বন্ধু তোমার লাল টুকটুকে স্বপ্ন বেচো না...
মেয়েটি স্বপ্ন দেখত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। এইচএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। কিন্তু তারপরও মেয়েটির স্বপ্ন এখন চোখের জলে অনেকটাই ফিকে।
মেয়েটির নাম হাজেরা খাতুন। সে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের মোস্তফাপুর বারবিঘা গ্রামের আবদুল হালিমের বড় মেয়ে। সে এসএসসিতে জিপিএ ৪.৮১ পেয়েছিল। তার ছোট বোনেরাও মেধাবী। মা গৃহিণী। ৪৫ শতক আবাদি জমি থাকলেও দিনমজুরি করেই মেয়েটির বাবাকে সংসার চালাতে হয়। সম্প্রতি হাজেরাকে নিয়ে প্রথম আলো প্রতিনিধির কাছে এসেছিলেন বাবা আবদুল হালিম। বাবা-মেয়ে দুজনেই ছিলেন বিমর্ষ।
কথা শুরু করতে গিয়ে অবরুদ্ধ আবেগে গলা ধরে আসে হাজেরার। কান্নাজড়িত গলায় তিনি বলেন, ‘এই ছইলটা নিয়া বিপদোদ পড়ছু। মুই গরিব মানুষ। কয়দিন আগোত বিয়াও দিছু। ছইলটা ফির (আবার) পইড়বার (পড়াশোনা) চাওচে। অর শ্বশুরবাড়ির মানুষ তাক মানোচে না।’
এ সময় হাজেরার দুচোখ গড়িয়ে ঝরছিল পানি। নিজেকে কিছুটা সামলে মেয়েটি বলে, ‘অনেক কষ্টে খেয়ে না খেয়ে পড়াশোনা করেছি। ইচ্ছে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হব...’
এরপর ৩ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর প্রতিনিধি যান হাজেরার স্বামী ও শ্বশুরের কাছে। মেয়েটিকে পড়াশোনার সুযোগ দিতে অনুরোধ জানানো হয় তাঁদের। কিন্তু শ্বশুর বলেন, ‘আমার একটাই বেটা। বউ পড়াশোনা করলে সংসার দেখপে কাঁয়?’
হাজেরার স্বামী পিয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘মোর বাপ-মাও যেইটা কইবে সেইটা হইবে।’ এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালে গত ৭ মে একই ইউনিয়নের বোয়ালীপাড়া গ্রামের পিয়ারুলের সঙ্গে হাজেরার বিয়ে হয়।
হাজেরার মা দুলালী বেগম বলেন, ‘গরিব হওয়ায় পড়বার না পারিয়া বেটির বিয়াও দিছি। এ্যালা ছইলটাক ওঁরা (শ্বশুরবাড়ির লোকজন) পড়াবার চাওচে না। এইটা শুনিয়া বেটিটা (হাজেরা) স্বামীর বাড়িতও যাওচে না। কওচে মোক তোরা মারি ফেলান।’
বদরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বিমলেন্দু সরকার বলেন, ‘আমার কলেজ থেকে এবার বিজ্ঞান ও মানবিক শাখা মিলে এইচএসসি পাস করেছে ২১৭ জন। এর মধ্যে হাজেরাই একমাত্র জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী।’