ফেরি কেন ভিন্ন পথে, উত্তর জানা যায়নি

তেল চুরির উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত পথে ফেরিটি নেওয়া হতে পারে বলে সন্দেহ করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ফেরির ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত পদ্মা সেতুর ১৭ নম্বর পিলারের ‘পাইল ক্যাপ’।ছবি: সংগৃহীত

পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কার ঘটনায় মাস্টার ও সুকানিকে দায়ী করেছে তদন্ত কমিটি। তবে কেন তাঁরা নিয়মিত পথে না গিয়ে পদ্মা সেতুর ১৬ ও ১৭ নম্বর পিলারের মধ্য দিয়ে সংক্ষিপ্ত পথ বেছে নিয়েছিলেন, তার কারণ জানা যায়নি। এর পেছনে ফেরির তেল চুরির উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এই ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি করেছিল বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। গতকাল রোববার সংস্থা প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মাস্টার আবদুর রহমান খান ও সুকানি মো. সাইফুল ইসলাম সে সময় ফেরির স্টিয়ারিং সিস্টেম কাজ করছিল না বলে যে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, তা ঠিক নয়। দুই দিন আগে স্টিয়ারিং সিস্টেমের সার্কিট ব্রেকার নতুনভাবে স্থাপন করা হয়েছিল। দুর্ঘটনার পর ওই স্টিয়ারিং দিয়েই ফেরিটি চালিয়ে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে আনা হয়।

গত শুক্রবার সকালে রো রো ফেরি শাহজালাল মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে শিমুলিয়ায় আসার পথে পদ্মা সেতুর ১৭ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয়। এতে সেতুর ক্ষতি হয়নি, তবে ওই পিলারের ‘পাইল ক্যাপের’ খানিকটায় সিমেন্টের পলেস্তারা খসে পড়েছে। অপরদিকে ফেরির সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অন্তত ২০ জন যাত্রী আহত হন। সেতু কর্তৃপক্ষের জিডির পর মাস্টারসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছে শিবচর থানার পুলিশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেরিটি সম্প্রতি মেরামত করা হয় এবং সেটি পুরোপুরি চলাচল উপযোগী ছিল। পদ্মায় চলাচলরত নৌযানগুলো বাংলাবাজার ঘাট থেকে এসে মাগুরখণ্ডে মূল পদ্মা নদীতে বেরিয়ে কিছুটা উজানে পাড়ি দিয়ে সেতুর ৬ থেকে ১৩ নম্বর পিলারের মধ্য দিয়ে পার হয়। সেখানে এই ফেরি উজানে না গিয়ে স্রোতের অনুকূলে গিয়ে সেতুর ১৬ ও ১৭ নম্বর পিলারের মধ্য দিয়ে যেতে চায়। তীব্র স্রোতের মধ্যে ফেরির গতি কম থাকায় সেটি সেতুর পিলারে আঘাত হানে। পূর্বপ্রস্তুতি ও অসতর্কতার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটে।

নৌপরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ফেরি কম গতিতে চালালে ইঞ্জিনের তেল খরচ কম হয়। স্রোতের অনুকূলে ফেরি চালিয়ে তেল বাঁচিয়ে তা বিক্রির অভিযোগ পুরোনো। এখানেও সে ঘটনাই ঘটেছে বলে ধারণা করছেন বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা। সংস্থাটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ওই ফেরির মাস্টার আবদুর রহমান ও সুকানি সাইফুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দুজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

এর আগে গত মঙ্গলবার শাহ মখদুম নামের একটি ফেরি পদ্মা সেতুর ১৬ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম বলেন, সেটির মাস্টার আমির হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে।

তদন্ত কমিটি কয়েকটি সুপারিশ করেছে। সেগুলো হলো: সেতু এলাকা এড়াতে বাংলাবাজার ঘাটকে মাঝিরকান্দিতে এবং শিমুলিয়া ঘাটটি পুরোনো মাওয়া ঘাটে স্থানান্তর, কম গতির ফেরিগুলো সরিয়ে শক্তিশালী ইঞ্জিনের ফেরি চালানো এবং পদ্মা সেতুর পিলারের পাইল ক্যাপে রাবারের প্রতিরোধক বসানো।