বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
গত ২৯ এপ্রিল ২০১৭, প্রথম আলোর আয়োজনে ‘বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।

আলোচনায় সুপারিশ
* বৈদেশিক মুদ্রার অনুমানভিত্তিক বিনিময় হার নির্ধারণ না করে এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোকে সবার মধে্য আলোচনা করে এ হার ঠিক করতে হবে
* সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া থেকে রেমিট্যান্স কম এসেছে। এর কারণ অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নিতে হবে
* বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় ইনস্টিটিউট করা জরুরি
* সব পক্ষের উপকারের জন্য আমদানির ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে বিনিময় হার ঠিক করতে হবে
* অভ্যন্তরীণ আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভর করে মুদ্রার মান ঠিক করতে হবে
* হুন্ডি ঠেকাতে বিভিন্ন ব্যাংকের এক্সচেঞ্জ হাউস আরও বৃদ্ধি করতে হবে
আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম: সম্প্রতি দেশে মার্কিন ডলারের কিছুটা অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হয়। এটা শুধু রমজান মাসের জন্য আমদানি বাড়ার কারণে নয়। মনে হয় এর পেছনে অন্য কিছু কারণ আছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেডা) আলাদাভাবে জরুরি বৈঠক করেছে।
আজকের আলোচনায় এসব বিষয় আসবে। এখন আলোচনা করবেন মোহাম্মদ নূরুল আমীন।

মোহাম্মদ নূরুল আমীন
বাফেডা বিভিন্ন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের দ্বারা পরিচালিত একটি সংগঠন। দেশের ৫৪টি ব্যাংক এর সদস্য।
১৯৯৩ সালে এ সংগঠন কাজ শুরু করে। আমরা নির্দিষ্ট একটি পদ্ধতি অনুসরণ করে সদস্য ব্যাংকগুলো থেকে প্রাপ্ত প্রতিদিনের বৈদেশিক মুদ্রাবিনিময় হারের গড় নির্ধারণ করে থাকি। প্রতিদিন বিকেলে এই হার সদস্য ব্যাংকগুলোয় দেওয়া হয়।
আমাদের নয় সদস্যের একটি নির্বাহী ও টেকনিক্যাল কমিটি আছে। বৈদেশিক মুদ্রাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যক্রম সদস্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে করে থাকি।
ডলারের দাম অনেক দিন একই জায়গায় ছিল। হঠাৎ করে বেশি বাড়ায় একধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়। এক দিনে তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে যেতে পারে না, আবার দুই টাকা কমে যেতেও পারে না। এ জন্য কিছু ব্যাংক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাই নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভ রেখে স্থানীয়ভাবে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসার নীতিমালা করতে হবে।
আমরা বিদেশি ঋণ গ্রহণ করছি। কিন্তু এর বিনিয়ম হার ঠিক করা হচ্ছে না। এসব ঋণের বিনিময় হার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তা না হলে ঋণগ্রহীতারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো অনুমানভিত্তিক বিনিময় হার নিয়ে লেনদেন করে। তবে এ ক্ষেত্রে আলোচনা করে বিনিময় হার ঠিক করা প্রয়োজন।
বৈদেশিক মুদ্রাবিনিময় হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাফেডা সক্রিয় ভূমিকা রাখাবে। আজকের বিজ্ঞ আলোচকদের কাছ থেকেও মূল্যবান সুপারিশ পাওয়া বলে আশা করি।

মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া
দুই বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা বজায় ছিল। এ সময়ে বড় ধরনের কোনো উত্থান–পতন ছিল না। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও হ্রাস সহনীয় পর্যায়ে ছিল, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাফেডা যথাযথ ভূমিকা রেখেছে।
এর পাশাপাশি আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার প্রাপ্তি ও পরিশোধে আনুকূল্য থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ এখন ৩২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।
সাম্প্রতিক সময়ে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার বিশ্লেষণে লক্ষ করা যাচ্ছে যে চলতি অর্থবছরের গত ৮ মাসে বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানিতেও মাঝারি ধরনের প্রবৃদ্ধি আছে, যার পরিমাণ শূন্য দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার।
আমাদের সবচেয়ে অসুবিধার জায়গা তৈরি হয়েছে বৈদেশিক রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায়। ৯ মাসে গত বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স কম এসেছে; বিশেষ করে সৌদি আরব থেকে গত বছরের তুলনায় এ বছর ৩৫ শতাংশ রেমিট্যান্স কম এসেছে। এর প্রভাব পড়েছে জাতীয় রেমিট্যান্সেও। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া থেকেও রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ কম।
গত আট মাসে আমদানি–রপ্তানি ও রেমিট্যান্স খাতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহে বিগত বছরের তুলনায় প্রায় পৌনে চার বিলিয়ন ডলার কম এসেছে।
আমদানি-রপ্তানি অথবা মূল্য পরিশোধ বা গ্রহণের মধ্যে সাময়িক ছোটখাটো অসংগতি দেখা দিতে পারে। এ রকম পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোকে সচেতনতার সঙ্গে যৌক্তিক আচরণ করতে হবে। তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডলারের মূল্য স্থিতিশীল থাকবে।
প্রতিটি ব্যাংককে বৈদেশিক মুদ্রার ইনফ্লো এবং আন্তব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের গভীরতার ওপর ভিত্তি করে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন করতে হবে। অন্যথায় ব্যাংকগুলোকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

আলমগীর মোর্শেদ
প্রায় ২২ বছর ধরে মুদ্রাবাজারসহ আর্থিক খাতে উন্নয়ন ও বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন দেখেছি। পরিবর্তনের ধারা সব সময় একইভাবে থাকে না। সময়ের সঙ্গে সবকিছুর মধ্যেই কমবেশি পরিবর্তন হয়।
ব্যাংকিং খাতে আমরা যে রেমিট্যান্স ব্যবহার করি, বিভিন্ন সময় এর বিভিন্ন রকম প্রবৃদ্ধি দেখেছি। স্বাভাবিকভাবে প্রবৃদ্ধির সঙ্গে এর কিছু জটিলতা চলে আসে। তাই এখন প্রত্যেককেই বাজার উন্নয়নের বিষয়গুলোকে বিশেষভাবে দেখতে হবে। ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ বাজারব্যবস্থা সঠিকভাবে কার্যকর থাকা প্রয়োজন।
ব্যাংকে ডলার জমা হওয়া ও চলে যাওয়ার গতিপ্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে ডলার জমা হওয়া থেকে খরচ বেশি। এ জন্য ব্যবসায়ের গতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্য দেশে এটা হয় না।
আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে তারল্য চ্যালেঞ্জ আছে। বাংলাদেশে টাকার মান ঠিক আছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সংশ্লিষ্টরা সঠিক ভূমিকা পালন করছে। বাজার কখনো কখনো অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারে। এখন কীভাবে এর ব্যবস্থাপনা করা যায়, সেটা ভাবতে হবে।
দেশে সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংক রয়েছে। এ তিন ব্যাংকে তিন ধরনের মুদ্রা বিনিময় হার। এটা কোনো সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনার চিত্র হতে পারে না।
আমাদের মতো দেশে ব্রোকারেজ হাউসগুলো ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ আমরা জানি, কোন ব্যাংক ডলার বিক্রি করবে আর কোন ব্যাংক ক্রয় করবে। ব্যাংকগুলো যখন ডলার বিক্রি করে না, তখন বোঝা যায় বাজারে ডলারের ঘাটতি আছে। তখন বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের মধ্যে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যায়। ব্রোকারেরা দুই দিক থেকে মূল্যতালিকা নিয়ে সমন্বয় করতে পারে। আমাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্রোকারেজ হাউস এসব নিয়ে ভাবতে পারে। বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য একটা পলিসি ইনস্টিটিউট থাকা প্রয়োজন।

তৌফিক আহমেদ চৌধুরী
আমাদের কাজ হলো বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। ১৯৯৩ সালে যখন আর্থিক বাজার সংস্কার করা হলো, তখন থেকে প্রশিক্ষণের কার্যক্রম চলছে।
কিন্তু বাস্তবে বাজারব্যবস্থার তেমন উন্নয়ন হয়নি। যাঁরা ট্রেজারিতে কাজ করবেন, তাঁদের মাক্রোইকোনমি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে যাঁরা কাজ করেন, ম্যাক্রোইকোনমিসহ অনেক বিষয় সম্পর্কে তাঁদের প্রায় ধারণা নেই বললেই চলে।
সম্পদ ও দায়ের দিক থেকে বিবেচনা করলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার মোটেই বড় না। এটা মোট সম্পদ ও দায়ের ৪ শতাংশ। এটা ডলার নিয়ন্ত্রিত বাজার। অন্য বিষয়গুলো এখানে তেমন প্রভাব ফেলে না।
আমদানির ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে বিনিময় হার ঠিক করে নেওয়া উচিত। তাহলে সব পক্ষ বেশি উপকৃত হতে পারে। তবে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের ক্ষেত্রে বাফেডার আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার অভ্যন্তরীণ লেনদেনের পরিমাণ গ্রাহকদের লেনদেনের থেকেও কম। বিশ্বের কোনো দেশে এমনটা হয় না। বৈদেশিক মুদ্রাবাজার শক্তিশালী করতে হলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক উদ্যোগ নিতে হবে। হুন্ডির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক খুবই সতর্ক। এ ক্ষেত্রে তারা বিদেশে জনবল পাঠিয়ে হুন্ডি প্রতিরোধের উদ্যোগ নিয়েছে।
কিছু মানুষ আছে যারা বিদেশে কর্মরত মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। আবার এ দেশে তাদের প্রতিনিধিরা ঘরে ঘরে সে অর্থ পৌঁছে দেয়। সিঙ্গাপুরে লাইন দিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান টাকা সংগ্রহ করছে।
যারা বিদেশে বাড়ি করছে, তাদের কাছে অনেক বেশি মূল্যে এসব মুদ্রা বিক্রি করা হচ্ছে। সরকারকে এটা শক্ত হাতে বন্ধ করতে হবে। তা না হলে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়কে ঊর্ধ্বমুখী করা সম্ভব হবে না। যেভাবে অফশোর ব্যাংকিং হওয়া উচিত, সেভাবে হচ্ছে কি না, বাংলাদেশ ব্যাংককে সেটা ক্ষতিয়ে দেখতে হবে।
বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্রোকারদের ভূমিকা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এ রকম বিভিন্ন বিষয়ে উদ্যোগ নিলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার সঠিকভাবে কাজ করবে।

সাদিক আহমেদ
২০৩০ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ হতে হলে আমাদের আমদানি, রপ্তানি, ব্যবসা-বাণিজ্য—সবকিছু সম্প্রসারণ করতে হবে। এ জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা আছে। এগুলোর সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার সম্পৃক্ত। ২০১২ সাল পর্যন্ত আমাদের রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ভালো ছিল। তারপর কিছুটা কমেছে।
উৎপাদনের ক্ষেত্রে জিডিপি কমপক্ষে শতকরা ১২ থেকে ১৪ ভাগ বাড়াতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ বিলিয়ন ডলার। এটা করতে হলে অবশ্যই আমাদের রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। কিন্তু টাকার মান ডলারের বিপরীতে কমছে। এতে রপ্তানি খাতের সক্ষমতা কমে যায়।
চার বছর ধরে দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি স্থির হয়ে আছে। উৎপাদনশীল বেশির ভাগ খাতের প্রবৃদ্ধি জিডিপির প্রবৃদ্ধির চেয়ে কম। ডলারের দাম দু-এক টাকা ওঠানামা হতেই পারে। তবে নজর দিতে হবে মৌলিক বিষয়ের ওপর।
আমাদের প্রবাসীদের পাঠানো আয় কমে যাওয়ার একটা কারণ হচ্ছে বিনিময় হার। বিদেশ থেকে যঁারা টাকা পাঠান, তঁারা বৈধভাবে পাঠালে যে হার পান, অবৈধভাবে তার থেকে বেশি পান—এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সব মানুষের প্রবণতাই হলো বেশি লাভ পাওয়া। তা ছাড়া প্রবাসীদের অধিকার আছে ভালো বিনিময় হার পাওয়া। অনেক বিষয় আছে, যেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

মাহমুদ হাসান খান
দেশীয় অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির সঙ্গে রপ্তানি তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। তাল মিলিয়ে চলতে পারছে শুধু আরএমজি। কিন্তু ভবিষ্যতে পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা অব্যাহত না–ও থাকতে পারে। অনেকে মনে করেন, আমাদের রপ্তানি কমে গেছে। আসলে রপ্তানির পরিমাণ কমেনি; বরং রপ্তানিমূল্য কমেছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো আমাদের বিনিময় হার কৃত্রিমভাবে ধরে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলোর মুদ্রার মান কমেছে। বাংলাদেশের মুদ্রার মান এত দিন কমেনি। এতে রপ্তানি খাতের সক্ষমতা কমেছে। এ ছাড়া নতুনভাবে বিনিয়োগ হচ্ছে না। গত তিন বছরে আমরা যে পরিমাণ বিনিয়োগ করেছি তার বেশির ভাগ উৎপাদনমুখী না হয়ে আনুষঙ্গিক কাজে ব্যয় করা হয়েছে।
উৎপাদন বাড়ানোর জন্য যা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হলো গ্যাস। পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় উৎপাদন কমে যাচ্ছে। গত এক মাসে বৈদেশিক মুদ্রার অস্বাভাবিক ওঠানামায় অনেক আমদানিকারক, রপ্তানিকারক ও বিনিয়োগকারী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে অনেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি।
এ ধরনের অনিশ্চয়তা যাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এ জন্য বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল রাখা উচিত।
ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের ক্রেতারা এখন ইউরো ও পাউন্ডে ঋণপত্র খুলতে চান। এ ক্ষেত্রে আমরা শঙ্কিত হই। কারণ গত এক-দেড় মাসের ঘটনা ছাড়া ডলারের দর ব্যাপারে আমাদের ব্যবসায়ীদের একটা ভালো ধারণা আছে যে এটা রাতারাতি পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম।
ইউরোর ক্ষেত্রে কেউ কোনো নির্দিষ্ট ধারণা করতে পারে না। ইউরো বা পাউন্ডের দর অস্বাভাবিক। এ দুটি মুদ্রার মধ্যে কেনাবেচার দরের পার্থক্য পাঁচ-সাত টাকা।
আমরা যাদের সঙ্গে ব্যবসা করি, তারাও এ ব্যাপারে ভালো ধারণা দিতে পারে না। যদি ডলারের মতো ইউরো বা পাউন্ডের বাজার স্থিতিশীল রাখা যায়, তাহলে সবার জন্য ভালো হবে। এ বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।
অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমরা যে মেশিনারিজ আমদানি করি, এর বিনিময় হার সহনীয় মাত্রায় আছে। অনেকে এটাকে নেতিবাচক ভাবেন।

মোস্তাফিজুর রহমান
আমরা যদি রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ না করতে পারি, দক্ষ মানবশক্তি পাঠাতে না পারি, তাহলে আমাদের রেমিট্যান্স কমে যাবে। এ বিষয়গুলো বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ সংশ্লিষ্ট।
জিডিপির হারকে মোট রপ্তানির হার হিসেবে দেখলে অনেক সময় এটা অর্থনীতিতে এর প্রভাব সঠিকভাবে বোঝা যায় না। এ ক্ষেত্রে আমাদের নিট রপ্তানি দেখা প্রয়োজন। তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্পে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বাড়ার কারণে নিট রপ্তানি বাড়ছে।
তৈরি পোশাকশিল্পে বৈচিত্র্যকরণের সম্ভাবনা রয়েছে। চামড়া ও জুতাশিল্পে বৈচিত্র্যকরণের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার চাইলেই এটা করতে পারে।
আমাদের প্রতিযোগী রাষ্ট্র যেমন ভারত, চীন বা ভিয়েতনামের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে দেখা যাবে টাকার মান বেড়েছে। আবার প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে এটা ভালো নয়। অভ্যন্তরীণ আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভর করে মুদ্রার মান ঠিক করতে হবে।
বাংলাদেশে গত কয়েক দিনে ডলারের দামে যে অস্থিরতা, তা সবার জন্য ক্ষতিকর। মধ্যম আয়ের বা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হতে গেলে অবশ্যই আমাদের অর্থনৈতিক বাজারে এর প্রতিফলন থাকতে হবে।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে ভারতীয়দের কত টাকা আছে, সে বিষয়ে ভারত সরকার তথ্য চাইলে পরের বছর সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের টাকা রাখা কমেছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তথ্য চাওয়ার কথা বললেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে সেখানে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা বেড়েছে।
গত নয় মাসে রেমিট্যান্সে ১৭ শতাংশ ঘাটতি হয়েছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন কারণে আন্তর্জাতিকভাবে দাবি এসেছে, রেমিট্যান্স পাঠাতে যেন অতিরিক্ত মাসুল না নেওয়া হয়।
অতিরিক্ত চার্জ ধরার কারণে ছোট অঙ্কের রেমিট্যান্সগুলো হুন্ডি বা অন্য মাধ্যমে চলে যাচ্ছে। আমাদের ৩২ বিলিয়নের বেশি বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় রয়েছে, এর সঠিক ব্যবহার করতে হবে।

মো. আবদুস সালাম
আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আসে তিনটি পদ্ধতিতে—বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগ, বৈদেশিক রেমিট্যান্স ও রপ্তানি। এ ছাড়া দেশজ বিকল্প শিল্পব্যবস্থা আমাদের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে।
বিংশ শতাব্দীর আগে আমরা কখনো চিন্তা করিনি টিস্যু পেপার, খনিজ পানি বাজারে চলবে। আমাদের জীবনযাত্রার রীতি পরিবর্তন হচ্ছে। সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে চাহিদার ধরন। চাহিদা থেকে বিদেশের অনেক জিনিস এখন আমরা দেশেই তৈরি করছি। এসব পণ্য দেশের বাজারে বেশ সুনামের সঙ্গে চলছে। দেশীয় িশল্প বড় হচ্ছে। মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। দেশের অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বগুড়ায় কুটিরশিল্পে তৈরি হচ্ছে ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ। এগুলো জাপানে তৈরি যন্ত্রাংশের চেয়েও মজবুত। যন্ত্রাংশের গায়ে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা থাকে। দাম জাপানি যন্ত্রাংশের চেয়ে বেশি। এ থেকে বোঝা যায় আমাদের উন্নতি হচ্ছে। সরকার দেশজ শিল্পব্যবস্থা উন্নয়নে কাজ করছে। এই ক্ষুদ্র কুটিরশিল্পগুলো স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে আমাদের অর্থনীতি আরও চাঙা হবে। একসময় আমরা এগুলো বিদেশে রপ্তানি করব।
বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থানীয় ব্যাংক, বিদেশি ব্যাংক, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বৈদেশিক রেমিট্যান্স, রপ্তানিকারক, আমদানিকারক সবার অবদান রয়েছে। রপ্তানিকারকেরা চান তাঁর পণ্যের মূল্য বাড়াতে। অপরদিকে আমদানিকারকেরা চান পণ্যের মূল্য কমাতে। বিদেশি ব্যাংকগুলো এসব নিয়ে ভাবে না। আমরা সরকারি ব্যাংক চেষ্টা করি আমদানি করা খাদ্যের দাম কম রাখতে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি মালিকানাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে। সেখানে তাঁরা বিনিয়োগ করেন। এর মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স আসে।
২০১৬ সালের শুরুতে ইউরোর দাম কমে ডলারের কাছাকাছি চলে এসেছিল। তখন তাঁরা ইউরো ধরে রেখেছিলেন। এখন দাম কিছুটা বাড়াতে আবার বাজারে ছেড়েছেন। ইতালি থেকে অনেকে ইউরোপের দেশগুলোতে মাইগ্রেট করে চলে যাচ্ছেন। এতে আমাদের রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ কমে যাচ্ছে। হুন্ডির কোনো নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই।
পরিসংখ্যান ছাড়া কোনো দেশের পরিকল্পনা চলে না। সুতরাং হুন্ডিকে যেকোনোভাবে ব্যাংকিংয়ের আওতায় আসতে হবে। হুন্ডিকে আমরা নিরুৎসাহিত করি। জনসাধারণকে এ থেকে বেরিয়ে আসতে কাজ করে যাচ্ছি। হুন্ডিকে ঠেকাতে বিভিন্ন ব্যাংকের এক্সচেঞ্জ হাউস বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সরকারি ব্যাংক হিসেবে আমাদের অনেক দায়িত্ব আছে। চাইলেই আমরা ডলারের দাম বাড়িয়ে দিতে পারি না।

এম এ তসলিম
বৈদেশিক মুদ্রাবাজার নির্ভর করে মজুত অর্থের ওপর। বিভিন্ন কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার আমদানি করতে বাধ্য হয়। আমদানি করা ডলারের ওপর এনবিআর কর আরোপ করে। এসব কারণে বাজারে ডলারের দাম আরও বাড়তে থাকে।
আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে। কারণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছাড়া ব্যবসায়িকভাবে মুনাফা করা সম্ভব নয়।
আমাদের আমদানি-রপ্তানি বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রা বাড়বে। বৈদেশিক মুদ্রা আদান-প্রদান যত বাড়বে, প্রবৃদ্ধি তত বাড়বে। এ বিষয়গুলো আমাদের ভাবতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রাবাজার পরিবর্তনশীল।
খাদ্যের বাজার বা শ্রমবাজারে খুব দ্রুত মূল্য পরিবর্তন হয় না। কিন্তু মুদ্রাবাজারে তাৎক্ষণিকভাবে মূল্য পরিবর্তনশীল। এ জন্য ডলারের মূল্য ওঠানামা করে। রপ্তানি আয় শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বেই কমেছে। এতে সাময়িক সমস্যা হতে পারে।
অনেকে মনে করেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের বাণিজ্যিক কারবার যদি দু-একটি ব্যবসার ওপর নির্ভর করে, তাহলে হঠাৎ ধস নামার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারের ৫০ বা ১০০ বছরের পরিসংখ্যান তা বলে না। পরিসংখ্যান লক্ষ করলে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে ধস নামলে সব ধরনের ব্যবসায় ধস নামে।
আবার বাজার ঊর্ধ্বগতি হলে সব পণ্যেই ব্যবসা ভালো হয়। দুই বছর ধরে প্রতি মাসেই আমাদের প্রবাসী আয় কমছে। বর্তমানে এটি ১৭ শতাংশ কমেছে। আমাদের অর্থনীতিতে এটি বড় ধরনের ধাক্কা।
বৈদেশিক মুদ্রাবাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। বহুদিন ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারকে ৭৮ দশমিক ৮ টাকায় ধরে রেখেছিল। এখন তা বেড়ে ৮২-৮৩ টাকা হয়েছে।
ডলারের মূল্য নির্ভর করে এর চাহিদা ও জোগানের ওপর। চাহিদা বাড়লে ডলারের দাম বাড়বে। বাজারে ডলারের ভালো সরবরাহ থাকলে দাম কমবে। ডলারের দামের একটি গড় মূল্য ধরে রাখার চেষ্টা ভালো।

আহমেদ জামাল
ডলারের মূল্য নির্ধারণ হয় বাজারের চাহিদার ওপর। এটা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের খুব বেশি ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই। তবে ডলার কেনাবেচা করে ডলারের মূল্য স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সম্প্রতি রাতারাতি মার্কিন ডলারের দাম দু-তিন টাকা বেড়ে গেল। এটা কোনোভাবে বাঞ্ছনীয় নয়। ভবিষ্যতে যেন ডলারের দাম না বাড়ে, সে জন্য আমরা কাজ করছি। ডলারের দাম বাড়ার পেছনে কী কারণ তা খতিয়ে দেখছি। আগাম সংকেত পেলে এর বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারি। দীর্ঘদিন ধরে টাকার মান স্থিতিশীল থাকার ফলে আমাদের ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটা ধারণা হয়েছে যে ভবিষ্যতে মূল্য ওঠানামা করবে না।
এ বিষয়ে তাঁদের জানার আগ্রহ অনেকটা কম। প্রবাসী আয় ক্রমেই কমে আসছে। প্রবাসী আয় বাড়ানোর ব্যাপারে আমাদের দুটি দল কাজ করছে। দলগুলো সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে এ ইস্যু নিয়ে বৈঠক করছে।
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আমাদের দেশের শ্রমিকেরা কাজ করছেন। তাঁরা সেখানে নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানের বাইরেও খণ্ডকালীন কাজ করেন। এতে তাঁদের বাড়তি আয় হয়। কিন্তু তাঁরা এই আয় বৈধ পথে দেশে পাঠাতে পারছেন না। বৈধ পথে পাঠাতে গেলে আয়ের উৎস জানতে চাওয়া হয়।
এসব কারণে প্রবাসীরা টাকা পাঠান বিকাশে। প্রবাসী আয় বাড়ানোর জন্য বুথে টাকা জমা নেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রবাসীরা বিমানবন্দরে এসেই বুথে টাকা জমা দিতে পারবেন।
অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল তারা বিদেশ থেকে তহবিল সংগ্রহ করবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তারা দেশ থেকেই তহবিল গঠন করেছে। এটি নিয়ে কাজ হচ্ছে। এ বিষয়ে দ্রুত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। বিদেশে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর অনেকে বিনিয়োগ করতে চায়।
এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক খুবই চাপে থাকে। যাঁরা বিদেশে বিনিয়োগ করতে চান, দেশে তাঁদের কর্মদক্ষতা কেমন তা পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে। বিদেশে বিনিয়োগকারীদের অনেক ক্ষেত্রে অর্থ ফেরত আসে না বললেই চলে।

সালেহ উদ্দিন আহমেদ
মার্কিন ডলারের দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। এটা শুধু বাজারের আচরণে হয়নি, সেখানে অবশ্যই অন্য কোনো বিষয় আছে। এর সঙ্গে কিছু প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে।
রপ্তানি আয়ের গতি কমে যাচ্ছে, প্রবাসী আয় কমছে। এ ক্ষেত্রে হঠাৎ করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ নিতে হবে। নতুবা এর ভোগান্তি আমাদেরই পোহাতে হবে।
শুধু বিনিময় হার পরিবর্তন করে রপ্তানি বাড়ানো যাবে না। সরকারের নীতি এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আবার একক পণ্য রপ্তানি করেও বৈদেশিক মুদ্রা বাড়ানো যাবে না। রপ্তানিকে বহুমুখীকরণ করতে হবে।
আবার আমদানি যদি বাড়াতেই থাকি, তাহলে দেশীয় শিল্পকারখানা বাড়বে না। ডলারের দাম যদি ৫০ টাকায় নেমে আসে, তাহলে দেখা যাবে আমদানিকারকেরা চানাচুর, বিস্কুটের মতো দ্রব্যও আমদানি করবেন। এ ক্ষেত্রে দেশীয় শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। দেশে বেকারত্ব বাড়বে। তাই এ বিষয়গুলো সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।
বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা না করে একটা সহনীয় পর্যায়ে থাকা উচিত। সামান্য কমবেশি হতেই পারে। সারা বছর একই হার থাকবে—এমনও হতে পারে না।
মনে হয় আকস্মিকভাবে ডলারের দাম বাড়ায় সবাই উদ্বিগ্ন হয়েছেন। এর পেছনে যে কারণগুলো লক্ষ করা যায় তা হলো, ভুল তথ্য প্রবাহ, বাজার পর্যবেক্ষণে নজর না দেওয়া ইত্যাদি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার কেনাবেচার ব্যাপারে সামঞ্জস্য থাকতে হবে। এ ব্যাপারে আরও চিন্তাভাবনা করতে হবে। ডলার শুধু কিনতে থাকলে হবে না। এতে বাজারে টাকা আটকে থাকে।
বিনিময় হার নিশ্চিত করতে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। বাংলাদেশি বিভিন্ন কোম্পানিকে ঢালাওভাবে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার আগে তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে। দেশের ভেতরে কাজের সাফল্য পর্যালোচনা করে কিছু কোম্পানিকে সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
আব্দুল কাইয়ুম: আজকের আলোচনার মাধ্যমে বেশ কিছু সুপারিশ ও সমস্যার কথা এসেছে। এর মধ্যে কিছু করণীয় আছে। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে বলে আশা করি। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।
যাঁরা অংশ নিলেন
সালেহ উদ্দিন আহমেদ : সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক
সাদিক আহমেদ : ভাইস চেয়ারম্যান, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট
আহমেদ জামাল : নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক
মোহাম্মদ নূরুল আমীন : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস, অ্যাসোসিয়েশন (বাফেডা) ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর, মেঘনা ব্যাংক লি.
তৌফিক আহমেদ চৌধুরী : মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট
এম এ তসলিম : অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মোস্তাফিজুর রহমান : নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)
মো. আবদুস সালাম : ম্যানেজিং ডিরেক্টর, জনতা ব্যাংক লি.
মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া : ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর, অগ্রণী ব্যাংক লি.
মাহমুদ হাসান খান : সহসভাপতি, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)
আলমগীর মোর্শেদ : ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হেড অব ফাইন্যানসিয়াল মার্কেট, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক
সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম : সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো