ফোন করে দেওয়া যাবে ভূমি কর, ডাকযোগে আসবে পর্চা

একটি নম্বরে ফোন করে ঘরে বসে দেওয়া যাবে ভূমি উন্নয়ন কর। ফোন করে জমির খতিয়ান বা ম্যাপও পাওয়া যাবে ডাকযোগে। আর ভূমিসংক্রান্ত কোনো তথ্য বা অভিযোগও জানানো যাবে ফোন করেই।

১৬১২২ নম্বরে ফোন করে এসব সুবিধা পাওয়া যাবে। কল সেন্টারের মাধ্যমে ভূমিসেবা, ডাকযোগে ভূমিসেবা ও ভূমিসেবা ই-পেমেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে আগামীকাল বুধবার। রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ভূমি ভবনে এর উদ্বোধন হবে।

ভূমি অধিকার কর্মীরা সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে শিক্ষাগত সমস্যা এবং ভূমি অফিসের বিতর্কিত রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতির কারণে এসব পরিষেবা কতটুকু কার্যকর হবে সে বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
ঘরে বসে ভূমি কর

ভূমি কর এখন ঘরে বসে দেওয়া যাবে। এ জন্য ১৬১২২ নম্বরে ফোন করতে হবে। ফোন করার পর একজন ব্যক্তি তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধন করবেন। ইউনিয়ন ভূমি অফিস ওই তথ্য পাবে। ভূমি অফিস ব্যক্তির হোল্ডিংয়ের এন্ট্রি করে ওই আবেদন অনুমোদন করবে। তারপর হোল্ডিং নম্বরের তথ্য ব্যক্তি পাবেন। এরপর আবেদনকারী ব্যক্তি আবার ১৬১২২ নম্বরে ফোন করে হোল্ডিংয়ের তথ্য দেবেন। কল সেন্টার থেকেই আবেদনকারী এরপর তাঁর মুঠোফোনে এসএমএস বা খুদে বার্তা পাবেন। এরপর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টোকেন নম্বর দিয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা যাবে। কর পরিশোধের ৭২ ঘণ্টা পর ডিজিটাল দাখিলা আবেদনকারী ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে জমা হবে।

শুধু ফোন করেই নয়, ভূমি মন্ত্রণালয়ের পোর্টাল land.gov.bd–এ আবেদন করেও ভূমিকর দেওয়া যাবে।

ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিকাশ, নগদ ও উপায়–এর মাধ্যমে এই পরিষেবা পাওয়া যাবে। ডাচ বাংলা ব্যাংকের ডেবিট কার্ডের মাধ্যমেও কর দেওয়া যাবে। এ ছাড়া ‘অনলাইন সরকারি পরিষেবা ‘একপে’র যে ৩৪টি পরিষেবা আছে, তার মাধ্যমেও এ বিল পরিশোধ করা যাবে।
১৬১২২ নম্বরে ফোন করার জন্য চার্জ প্রযোজ্য হবে।

ডাকযোগে পর্চা
ডাকযোগে পর্চা পেতেও ১৬১২২ প্রথমে ফোন করতে হবে। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্রসহ জমির তথ্য দিতে হবে। কল সেন্টারের মাধ্যমে আবেদন করার পর আবেদনকারী তাঁর মুঠোফোনে টোকেন নম্বর পাবেন। ওই নম্বর ব্যবহার করে মুঠোফোনের মাধ্যমে ফি দেবেন আবেদনকারী। সার্টিফায়েড কপি পাওয়ার জন্য আবেদনকারীকে কোর্ট ফি দিতে হবে ৫০ টাকা আর ডাকযোগে এই কপি পেতে অতিরিক্ত দিতে হবে ৪০ টাকা। কবে ওই ব্যক্তি কবে পর্চা নিজের নামে পাবেন, সেই তারিখ তাঁর মুঠোফোনে জানিয়ে দেওয়া হবে। পরে ডাক বিভাগের মাধ্যমে পর্চা আবেদনকারীর হাতে এসে পৌঁছাবে।

ভূমি অধিকার ও এ–সংক্রান্ত বিষয়ে গবেষণা করে বেসরকারি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা অনলাইন ও কল সেন্টারের মাধ্যমে ভূমি পরিষেবা দেওয়ার উদ্যোগকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, কোনো পরিষেবা যদি প্রাযুক্তিকভাবে পাওয়া যায়, তবে সেটা নিঃসন্দেহে উপকার বয়ে আনার কথা।

তবে এ–সংক্রান্ত কিছু জটিলতার কথা তুলে ধরেন শামসুল হুদা। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে উদ্বোধন হয় সাড়ম্বরে, কিন্তু পরিষেবাগুলোর প্রাপ্তি অনেক ক্ষেত্রে সহজভাবে হয় না। প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা একটি অন্যতম শর্ত। দেশের প্রায় ৩৮ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষের অক্ষরজ্ঞান হয়নি। তাঁরা কীভাবে সুবিধা নেবেন? সেক্ষেত্রে এসব পরিষেবা নতুন ধারার বঞ্চনা তৈরি করতে পারে।’

ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আবেদন ফরম পূরণ করতে কারও সহায়তা চাইলে, ই–নামজারির হালনাগাদ তথ্য জানতে চাইলে বা এই বিষয়ে কোনো অভিযোগ জানাতেও ১৬১২২ নম্বরে ফোন করা যাবে। আবার land.gov.bd–এ ঢুকেও আবেদন করা যাবে।

করোনাকালেই ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে ভূমির নানা পরিষেবা ডিজিটালাইজড করা শুরু হয়। এর মধ্যে ই–নামজারি বিপুল সাড়া ফেলেছে। ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ২২ লাখ ই-নামজারি আবেদনের মধ্যে ১৯ লাখ আবেদনের নিষ্পত্তি হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে পাওয়া ৫৫ লাখ ৭৪ হাজার ৭৩৪টি আবেদনের মধ্যে ৪৪ লাখ ১৪ হাজার ৩১৯টি আবেদনের নিষ্পত্তি হয়েছে।

ফোন করে বা ডাকযোগে ভূমির পরিষেবায় শিক্ষা ও আর্থিক দিক থেকে এগিয়ে থাকা ব্যক্তিরাই বেশি সুবিধা পেতে পারেন বলে আশংকা ভূমি অধিকার কর্মী শামসুল হুদার। এই শঙ্কার পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘ভূমির কাগজপত্র সরকারের হাতে যা আছে, তা যে সঠিক আছে সেই নিশ্চয়তা কে দেবে? এ–সংক্রান্ত বিরোধ প্রচুর। তাই মানুষ কাগজ চেয়ে সঠিকটাই যে পাবেন, তার নিশ্চয়তা তো নেই।’

শিক্ষায় অনগ্রসরতা বা ভূমি অফিসের জটিলতা নিয়ে শামসুল হুদা যে প্রশ্ন তুলেছেন, তা এই সেবা পেতে কোনো বাধা হবে না বলে মনে করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার দাস। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হাতে যে অবস্থায় নথি আছে মানুষ তাই পাবে। যদি কোনো ভ্রান্তি থাকে তা দূর করার উপায়ও আছে।’

প্রদীপ দাস আরও বলেন, ‘কোনো মানুষ যদি প্রযুক্তি ব্যবহারে অক্ষম হন, তার জন্য এখন প্রচলিত ব্যবস্থাও চালু থাকবে। সেসব উঠে যাচ্ছে না। শুধু গতিশীল ও সহজ করা হয়েছে বিষয়গুলো।’