
‘চার বছরের বেশি সময় ধরে জেল খাটছি। যখন গ্রেপ্তার হইছিলাম, আমার মা প্রায় পাগল হয়ে গেল, বউ ফালায় চইলা গেছে। তারপরেও ধৈর্যহারা হইনি। কারাগারের মধ্যেই বিউটি পারলারের প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন মোহাম্মদপুরে একটি দোকানে কাজ করছি, ভালো আছি।’
কথাগুলো বলছিলেন বারেক মিয়া (ছদ্ম নাম)। তিনি এখন জামিনে আছেন। তবে জামিন পাওয়ার আগে চার বছরের বেশি কারাগারে থাকতে হয়েছে তাঁকে। বন্দী থাকার সময় বিউটি পারলারের কাজ শিখেছেন। বললেন, ‘এখনো আদালতে হাজিরা দিই। তবে এখন আর হতাশ হই না। কাজ করি, ইনকাম করি। মাকে নিয়া ভালোই আছি।’
আরেকজনের নাম মিঠু। তাঁর কারাগারে কেটেছে ছয় বছর। চাকরিটা গেছে। তবে কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষের সহায়তায় আরডিআরএস নামের একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে মাছ চাষের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এখন নিজ বাড়িতেই মাছের চাষ করছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বারেক ও মিঠুর মতো ২০ জনকে কারা অধিদপ্তর তাদের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে হাজির করেছিল। এঁরা বন্দীজীবনে, জামিনে মুক্তি পেয়ে অথবা কারাজীবন শেষে প্রশিক্ষণ পেয়ে নানা ধরনের কাজ শিখে নতুনভাবে জীবন শুরু করেছেন। সেই গল্পগুলোই তাঁরা শোনালেন সাংবাদিকদের।
কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন জানালেন, একবার যারা অপরাধ করেছে, তারা যেন আর অপরাধ না করে, সেই উদ্দেশ্য সফল করার জন্য এই পুনর্বাসন কর্মসূচি। কারাবন্দীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো, দক্ষ মানুষ করে তোলা এর উদ্দেশ্য।
সাংবাদিকদের জানানো হয়, দেশের কারাগারগুলোর বন্দী ধারণক্ষমতা ৩৪ হাজার ৬৮১ জনের। অথচ বন্দীর সংখ্যা ৭১ হাজার ২৪১ জন। অর্থাৎ ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। কারাবন্দীদের ৭০ শতাংশ বিচারাধীন মামলার আসামি। এর মধ্যে ৫১৪ জন বিদেশি বন্দী রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে স্বামীকে নিয়ে উপস্থিত ছিলেন শেফালি নামের এক নারী। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করেছেন। শোনালেন তাঁর বন্দী ও পুনর্বাসিত জীবনের গল্প। শেফালি বলেন, ‘কারাগারে থাকার সময় প্রশিক্ষণ নিয়ে সেলাইয়ের কাজ করতাম। এখন তা-ই করি। ভালো আছি।’
সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন জানান, ১৫ নভেম্বরের পর যেকোনো দিন কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরিত হবে। অবকাঠামো নির্মাণ একেবারে শেষ পর্যায়ে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কারাগারে সব সময় আমরা অ্যালার্ট থাকি। এখানে রেড অ্যালার্টের কিছু নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও এ বিষয়ে আমাদের কিছু বলা হয়নি।’
কারা মহাপরিদর্শক বলেন, টেনিস বলের মধ্যে ইয়াবা, গাঁজা ঢুকিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। তল্লাশি চালিয়ে পাওয়া কয়েকটি বলের নমুনা তিনি সাংবাদিকদের দেখান। তিনি বলেন, ‘সদিচ্ছা না থাকলে এগুলো উদ্ধার করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হতো না।’ অভিযোগ আছে, কারাবন্দীরা মুঠোফোন ব্যবহার করছেন আজকাল। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ইফতেখার উদ্দীন বলেন, কারাগার থেকে আদালতে যাওয়ার পথে আসামিরা এই সুবিধাটা নেন। আদালতে থাকার সময় অপরাধীরা বাইরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নেন।