বছরে ৬ হাজারের বেশি মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়

দেশে বছরে প্রায় ৮ লাখ ৯০ হাজার মানুষকে সাপে কামড়ায়। এর মধ্যে ৬ হাজারের কিছু বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। গবেষকেরা বলছেন, বর্ষা মৌসুমে সকাল ও সন্ধ্যায় সাপে বেশি কামড়ায়।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত এপ্রিলে প্রকাশিত আমেরিকান জার্নাল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন সাময়িকীতে প্রকাশিত বাংলাদেশে গোখরা সাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিষক্রিয়ার লক্ষণ এবং এসব রোগী ব্যবস্থাপনাবিষয়ক প্রবন্ধে গবেষকেরা এই তথ্য দিয়েছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সাপের কামড়ে আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে তাঁরা গবেষণা করেছেন। গোখরা সাপের কামড়ে আক্রান্ত ৭০ জন রোগীর পরিস্থিতি গবেষকেরা বিশ্লেষণ করেছেন। প্রবন্ধে দাবি করা হয়েছে, গোখরা সাপের বিষক্রিয়া নিয়ে এত বড় গবেষণা আগে কোনো দেশে হয়নি।

প্রবন্ধে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ এলাকায় সাপের কামড়ের ঘটনা বেশি ঘটে। গোখরা সাপের কামড়ে আক্রান্তের ঘটনা সবচেয়ে কম ঘটে শীতকালে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। মে, জুন ও জুলাই—এই তিন মাসে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়। সকাল ও সন্ধ্যায় সাপে বেশি কামড়ায় বলে গবেষকেরা তাঁদের প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন। গবেষণায় নেতৃত্ব দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক এম এ ফায়েজ।

এই গবেষক দলের একজন সদস্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক মো. রিদওয়ানুর রহমান ২০ বছর ধরে সাপ নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বর্ষার সময় সাপ শুকনা জায়গা খোঁজে। সাপ ও মানুষ একই ধরনের শুকনা জায়গায় বসবাস করে। তাই এ সময় সাপের কামড়ে আহত ব্যক্তির সংখ্যা বেশি হয়।

গবেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশে বছরে ৬ হাজারের কিছু বেশি মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়। মূলত গোখরা (কোবরা) ও কেউটে (ক্রাইট) সাপের কামড়ে তাদের মৃত্যু ঘটে। এর মধ্যে কেউটে সাপ বাড়ির আশপাশে বা লাকড়ির মধ্যে থাকে। আর গোখরা সাপ ফসলি জমিতে ও রাস্তাঘাটে থাকে।

রিদওয়ানুর রহমান বলেন, গোখরা ও কেউটে সাপের বিষক্রিয়ায় পার্থক্য আছে। গোখরার কামড়ে পক্ষাঘাতগ্রস্তের মতো সমস্ত শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়, চোখ বন্ধ হয়ে আসে। আর কেউটে সাপের কামড়ে শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়। পাশাপাশি কামড়ের স্থান থেকে ও দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত বের হয়। তবে দুটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে একই ওষুধ ব্যবহার করা হয়।

প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, সাপে কামড়ালে এখনো অনেক মানুষ হাতুড়ে ডাক্তার বা কবিরাজের শরণাপন্ন হয়। রিদওয়ানুর রহমান বলেন, সাধারণ মানুষকে বোঝানো দরকার, সাপের কামড়ে আধুনিক চিকিৎসা আছে। সরকারি হাসপাতালে এর ভালো চিকিৎসা হয়, ওষুধ মজুত থাকে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ বছর বন্যার পূর্বাভাস পেয়ে ঈদের ছুটির আগেই উপজেলা, সদর, জেলা ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাপের কামড়ের চিকিৎসার ওষুধ মজুত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

রিদওয়ানুর রহমান বলেন, সাপে কামড়ানো রোগীকে বেশি নড়াচড়া করতে দেওয়া যাবে না। দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। হাসপাতালে নেওয়ার পথে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা রাখতে হবে। আর হাসপাতালে ভর্তি রোগীকে ২৪ ঘণ্টার আগে ছুটি দেওয়া যাবে না।