বাংলাদেশ টেলিনরের জন্য বিশেষ কিছু

গ্রামীণফোনের ২৫ বছর পূর্তির প্রাক্কালে নানান বিষয় নিয়ে কথা বলেন টেলিনর এশিয়ার প্রধান ও জিপির চেয়ারম্যান।

টেলিনর এশিয়ার প্রধান ও গ্রামীণফোনের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ইয়র্গেন সি অ্যারেন্টজ রোস্ট্রাপ
ছবি: খালেদ সরকার

মুঠোফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের (জিপি) ২৫ বছর পূর্তি হবে ২৬ মার্চ। রজতজয়ন্তীর প্রাক্কালে গ্রামীণফোনের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান টেলিনর এশিয়ার প্রধান ও গ্রামীণফোনের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ইয়র্গেন সি অ্যারেন্টজ রোস্ট্রাপ বলেন, গ্রামীণফোন টেলিনরের সেরা কোম্পানিগুলোর একটি। বাংলাদেশ ও গ্রামীণফোন টেলিনরের জন্য বিশেষ কিছু।

ঢাকায় নিজেদের কার্যালয়ে ১৪ মার্চ তিনজন সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে গ্রামীণফোনের চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। সঙ্গে ছিলেন গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান।

১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ গ্রামীণফোন যাত্রা শুরু করে। এটি দেশের চারটি মুঠোফোন অপারেটরের মধ্যে গ্রাহকসংখ্যা, রাজস্ব আয় ও মুনাফার দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে। এখন গ্রামীণফোনের গ্রাহকসংখ্যা ৮ কোটি ৩০ লাখের বেশি।

গ্রামীণফোনের শেয়ারের ৫৫ দশমিক ৮০ শতাংশের মালিকানা নরওয়ের রাষ্ট্রমালিকানাধীন কোম্পানি টেলিনরের হাতে। ৩৪ দশমিক ২০ শতাংশ শেয়ারের মালিক বাংলাদেশের গ্রামীণ টেলিকম। এর বাইরে গ্রামীণফোনের কর্মী ও সাধারণ মানুষের হাতে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার রয়েছে।

গ্রামীণফোনের চেয়ারম্যান ইয়র্গেন বলেন, ‘এশিয়ায় টেলিনরের প্রথম বিনিয়োগ ছিল গ্রামীণফোনে। এটা ছিল আমাদের জন্য একটি ভিন্ন রকম বিষয়। টেলিনরের ওপর গ্রামীণফোনের প্রভাব ব্যাপক। এ জন্য আমরা টেলিনরকে একটি নরডিক-এশীয় কোম্পানি বলি।’

নরডিক দেশ (নরওয়ে, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড ও সুইডেন) এবং এশিয়ার ৯টি দেশে টেলিনরের ব্যবসা রয়েছে। মোট গ্রাহক ১৮ কোটি ৮০ লাখ। এর মধ্যে ১৭ কোটিই এশিয়ায়। বাংলাদেশ ছাড়াও টেলিনরের থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার ও পাকিস্তানে ব্যবসা রয়েছে। যদিও মিয়ানমারে তাদের ব্যবসা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে টেলিনর। দেখা যাচ্ছে, এশিয়ায় টেলিনরের মোট গ্রাহকের প্রায় অর্ধেক বাংলাদেশে।

ইয়র্গেন বলেন, মুনাফার হারের দিক দিয়ে টেলিনরের কোম্পানিগুলোর মধ্যে গ্রামীণফোন এক নম্বর নয়, তবে সেরাদের মধ্যে রয়েছে। এটি টেলিনরের অগ্রসর কোম্পানিগুলোর একটি। একটি দিক দিয়ে গ্রামীণফোন সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। সেটি হলো কর প্রদান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গ্রামীণফোন দীর্ঘদিন ধরে সেরা করদাতা।

সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বিগত ২৫ বছরের মিথস্ক্রিয়া কেমন ছিল জানতে চাইলে ইয়র্গেন বলেন, ‘নিয়ন্ত্রকেরা তাদের কাজের বিষয়ে খুবই তৎপর। মাঝেমধ্য নানা বিষয় নিয়ে আলোচনার দরকার হয়। সব বিষয়ে যে আমরা একমত হই, তা নয়। তবে আমরা আলোচনা করা, কথা বলার সুযোগ সব সময় পেয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘যখনই আমরা চেয়েছি, টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যানও সময় দিয়েছেন। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যকে এগিয়ে নিতে আমাদের একত্রে কাজ করে যেতে হবে।’

কর্মী ছাঁটাই নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ইয়র্গেন বলেন, এখন প্রযুক্তি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এমন অনেক কর্মী আছেন, যাঁরা কর্মঠ ও সৎ। কিন্তু তাঁদের বর্তমান দক্ষতা আর টেলিযোগাযোগ খাতে প্রাসঙ্গিক নয়। তাঁদের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা যায়। আর যাঁরা নতুন প্রযুক্তি আত্মস্থ করতে আগ্রহী নন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলোচনার মাধ্যমে বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। তাঁরা অন্য কোথাও নিজেদের দক্ষতা কাজে লাগাতে পারেন। তিনি বলেন, গ্রামীণফোন তার কর্মী বাহিনীর প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল।

ইয়র্গেন বলেন, গ্রামীণফোনের মোট গ্রাহকের প্রায় অর্ধেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। তাঁদের জন্য নতুন নতুন অফার দিতে হয়। আবার যাঁরা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না, তাঁদের জন্যও উন্নত সেবা দেওয়ার বিষয়টি খেয়াল রাখতে হয়। ভয়েস কল (কথা বলা) থেকে আয় বাড়ছে না। ইন্টারনেটের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বাড়ছে, তবে সে তুলনায় সেখান থেকে আয় বাড়ছে না। এ এক দ্বিধাজনক পরিস্থিতি।

ইয়র্গেনের প্রতি শেষ প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশে টেলিনরের ২৫ বছর হচ্ছে। আর কত বছর তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী হিসেবে থাকার ইচ্ছে রাখে। জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা দারুণ প্রশ্ন। আমি হয়তো একটি সংখ্যা বলতে পারব, সেটার পেছনে যুক্তি তুলে ধরতে পারব। তবে আমি সেটা করব না।’ তিনি বলেন, যত দিন টেলিনর বোধ করবে যে বিনিয়োগকারী হিসেবে বাংলাদেশে তাদের সাদরে গ্রহণ করা হচ্ছে, তত দিন টেলিনর বাংলাদেশে থাকতে চায়।

ইয়র্গেন বলেন, ‘আমি যেটা বলতে চাইছি, তা হলো আমরা গ্রামীণফোনকে খুবই পছন্দ করি। আমাদের অন্য সব কোম্পানির ক্ষেত্রে হয়তো এতটা গভীরভাবে কথাটি বলব না।’