ে সেটি ঠিক করতে যায় সুমন। হঠাৎ বিদ্যুতের সংস্পর্শে আমার ছেলের শরীরে আগুন ধরে যায়। সে পুড়তে থাকে। এ সময় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় ছেলে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে। তবে তার দুই পা কেটে ফেলতে হয়েছে।’

কথাগুলো অগ্নিদগ্ধ হয়ে দুই পা হারানো তৌহিদী মোরশেদের (সুমন) মা রওশন আরা বেগমের। বিশ্বকাপ ফুটবলে প্রিয় দলের পতাকা ঠিক করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন মিরপুরের তৌহিদী (৪০)। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। এরই মধ্যে তাঁর দুটি পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়েছে। তৌহিদীর জীবন এখনো শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানান চিকিৎসকেরা।

কেবল তৌহিদী সুমন নন, প্রিয় দলের পতাকা ওড়াতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে বিভিন্ন বয়সী ১০ জন ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছে। তাদের মধ্যে তিনজনই আইসিইউতে।

জানা গেছে, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকা ওড়াতে গিয়ে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে। বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের জাতীয় সমন্বয়কারী সামন্ত লাল সেন বলেন, প্রতি বিশ্বকাপ ফুটবলে পতাকা ওড়াতে গিয়ে বেশ কিছু মানুষ অগ্নিদুর্ঘটনার শিকার হয়ে চিকিৎসা নিতে আসে। তাদের অনেকেই আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়। এ বছরও কয়েকজনের অঙ্গহানি হয়েছে। আরও কয়েকজনের অঙ্গহানি হতে পারে। কেবল অসাবধানতাবশত এমন দুর্ঘটনা খুব দুঃখজনক।

গত সোমবার আইসিইউতে গিয়ে দেখা যায়, তৌহিদী ঘুমাচ্ছেন। তাঁর সারা শরীর, কাটা দুই পা ব্যান্ডেজে মোড়ানো। হাতেও গভীর পোড়া ক্ষত।

আইসিইউয়ের বাইরে বসে আছেন তৌহিদীর মা। অবসরপ্রাপ্ত এই স্কুলশিক্ষিকা জানান, সেদিন ছিল শেষ রোজা।মিনিট চল্লিশেক বাদেই ইফতার। তখন ছাদে ওড়ানো পতাকা ঠিক করতে যান আর্জেন্টিনার মহাভক্ত তৌহিদী। তখনই ঘটে ওই দুর্ঘটনা।

রওশন আরা চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, ছেলে পঙ্গু হয়ে ভীষণ যন্ত্রণায় হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। কিছুটা ক্ষোভ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আর্জেন্টিনা কি আমাদের চেনে? কী লাভ খেলা নিয়ে এত উন্মাদনার!’

২০০৩ সালে স্বামীকে হারিয়ে একমাত্র ছেলে তৌহিদী, পুত্রবধূ আর দুই নাতনিকে ঘিরেই রওশন আরার জীবন। চিকিৎসার খরচ জোটাতে গিয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে সারা জীবনের সঞ্চয়। সাহায্য নিতে হচ্ছে স্বজনদের।

তৌহিদীর মতো আইসিইউয়ের শয্যায় দিন কাটছে মুন্সিগঞ্জের কুচিয়ামোড়ার দুই চাচাতো ভাই রিফাত (১১) ও অভির (১৯)। বাঁশের মাথায় পতাকা ওড়াতে গিয়েছিল তারা। এ সময় বৈদ্যুতিক তারের সঙ্গে লেগে দগ্ধ হয় দুই চাচাতো ভাই। এতে তাদের সারা শরীর পুড়ে গেছে।

ছেলেরা প্রাণে বেঁচে গেলেও অস্ত্রোপচারের পর কী হবে ভেবে শঙ্কিত অভির মা তাসলিমা বেগম। তিনি বলেন, ‘আগুন লেগে পুরো বাঁশ পুড়ে গেছে। ছেলেরা বেঁচে আছে এই অনেক। তবে ওদের কষ্ট দেখে চোখের পানি ধরে রাখা যায় না। কী যে যন্ত্রণা পাচ্ছে ছেলে দুটো।’

অভির খালা জাকিয়া বেগম বলেন, ওরা দুজনই ভালো ছাত্র। নবম শ্রেণির ছাত্র অভির রোল নম্বর ২। ওদের কৃষক বাবারা চিকিৎসার খরচ জোগাতে ও সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে দিশাহারা।

হাসপাতালে উদ্বিগ্ন সময় কাটছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের ওমর ফারুকের। ডান হাতের তিনটি আঙুল কেটে ফেলতে হবে উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্রের। তার প্রিয় খেলোয়াড় মেসি। আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচের আগের দিন পতাকা ওড়াতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয় সে।