ফুলের নাম বিচিত্রা

ব্রানফেলসিয়া বা বিচিত্রা ফুল l ছবি: লেখক
ব্রানফেলসিয়া বা বিচিত্রা ফুল l ছবি: লেখক

চৈত্রের শুরু। জাতীয় সংসদ ভবনের সামনের প্লাজা ডিঙিয়ে পশ্চিম দিকে রাস্তার পাশে পৌঁছাতেই চোখ আটকে গেল দুটি ঝোপে। ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে ঝোপ দুটি। বেগুনি, গোলাপি, সাদা অসংখ্য ফুলে ডালপালা ভরা। সবুজ পাতায় পাতায় খেলা করছে বিচিত্ররঙা ফুলের দল, বাতাসে দুলছে। কাছে যেতেই ফুলগুলো তার সুমিষ্ট সুগন্ধ বিলিয়ে আরও কাছে টেনে নিল।
সত্যিই বিচিত্র এই ফুল! এ জন্যই বোধ হয় ব্রানফেলসিয়া ফুলের বাংলা নাম রাখা হয়েছে বিচিত্রা। ব্রানফেলসিয়া এর গণগত নাম, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Brunfelsia pauciflora। ব্রানফেলসিয়ার প্রায় ৫০টি প্রজাতি রয়েছে। বিশেষ করে ফুলের রং বদলানোর স্বভাব এই ফুলটিকে স্বাতন্ত্র্য দিয়েছে। ফুল ফোটার সময় ফুলের রং থাকে লালচে বেগুনি। ধীরে ধীরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে রং ফিকে হতে থাকে, হয়ে যায় নীলচে গোলাপি, শেষে হয় সাদা। এই তিন রঙের ফুলই এক গাছে একসঙ্গে থাকে। ফলে গাছে ফুলগাছের শোভা হয়ে ওঠে মনোমুগ্ধকর। এ জন্য এ ফুলটির ইংরেজি নাম রাখা হয়েছে yesterday-today-and-tomorrow, বাংলায় দাঁড়ায় আজ-কাল-পরশু।
ষোড়শ শতকে এ ফুলের গণগত নাম ব্রানফেলসিয়া রাখা হয়েছে জনৈক জার্মান সাধু ওটো ব্রানফেলসের নাম থেকে। লাতিন শব্দ বনোডোরার সঙ্গেও এর সম্পর্ক আছে, যার অর্থ সুমিষ্ট সুগন্ধ। বিচিত্রা ফুলের গাছ ঝোপালো মাঝারি গুল্ম প্রকৃতির। গাছ দুই থেকে আড়াই মিটার লম্বা হয়। ঝোপ প্রায় দেড় মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। বহু বছর বাঁচে। বছরের সব সময়ই গাছে পাতা থাকে। পাতার ওপর পিঠ গাঢ় সবুজ, নিচের পিঠ হালকা সবুজ। ফুল যখন ফোটে তখন রং থাকে লালচে বেগুনি, শেষে সাদা হয়ে যায়। ফুল যতই শোভাময়ী হোক না কেন, এর ফল কিন্তু বিষাক্ত।
গাছের আগার ডাল কেটে কলম করে এর চারা তৈরি করা যায়। বীজ থেকেও চারা হয়। এই ফুলের গাছ রোদে ভালো হয়। আংশিক ছায়াযুক্ত জায়গাতেও লাগানো যেতে পারে। বাগানে, টবে, ড্রামে ছাদের বাগানে লাগানো যায়। বছরে দুবার অর্থাৎ আগস্ট ও ডিসেম্বর মাসে গাছের গোড়ার মাটিতে জৈবসার দিলে গাছের বৃদ্ধি ও চেহারা ভালো হয়, ফুলও বেশি ফোটে। শুষ্ক মৌসুমে বা গাছের গোড়ার মাটি শুকিয়ে এলে সেচ দেওয়া উচিত। ঢাকার ফার্মগেটে বিএআরসি প্রাঙ্গণেও আছে ব্রানফেলসিয়ার গাছ। ব্রানফেলসিয়ার আদিনিবাস ব্রাজিল।