বগুড়ায় থেকেই লড়াই চালাবেন মা-মেয়ে

সুস্থ হয়ে বগুড়াতেই থাকতে চান ধর্ষণের শিকার মেয়ে ও তাঁর নির্যাতিত মা। শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন মেয়েটি শনিবার সকালে প্রথম আলোকে বলে, ‘এই শহর ছেড়ে কোথাও যেতে মন চাইছে না। প্রথমে ভেবেছিলাম হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়ার পর মাকে নিয়ে শহর ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাব। কিন্তু তাতে অপরাধীরা ভাববে, মামলা করে ভয়ে পালাইছি। এসপি স্যার অভয় দিয়ে গেছেন। এখন ভাবছি, এখানে থেকেই ওদের (আসামি) বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। দুশ্চিন্তা শুধু কলেজে ভর্তি নিয়ে। একটা ভালো কলেজে যদি ভর্তির সুযোগ পেতাম!’ মেয়ের কথায় সায় দিলেন মা।

হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান আবদুল মোত্তালেব হোসেন বলেন, মা-মেয়ে দুজনই এখন পুরোপুরি সুস্থ। ইচ্ছা করলে মা-মেয়ে হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় ফিরতে পারবে। পুলিশ বলেছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে রিলিজের বিষয়টি জানাবে।

তুফান ও নারী কাউন্সিলর রিমান্ডে
ছাত্রী ধর্ষণ এবং পরে মা-মেয়েকে ন্যাড়া করে নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের হওয়া দুটি মামলার মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় বহিষ্কৃত শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার এবং তাঁর স্ত্রীর বড় বোন মার্জিয়া আকতার ওরফে রুমকিকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। শুক্রবার বিকেলে বগুড়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. আহসান হাবিবের আদালতে তুফান ও রুমকিকে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ। আদালত প্রত্যেকের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ও বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, রিমান্ডে তুফান ও মার্জিয়া মুখ খুলছেন না। আগামীকাল রোববার দুজনের রিমান্ড শেষ হবে। স্বীকারোক্তি না দিলে কাল ফের দুজনকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হবে।

গত ১৭ জুলাই বিকেলে কলেজে ভর্তি-ইচ্ছুক ছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন বগুড়ার শহর শ্রমিক লীগের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক তুফান সরকার। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তিনি ও তাঁর সহযোগীরা দলীয় ক্যাডার ও এক নারী কাউন্সিলরকে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পেছনে লেলিয়ে দেন। চার ঘণ্টা ধরে তাঁরা ছাত্রী ও তার মায়ের ওপর নির্যাতন চালান। এরপর দুজনেরই মাথা ন্যাড়া করে দেন। এ ঘটনায় ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর মা বাদী হয়ে ২৮ জুলাই রাতে তুফান সরকার, তাঁর স্ত্রী আশা সরকার, আশা সরকারের বড় বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া আকতারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে দুটি মামলা করেছেন। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত ৯ জনসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সমাবেশ
এদিকে ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে এক সপ্তাহ পর আজ বগুড়া শহরের সাতমাথায় পূর্বঘোষিত সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। ছাত্রী ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে বগুড়া আওয়ামী বিভক্ত হয়ে পড়লেও সমাবেশে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরাই উপস্থিত ছিলেন। তবে বক্তব্য দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান। সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা তুফান সরকারকে নিয়ে কিছু বলেননি।

মমতাজ উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগ মাদক ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে। কেউ এসব অপকর্ম করলে তার দায় দল নেবে না। তিনি বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেন, ঘটনার পর পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ দলীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। এরপরও বিএনপি ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে। তিনি বিএনপিকে হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘এখনো সময় আছে, সাবধান হয়ে যান।’