বগুড়া সরকারি কলেজে ১৮ বিষয়ের শিক্ষক নেই
আট মাস আগে বগুড়া গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউটকে সাধারণ কলেজে উন্নীত করা হয়। নামকরণ হয় বগুড়া সরকারি কলেজ। বর্তমানে এ কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান, কলা ও ব্যবসায় শিক্ষা—এ তিন বিভাগে শিক্ষার্থী ৫৭৭ জন। ২৩টি বিষয় পড়ানোর জন্য শিক্ষকের অনুমোদিত পদ রয়েছে অধ্যক্ষসহ মাত্র আটটি। প্রভাষকের চারটি পদের মধ্যে দুটিই খালি। বাংলা আবশ্যিক হলেও এ বিষয়ে কোনো শিক্ষক নেই। পদার্থবিদ্যার একজন প্রভাষক দিয়ে চলছে পুরো বিজ্ঞান বিভাগ।
শিক্ষক নেই রসায়ন, প্রাণিবিদ্যা, ভূগোল, মনোবিজ্ঞান, কৃষিবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, সমাজবিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, দর্শন, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, মার্কেটিং, পরিসংখ্যানসহ ১৮টি বিষয়ের। ছয়জন সংযুক্ত শিক্ষক দিয়ে চলছে উদ্ভিদবিদ্যা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, গণিত ও ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের পাঠদান।
সমস্যা শুধু শিক্ষক নিয়ে নয়, কলেজটির অবকাঠামো, শ্রেণিকক্ষ ও বেঞ্চসংকটও প্রকট। গড়ে প্রায় ছয়জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে এক জোড়া বেঞ্চ। নেই বিজ্ঞানাগার ও পাঠাগার। শিক্ষকদের বসার জন্য নেই প্রশাসনিক ভবন।
কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, ঢাকা বোর্ডের অধীন বিশেষায়িত বগুড়া গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউটকে গত বছরের ১২ মে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে সাধারণ কলেজে উন্নীত করে। গত বছরই রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড কলেজটিতে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ২৩টি বিষয় পড়ানোসহ ৬৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি দেয়। প্রথম বছরে (২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে) ৫৭৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। কিন্তু সরকারি কমার্শিয়াল কলেজ থেকে সাধারণ কলেজে উন্নীত করা হলেও নতুন করে শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয়নি। অধ্যক্ষসহ ছয়জন শিক্ষক এবং একজন মাত্র কর্মচারী দিয়ে চলছে কলেজের কার্যক্রম।
কলেজের অধ্যক্ষ মো. নূরন্নবী বলেন, কলেজে সুষ্ঠুভাবে পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানোর স্বার্থে নতুন করে ২৪ জন সহকারী অধ্যাপক, ২৪ প্রভাষকসহ ৪৮ জন শিক্ষক এবং ৩০ জন কর্মচারীর পদ সৃষ্টির জন্য গত বছরের ১০ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনো সাড়া মেলেনি। এ ছাড়া কলেজে দুটি একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, লাইব্রেরি ভবন ও বিজ্ঞানাগার নির্মাণ এবং স্মৃতি রক্ষার্থে পুরোনো লাল ভবন সংস্কার করে মিলনায়তন করা দরকার।
২৩ জানুয়ারি সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা এলাকায় ৮৯ শতক জায়গাজুড়ে বগুড়া সরকারি কলেজের ক্যাম্পাস। সাতমাথা-শেরপুর সড়কে কলেজের প্রধান ফটক পেরিয়ে উত্তর পাশে জরাজীর্ণ দোতলা ভবনে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। প্রায় অর্ধশতাব্দী পুরোনো এই ভবনে ছয়টি কক্ষের তিনটিই পরিত্যক্ত। অন্য তিনটিতে কোনোরকমে পাঠদান চলছে। পশ্চিম পাশে সম্প্রতি নির্মিত হয়েছে তিনতলা ভবন। এর প্রতিটি তলায় তিনটি করে কক্ষ। নয়টি কক্ষের মধ্যে একটি কম্পিউটার ল্যাব, তিনটিতে বিজ্ঞানাগার এবং একটিতে পাঠাগার স্থাপনের কাজ চলছে। উত্তর পাশে চুনসুরকির টিনের লাল ভবন পুরোটাই পরিত্যক্ত। পরিত্যক্ত ভবন পেরিয়ে সাতমাথা লাগোয়া একতলার তিনটি ছোট কক্ষ। সেখানেই চলছে দাপ্তরিক কার্যক্রম। একটি অফিস, একটি শিক্ষকদের কক্ষ এবং অন্যটি অধ্যক্ষের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
কলেজ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ডিপ্লোমা ইন কমার্স পড়ানোর জন্য ১৯৬৫ সালে সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সংযুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে শহরের সাতমাথায় ব্যবসায় শিক্ষা শাখা চালু হয়। শুরুতে নামকরণ করা হয় সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। ১৯৮১ সালে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এটি বিশেষায়িত কলেজ হিসেবে উন্নীত করে বগুড়া গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট নামকরণ করা হয়। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ডিপ্লোমা ইন বিজনেস স্টাডিজ কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এর জনবলকাঠামোতে অধ্যক্ষ, তিনজন সহকারী অধ্যাপক, চারজন প্রভাষক এবং একজন অফিস সহায়কের পদ ছিল। নতুন করে পদ সৃষ্টি না করেই সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশের ১৬টি কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউটের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানকেও সাধারণ কলেজে উন্নীত করা হয়। বর্তমানে হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা ও অর্থনীতি বিষয়ে একজন করে সহকারী অধ্যাপক এবং ইংরেজি ও পদার্থবিদ্যা বিষয়ে দুজন প্রভাষক দিয়েই বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় পাঠদান চলছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে দুজন, গণিত, অর্থনীতি, উদ্ভিদবিদ্যা এবং আরবি ও ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে একজন করে শিক্ষক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে সংযুক্ত রয়েছেন।
বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কবির হোসেন ক্ষোভের সঙ্গে বলে, নামেই সরকারি কলেজ। শিক্ষক নেই, শ্রেণিকক্ষ, বিজ্ঞানাগার, পাঠাগার, মিলনায়তন, ছাত্রাবাস নেই; পরিবহনসুবিধাও নেই। কলেজ চলছে জোড়াতালি দিয়ে। বসার জন্য পর্যাপ্ত বেঞ্চও নেই।
মানবিক বিভাগের আবির হোসেন বলে, সব শিক্ষার্থীর জন্য বাংলা বিষয় আবশ্যিক। কিন্তু এ বিষয়ে ক্লাস নেওয়ার কোনো শিক্ষক নেই। কলেজে পড়াশোনা না হওয়ায় প্রাইভেটই এখন ভরসা।