ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের মৃত্যুর ঘটনায় আইনি দিক দেখছে পুলিশ: ডিজি ফায়ার সার্ভিস
সীতাকুণ্ডের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের এতজন কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দিকটি দেখছে পুলিশ। এ কথা জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।
আজ মঙ্গলবার ফায়ারফাইটার শাকিল তরফদারের জানাজা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মাইন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের কঠিন দিন, শোকের দিন। আমাদের নয়জন মারা গেছেন, তিনজন নিখোঁজ। এত প্রাণহানি আগে কখনো ঘটেনি।’
এতজন ফায়ারফাইটারের মৃত্যু হলো, আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা মন্ত্রণালয়কে বলেছেন কি না, এমন প্রশ্নে মহাপরিচালক বলেন, আইনগত দিকটি দেখছে পুলিশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেছেন। তিনি নিশ্চয়ই নির্দেশনা দিয়েছেন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, গত রোববার সকাল পর্যন্ত তাঁরা কনটেইনার ডিপোর মালিকপক্ষের কাউকে দেখেননি। কারও সঙ্গে কথাও বলতে পারেননি। ঘটনাস্থলে শুধু ডিপোর একজন নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। ফলে ডিপোতে কি আছে জানা যায়নি। সে কারণেই ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের এতজন সদস্যের প্রাণহানি ঘটেছে বলে মনে করেন মহাপরিচালক।
ঠিক কি কারণে এত প্রাণহানি জানতে চাইলে মহাপরিচালক সেদিনকার ঘটনা সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, ৯৯৯ এ রাত ৯টা ২৫ মিনিটে একটা ফোন পেয়েই সীতাকুণ্ডের ওই ডিপোতে ছুটে যান ফায়ারফাইটারেরা। নিয়ম অনুযায়ী ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে তাঁরা বেরিয়েছিলেন। তাঁদের পৌঁছাতে সময় লেগেছে পাঁচ মিনিট।
ডিপোতে ওই সময় একজন নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন, তিনি আবার ওখানে কি আছে জানতেন না। পরদিন সকালে একজন ফায়ারফাইটারের ফোন থেকে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে মহাপরিচালক নিজেই ফোন করেন। তাঁকে বলেন, মালিকপক্ষের লোকজনের সঙ্গে তাঁর কথা বলা প্রয়োজন। পরে তাঁদের সঙ্গে কথা হয় তাঁর।
এই বিস্ফোরণের জন্য মালিকপক্ষ দায়ী কি না? মালিকই বা কি বলছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন বলেন, তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে তিনি কিছু বলতে চাইছেন না।
বিস্ফোরক নিয়ন্ত্রণে প্রশিক্ষিত ফায়ারফাইটারদের প্রথমেই কেন পাঠানো হলো না, এমন প্রশ্ন করা হয় মহাপরিচালককে। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী নিকটবর্তী দল সবার আগে বেরোবে। যাচাই–বাছাই করে আগুন নেভাতে গেলে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়।
তখন সংবাদকর্মীরাই দেরি কেন হলো সেই প্রশ্ন তুলবেন। সীতাকুণ্ডের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। ফায়ারফাইটাররা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তাঁরা যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আগুন নেভাচ্ছিলেন, সেখানেই একটা বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ফায়ারফাইটারদের অনেকের মৃত্যু হয়।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামেও হ্যাজমট টিমের সদস্য আছেন। তারপরও ঢাকা থেকে লোক পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া ফায়ার ব্রিগেডের সব কর্মীই কাজে দক্ষ। প্রত্যেকেরই আগুন নেভানোর অভিজ্ঞতা ছিল। অনভিজ্ঞতার জন্য এত প্রাণহানি হয়েছে, এটা তিনি মনে করেন না।
এর আগে কখনো আগুন নেভাতে গিয়ে এতজন ফায়ারফাইটারের মৃত্যু হয়নি। বাহিনীর মনোবলে এর কোনো প্রভাব পড়েছে কি না, জানতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দীন বলেন, তিনি আগুন লাগার কয়েক ঘণ্টার মাথায় নিজেই চট্টগ্রামে গেছেন। প্রত্যেক কর্মীর সঙ্গে কথা বলেছেন। শরীরের ৮০ ও ৫৪ শতাংশ পুড়ে যাওয়া দুই সদস্যকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি চেষ্টা করেছেন বাহিনীর মনোবল অটুট রাখতে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স শতভাগ দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর।