ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের কাছাকাছি একটি বাংকারে খেজুর, কমলা, বিস্কুট ও সেদ্ধ গম খেয়ে দিন পার করছেন এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের নাবিকেরা। বাংকার থেকে কয়েকজন নাবিক ও বাংলাদেশে থাকা তাঁদের কয়েকজন স্বজন আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে এমন তথ্য দিয়েছেন।
ইউক্রেনে রাতের তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির নিচে নেমে যায়। নাবিকেরা জাহাজ থেকে নামার সময় গরম কাপড়চোপড় নিয়ে এসেছেন। তাতে শীতে খুব সমস্যা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন একজন নাবিক।
গত বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ২০ মিনিটে অলভিয়া বন্দর জেটির অদূরে নোঙর করে রাখা এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজ হামলার শিকার হয়। জাহাজে গোলার আঘাতে তৃতীয় প্রকৌশলী হাদিসুর রহমান নিহত হন। হামলার ২৪ ঘণ্টার মাথায় নাবিকদের একটি টাগবোটে করে জাহাজ থেকে সরিয়ে একটি বাংকারে নেওয়া হয়। এরপর টানা ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বাংকারে অবস্থান করছেন নাবিকেরা।
বাংকারে থাকা এক নাবিকের স্বজন অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী আবু সুফিয়ান প্রথম আলোকে জানান, বাংকারে তাঁরা সুস্থ আছেন। নিরাপদে আছেন। শুকনা খাবারের পাশাপাশি গম সেদ্ধ করেও খাচ্ছেন নাবিকেরা। ঝুঁকির কারণে তাঁদের অবস্থানগত বিষয় এখন প্রকাশ না করার জন্য নাবিকেরা অনুরোধ জানিয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংকারে থাকা এক নাবিকের স্বজন আজিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইউক্রেন সীমান্ত যাতে নিরাপদে পার হতে পারেন, সে জন্য নাবিকেরা দোয়া চেয়েছেন। এখন পর্যন্ত সবকিছু ঠাক আছে। জাহাজ থেকে নামার সময় শুকনো খাবার নিয়ে এসেছেন তাঁরা।’
জাহাজে থাকা প্রধান প্রকৌশলী মো. ওমর ফারুকের মা মোছাম্মৎ খায়রুন্নেছা শুক্রবার সকালে মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ভয়েস মেসেজের মাধ্যমে ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংকারে তারা ভালো আছে। দোয়া করার জন্য বলেছে।’
এর আগে যুদ্ধাবস্থার মধ্যেও গত ২১ ফেব্রুয়ারি তুরস্কের ইরাগলি বন্দর থেকে ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের দিকে রওনা হয় জাহাজটি। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের অনুমতি নিয়ে জাহাজ ভাড়া নেওয়া প্রতিষ্ঠান ডেল্টা করপোরেশন পণ্য পরিবহনের জন্য সেখানে পাঠায় জাহাজটি। অলভিয়া বন্দরে সিরামিকের কাঁচামাল ক্লে বা কাদামাটি বোঝাই করে ইতালির একটি বন্দরে নেওয়ার কথা ছিল জাহাজটির। জাহাজটি ২২ ফেব্রুয়ারি অলভিয়া বন্দরের বহির্নোঙর হয়ে পরদিন রাতে জেটির অদূরে নোঙর করে। এক সপ্তাহের মাথায় হামলার শিকার হয় জাহাজটি।
বাংকারে থাকা নাবিকেরা কখন ইউক্রেন সীমান্ত পার হবে তা এখনো ঠিক হয়নি। পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ২৮ নাবিককে রোমানিয়ায় নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এক নাবিকের মরদেহও নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
এর আগে ইউক্রেনের পাশের দেশ পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে সবাইকে নেওয়ার কথা ছিল। নাবিকদের অবস্থান থেকে দূরত্ব বেশি হওয়ায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।