বঙ্গবন্ধু হত্যায় বিদেশি শক্তির সংযোগ না থাকার ধারণা অস্বাভাবিক: মার্ক টালি

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আন্তর্জাতিক শক্তির সংযোগ না থাকার ধারণাকে অস্বাভাবিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন ব্রিটিশ সাংবাদিক ও লেখক স্যার মার্ক টালি।

আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) আয়োজিত আলোচনায় যোগ দিয়ে এ কথা বলেন মার্ক টালি। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ভার্চ্যুয়াল এ সভা হয়। সিআরআইয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ‘শকওয়েভস অব অ্যাসাসিনেশন: সাউথ এশিয়া ১৯৭৫’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে বহিঃশক্তির ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মার্ক টালি বিবিসির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সংবাদদাতা ছিলেন। বিবিসি রেডিওতে তাঁর পরিবেশিত খবর ছিল মানুষের মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ জানার প্রধান উৎস।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনে ভূমিকা রাখায় মার্ক টালিকে ২০১২ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ দিয়েছিল বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানে মার্ক টালি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আন্তর্জাতিক শক্তির সংযোগ না থাকার ধারণা অস্বাভাবিক। যদিও হত্যাকাণ্ডের সময় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাপ্রধান কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেছেন।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করে মার্ক টালি বলেন, জন্মলগ্নে যুদ্ধবিপর্যস্ত বাংলাদেশের অভাবনীয় অর্থনৈতিক উন্নতি, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমন্বিত উন্নয়ন সবচেয়ে বড় অর্জন।

মার্ক টালি বলেন, ‘আমি আশা করি, বাংলাদেশ বর্তমান সময়ের মতো ধর্মনিরপেক্ষ থাকবে। আমি একজন ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি এবং আমি চাই বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষই থাকবে।’

ভারতের সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ বিস্তৃতির প্রশংসা করে টালি বলেন, ‘আমি দার্জিলিং বোর্ডিং স্কুলে গিয়েছিলাম। সেখানে যখন শুনলাম, শিলিগুড়ি থেকে ঢাকার রেল সংযোগ তৈরি হবে, তখন আমি বেশ খুশি হয়েছিলাম।’

মার্ক টালি বলেন, দুদেশের মধ্যে বর্তমানে চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রয়েছে। তবে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি হলে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।

অতীতে দুদেশের সম্পর্ক তৈরি হওয়ার স্মৃতিচারণা করে মার্ক টালি বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ভারত বেশ অখুশি হয়েছিল এবং সম্পর্কের বেশ অবনতি ঘটে। কিন্তু তাঁর দল ও মেয়ে ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সাথে সম্পর্কের উন্নতি হয়। সমস্যা আছে এবং সমস্যা থাকবে, মূলত সম্পর্ক খুব ভালো।’

পঁচাত্তর–পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, দুটি ভিন্ন ধরনের ধারা প্রবাহিত ছিল সে সময়। একটি হলো পশ্চিমা ধারার অর্থনীতি, সমাজতন্ত্রবিরোধী ও ভারতবিরোধী। আর অন্যটি যেটাকে আমি বলতে পারি…ইসলামি ধারাও ছিল।

মার্ক টালি বলেন, বাঙালি জাতির নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাতিসংঘে বাংলায় বক্তৃতা দেওয়া ছিল যথাযোগ্য। আপনারা দেখছেন, কীভাবে হিন্দি ও হিন্দি চালুর বিরোধিতা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বড় ইস্যু হিসেবে রয়েছে।

আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতা দখলের প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ থাকার কথা তুলে ধরেন মার্ক টালি। তিনি বলেন, জাতীয় পুনরুত্থান ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির চাবিকাঠিই হচ্ছে ধর্মীয় আধুনিকতা। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে!

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, জাতির পিতার হত্যাকারীদের রক্ষায় ১৯৭৫ সালে যে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল, তার কোনো দৃষ্টান্ত ইতিহাসে নেই। এটা একটি দেশের জন্য বিব্রতকর। এটা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলেছিল এবং পরবর্তী বছরগুলোতে খুনিদের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তায় প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছিল।

খুনিদের দ্রুত বিচার না করে দেশের সাধারণ আইনি ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কয়েকজন ব্যক্তিত্বের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ওয়েবিনারে দেখানো হয়।