ফুটপাতে দোকান, সড়কে গাড়ি, জীবন হাতে পথচারী

‘ফুটপাতে দোকান আর সড়কের দুই পাশে রাখা সারি সারি গাড়ি। হাঁটার জায়গাই নাই। আমরা চলাচল করব কোন জায়গা দিয়ে।’ মতিঝিলের দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরের মন্তব্য এটি।দিলকুশা ডাকঘরের বিপরীতে কথা হয় পথচারী আজগর মিয়ার সঙ্গে। তিনি দিলকুশায় একটি সরকারি অফিসে চাকরি করেন। আজগর মিয়া বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর ধরে এইখানে চাকরি করছি। রাস্তায় রাখা শুধু গাড়ি আর গাড়ি। এ যেন গাড়ির হাট। যে যাঁর ইচ্ছেমতো গাড়ি রাখে। এতে পাবলিকের চলতে কষ্ট হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘মাঝে মাঝে পুলিশ অভিযান চালায়, মামলা দেয়। কয়েক দিন ভালো থাকে। এরপর আবার যা তা-ই।’ এসব গাড়ি সরালে সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন আজগর মিয়া।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকাখ্যাত মতিঝিলের দিলকুশা ডাকঘরের সামনের সড়ক, আর কে মিশন রোড থেকে শাপলা চত্বর হয়ে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত সড়ক, পূর্বাণী হোটেলের সামনের সড়কের দুই পাশে সারি সারি গাড়ি রাখা।

বঙ্গভবনের উত্তর দেয়ালসংলগ্ন সড়কের একপাশ জুড়েও গাড়ি দাঁড়িয়ে। এর মধ্যে বেশির ভাগই বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি (প্রাইভেট কার)। এ ছাড়া বেশ কিছু পিকআপ ভ্যান ও স্টাফ বাস রয়েছে। অফিস-সংশ্লিষ্ট ভবনে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় সড়কের ওপর অবৈধভাবে গাড়ি রাখতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। আর এসব সড়কের ফুটপাতেও সাজানো হয়েছে বিভিন্ন পণ্যের পসরা। সাধারণ পথচারী কীভাবে চলবেন, তা কেউ জানে না।দিলকুশায় হোসেন চেম্বারের সামনের সড়কে রাখা একটি প্রাইভেট কারের চালক জানালেন, হোসেন চেম্বারের একটি অফিসে চাকরি করেন তিনি। ওই ভবনে গাড়ি রাখার জায়গা নেই। তাই সড়কেই গাড়ি রাখেন।

মতিঝিলের দিলকুশা এলাকায় সাধারণ বীমা করপোরেশনের একটি কার পার্কিং বহুতল ভবন রয়েছে। গত মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ সড়কে অবৈধভাবে পার্কিং করা গাড়ি রেকার দিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আর মামলাও দিচ্ছে। সেখানে কথা হয় ট্রাফিক পুলিশের মতিঝিল জোনের পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা ও আরশাদুল্লাহর সঙ্গে। তাঁরা জানান, প্রায় প্রতিদিনই মতিঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে সড়কে অবৈধভাবে রাখা গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন তাঁরা। ফলে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তার পরও অনেকে সড়কেই গাড়ি রাখছেন।

গোলাম মোস্তফা প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, মতিঝিলে সাধারণ বীমা করপোরেশনের একটি কার পার্কিং ভবন রয়েছে। সেখানে অনেকে গাড়ি রাখেন। পাশেই নির্মাণাধীন সানমুন টাওয়ারে গাড়ি রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া গাড়ি রাখার জন্য সিটি সেন্টার প্রস্তুত। এই ভবন দুটিতে গাড়ি রাখা শুরু হলে সড়কে গাড়ির চাপ অনেকটাই কমে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

সাধারণ বীমা করপোরেশনের ভাড়া আদায় বিভাগের কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ৩৭/এ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় সাধারণ বীমা টাওয়ারের মোট আটটি তলায় গাড়ি রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে ৫৪৫টি গাড়ি রাখা যায়। এর মধ্যে মাসিক ভিত্তিতে ১৬৫টি গাড়ি রাখা হয়। দৈনিক ভিত্তিতে ১৫০ থেকে ২০০টি গাড়ি রাখা হয়। এ ছাড়া বেজমেন্টের তিনতলার মধ্যে প্রথমটিতে সাধারণ বীমার নিজস্ব গাড়ি রাখা হয়। বাকি দুটি তলা খালি থাকে।

সাধারণ বীমা করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, এখানে গাড়ি রাখতে মাসে দুই হাজার ৫০০ টাকা দিতে হয়। আর দৈনিক ভিত্তিতে প্রথম দুই ঘণ্টা ২০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি ঘণ্টার জন্য ১০ টাকা হিসাবে পরিশোধ করতে হয়।
এদিকে মতিঝিলে বহুতল ভবন সিটি সেন্টারের প্রথম তলা থেকে অষ্টম তলা পর্যন্ত গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে (দক্ষিণ) মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান সিটি সেন্টারের ব্যবস্থাপক (হাউস কিপিং) মতিউর রহমান। তিনি প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, এই ভবনের গাড়ি রাখার জন্য নির্ধারিত তলাগুলো প্রস্তুত রয়েছে। সিটি করপোরেশন চাইলেই সাধারণের জন্য গাড়ি রাখার ব্যবস্থা চালু করতে পারে।

এ বিষয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের (দক্ষিণ) আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (অঞ্চল-২) রণজিত চন্দ্র সরকার বলেন, মতিঝিল এলাকার যানজট নিরসনে সিটি সেন্টারে গাড়ি রাখার সুব্যবস্থা করা হয়েছে। এটা পুরোপুরি কার্যকর হলে এই এলাকার যানজট কমে যাবে বলে তিনি আশা করেন।