কথিত ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে হামলা, লুটপাট

আগুনে পুড়ে যাওয়া দোকান দেখছেন কনিকা রাণী। রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার করিমপুরে
ছবি: প্রথম আলো

ধর্ম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কথিত আপত্তিকর পোস্টটিকে কেন্দ্র করে রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দুপল্লিতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। কথিত ওই পোস্ট নিয়ে গতকাল রোববার দিনভর আলোচনা ছিল এলাকায়।

পোস্টটি করেছিলেন উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের করিমপুর দক্ষিণপাড়ার এক তরুণ। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে পুলিশ তাঁর বাড়িতে পাহারা বসায়। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে গ্রামটি ঘিরে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়। রাত নয়টায় তারা অতর্কিতে হামলা চালায়।

গতকাল রাতেই জগদীশ রায়ের মেয়ের বিয়ে পাকা হওয়ার কথা ছিল। পাত্রপক্ষ আসার আগে হামলার ঘটনা ঘটে। বাড়ির সব আসবাব আগুনে পুড়ে গেছে। এক লাখ টাকা ও এক ভরি সোনাও লুট হয়ে গেছে। দুটি গরু ছিল। তা–ও নিয়ে গেছে হামলাকারীরা।

করিমপুরে ৬০টি পরিবারের বাস। তাদের ৫০টি গরু লুট হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। দুটি গরু আগুনে পুড়ে গেছে। লক্ষ্মী রানী বললেন, তাঁদের তিনটি গরু লুট হয়েছে। ভবেষ রায়ের চারটি গরু নিয়ে গেছে।

কণিকা রানী বললেন, মুদিদোকানে দেড় লাখ টাকার মালামাল ছিল। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সেই ছাই হাতড়ে বেড়াচ্ছেন, যদি কিছু মেলে সেই আশায়। কাতর কণ্ঠে বললেন, ‘সব শেষ! কী নিয়ে বেঁচে থাকব, সেই চিন্তায় মাথা খারাপ হওয়া ছাড়া আর কী বাকি থাকিল!’

নন্দ রানীর ঘরের সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তাঁর স্বামী প্রদীপ চন্দ্র রায়ের একমাত্র অটোরিকশাটিও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে আত্মীয়স্বজনেরা আসছেন দেখতে। স্বজনদের জড়িয়ে তাঁর কান্না যেন আর থামে না।

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বড়করিমপুর গ্রামে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে শেষ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ঘরবাড়ি। পুড়ে যাওয়া ঘরের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন নন্দ রানী
ছবি: মঈনুল ইসলাম

হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, আশপাশের লোকজনের সঙ্গে আগুন দেওয়ার জন্য বাইরে থেকেও অনেকে এসেছিল। তাদের মধ্যে তরুণ ও যুবকদের সংখ্যা ছিল বেশি। প্রায় সবার হাতে ছিল লাঠি, রামদা, ছুরি। কারও কাছে ছিল কেরোসিন। হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের অনেকে পরিচিত মুখ।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। প্রতি পরিবারকে দুই হাজার টাকা দিয়েছেন দলের নেতারা। আজ দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেন।

বেলা ১১টার দিকে করিমপুর গ্রামটি পরিদর্শনে আসেন বিভাগীয় কমিশনার আবদুল ওয়াব ভূঁঞা, পুলিশের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার, জেলা প্রশাসক আসিব আহসান ও র‌্যাব-পুলিশের কর্মকর্তারা।

পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ইতিমধ্যে ৪০ জনকে আটক করা হয়েছে। নারকীয় এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা কেউ ছাড় পাবে না। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। এর সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক বিষয় দেখছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাজনীতির কথা বলতে পারব না। তবে উগ্র একটি গোষ্ঠী এ তাণ্ডব চালিয়েছে।’