বাংলাদেশের পদক্ষেপে সন্তুষ্ট ইইউর চার দেশ

বাংলাদেশ এ নিয়ে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ না করায় ভিসায় কড়াকড়ির সুপারিশ করেছিল ইউরোপীয় কমিশন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)
ছবি: রয়টার্স

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যদেশগুলোতে অবৈধ হয়ে পড়া প্রবাসীদের ফেরানোসহ তাঁদের পরিচয় যাচাইয়ের বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করেনি। এতে অসন্তুষ্ট হয়ে ইউরোপীয় কমিশন বাংলাদেশিদের ভিসা দিতে কড়াকড়ি আরোপের সুপারিশ করেছিল। তবে গত কয়েক মাসে বাংলাদেশ সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের সম্পর্কে অভিযোগকারী দেশ জার্মানি, গ্রিস, মাল্টা ও অস্ট্রিয়া এবার তাদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে।

ঢাকায় এবং ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে কর্মরত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ইউরোপে অবৈধ হয়ে পড়া লোকজনকে ফেরাতে ইইউর সঙ্গে বাংলাদেশ ২০১৭ সালে মানসম্মত কার্যপ্রণালি বিধি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর বা এসওপি) সই করে। এসওপি বাস্তবায়নের বিষয়ে গত কয়েক মাসে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসায় কড়াকড়ির বিষয়ে ইউরোপীয় কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের আশঙ্কা কেটে যাবে।

এর আগে ইউরোপীয় কমিশন গত ১৫ জুলাই সাময়িকভাবে বাংলাদেশিদের ভিসায় কড়াকড়ির সুপারিশ করে। সুপারিশের মধ্যে পর্যটকসহ বেশ কিছু শ্রেণিতে শেনজেন ভিসার (ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর অভিন্ন ভিসা) আবেদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কিছু নথিপত্র জমা নেওয়া, সর্বোচ্চ ১৫ দিনের মধ্যে ভিসা পাওয়ার সুবিধা বাতিল এবং মাল্টিপল (একাধিকবার যাতায়াতের) ভিসা না দেওয়ার কথা বলা হয়।

পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত তিন-চার মাসে আমরা এ নিয়ে কাজ করছি এবং আমরা যে আন্তরিক, তা তাদের বলেছি। আমার মনে হয়, তারা বিষয়টি বুঝতে পেরেছে।’

এখন পর্যন্ত ১৯৫ জনের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিশ্চিত। এক মাসে জার্মানি ও মাল্টা থেকে ফিরবেন ৮০ জন।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে এই প্রতিবেদককে জানান, ইউরোপে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের বিষয়ে প্রায় দেড় হাজার মানুষের একটি তালিকা সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে ১৯৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আগামী এক মাসে জার্মানি ও মাল্টা থেকে আলাদা ফ্লাইটে প্রায় ৮০ জন বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনা হবে। সেই প্রস্তুতি চলছে।

মূলত ওই তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে ৮০০ জন ছিলেন জার্মানিতে। এঁদের মধ্যে গত সপ্তাহ পর্যন্ত ৬০০ জনের পরিচয় যাচাই–বাছাইয়ের পর কী পাওয়া গেল, তা জার্মানিকে জানানো হয়েছে। এমনকি বাকি ২০০ জনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শেষবারের মতো প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে সাক্ষাৎকার নেওয়ার প্রস্তাবও বাংলাদেশ দিয়েছে।

বার্লিনে জার্মানির পররাষ্ট্রসচিব মিগুয়েল বার্গারের সঙ্গে গত ২৭ আগষ্ট দ্বিপক্ষীয় কৌশলগত সংলাপে অংশ নেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। আলোচনায় জার্মানি থেকে অবৈধ ব্যক্তিদের ফেরানোর বিষয়টিও এসেছে।

ঢাকায় ইইউ দূতাবাস থেকে সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়, জার্মানি, গ্রিস, মাল্টা ও অস্ট্রিয়া এসওপি বাস্তবায়নের বিষয়ে বাংলাদেশের পদক্ষেপ নিয়ে ব্রাসেলসে তাদের অভিমত পাঠিয়েছে। এতে বাংলাদেশের পদক্ষেপে সন্তুষ্টির কথা বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, ইইউর দেশগুলো বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলোকে ইতিবাচক ও উৎসাহব্যঞ্জক বলে মনে করছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ এ নিয়ে ভবিষ্যতে ধারাবাহিকভাবে কতটা অগ্রগতি করছে, সেটিও তারা বিবেচনায় নেবে।

যাচাই মানেই ফেরানো নয়

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সময়মতো অবৈধ হয়ে পড়া লোকজনকে ফেরাতে পদক্ষেপ না নেওয়ায় অসন্তুষ্ট হয়ে ইউরোপের দেশগুলো যে চাপ দিচ্ছে, তার মধ্যে জার্মানির ভূমিকাটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য দেশটি চাপ দিলেই যে সঙ্গে সঙ্গেই কাউকে তাঁর নিজের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয় বিষয়টি তেমন নয়। তারা অবৈধ বা অনিয়মিত হয়ে পড়া লোকজনের সবাইকে ‘ডিটেনশন সেন্টারেও’ রাখে না।

বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, ইউরোপে অবৈধ হয়ে পড়া ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত হলে অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া শেষে তাঁকে নিজের দেশে ফেরত পাঠানো হয়। আবার অবৈধ হয়ে পড়া লোকজনের পরিচয় জানার পরও নিজেদের অর্থনীতির কথা বিবেচনায় নিয়ে তুলনামূলক সস্তা শ্রমের বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে তাঁদের রেখে দেওয়ার ঘটনাও নিয়মিত ঘটছে। এই তালিকায় ইতালি ও গ্রিস অন্যতম।