বরিশালে করোনা পজিটিভ ও উপসর্গ নিয়ে চারজনের মৃত্যু

বরিশাল বিভাগে করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এ বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় দুজন করোনা পজিটিভ ও দুজন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। চারজনই মারা যান বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে। এ ছাড়া বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আগের ২৪ ঘণ্টায় তা ছিল ৫৬ জন।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত এই হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে মারা যান তিনজন। অপর একজন মারা যান রোববার বেলা তিনটার দিকে।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বরিশাল বিভাগে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর গত মে মাসের শেষ দিকে সংক্রমণ কিছুটা কমে এলেও চার দিন ধরে তা আবার বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে বরিশাল ও পিরোজপুর—এই দুই জেলায় চার দিন ধরে শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে।

আজ রোববার পাওয়া প্রতিবেদনে বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় ৩৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৬৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে দুজন মারা গেছেন। এ ছাড়া এই সময়ে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন দুজন।

জেলাভিত্তিক হিসাবে ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে ১২৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে সর্বোচ্চ ১৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। পিরোজপুরে ৮৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ঝালকাঠিতে ৪০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া ভোলায় ৫ জন, বরগুনায় ১ জন ও পটুয়াখালীতে ৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে বিভাগে মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৬ হাজার ২৮০ জনের। আর করোনা পজিটিভ হয়ে মারা গেছেন ২৯৫ জন। তবে করোনার উপসর্গ নিয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে মারা গেছেন ৪৯৪ জন।

পিরোজপুরে এরই মধ্যে ভারতীয় ধরন হিসেবে পরিচিত করোনার ডেলটা ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। পিরোজপুরের সীমান্ত জেলা বাগেরহাটেও এই ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার পাশাপাশি সেখানেও সংক্রমণ অনেক বেড়েছে। ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে শনাক্তের হার পিরোজপুরে সবচেয়ে বেশি। শনাক্তের হার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরিশাল জেলায়। এ ছাড়া গোটা দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের বাস চলাচল করায় প্রতিদিন এসব এলাকা থেকে হাজার হাজার লোক যাতায়াত করছে। পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলা হচ্ছে বরিশাল বিভাগের সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ট্রানজিট পয়েন্ট। এ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিভাগ।

১৫ জুন বরিশাল বিভাগে ৩৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়। ১৬ জুন ৩৯০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়। ১৭ জুন ৩৪০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এদিন সর্বোচ্চ ১৭ জন শনাক্ত হয় পিরোজপুরে। ১৯ জুন ২০৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণ আগের দিনের চেয়ে বেড়ে হয় ৫৬ জন।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘পিরোজপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে আমরা এরই মধ্যে সতর্ক করেছি। কারণ, পিরোজপুর ও বরিশালে চার দিন ধরে সংক্রমণ বাড়ছে। একই সঙ্গে পিরোজপুর এবং ওই জেলার সীমান্তবর্তী বাগেরহাটে ডেলটা ধরন শনাক্ত হওয়ায় যথেষ্ট উদ্বেগে ফেলেছে আমাদের। দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের গণপরিবহন চলাচল করায় সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে। এ ক্ষেত্রে এখন স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের কোনো বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানলে পরিস্থিতি অনুকূলে রাখা সম্ভব।’