বাউফলে ১০টি পরিবারের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান

বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পটুয়াখালীর বাউফলের কেশবপুর মহাবিদ্যালয় এলাকার হাজারী হাওলাদার বাড়ির যাতায়াতের পথ
ছবি: প্রথম আলো

বিরোধের জের ধরে প্রায় ৩৭ বছর পর দেয়াল নির্মাণ করে ১০টি পরিবারের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান। এতে ১০ পরিবারের অর্ধশতাধিক মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামে।

কেশবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও কেশবপুর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সালেহ উদ্দিন ওরফে পিকু তাঁর পক্ষে নির্বাচন না করায় গত সোমবার শ্রমিক দিয়ে দেয়াল নির্মাণ করে ওই ১০টি পরিবারের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন।

সালেহ উদ্দিন কেশবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগেরও সভাপতি।

সরেজমিনে স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেশবপুর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী হাজারী হাওলাদার বাড়ির লোকজন কলেজটিতে অনেক জমি দান করেন। কলেজ নির্মাণের আগে থেকেই ওই পথ দিয়ে ওই বাড়ির লোকজন যাতায়াত করছে।

কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাজারী হাওলাদার বাড়ির লোকজন কলেজটিতে দুই দফায় ৯৩ শতাংশ দান করেন। তাঁদের যাতায়াতে সুবিধার জন্য ১৯৮৫ সালের ১০ মার্চ কলেজ পরিচালনা কমিটির এক সভা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক লিখিত শর্ত ছিল, ওই বাড়ির লোকজনের যাতায়াতের জন্য ১৫ ফুট চওড়া (প্রশস্ত) পথ থাকবে, যা কলেজের বিজ্ঞান ভবন-সংলগ্ন দক্ষিণ পাশে মাঠের পাশ দিয়ে নদীর দিকে যাতায়াতের ওই পথের ব্যবস্থা থাকবে। এ কারণে কলেজের সীমানাদেয়ালের ওই অংশে ১৫ ফুট ফাঁকা রাখা হয়। দীর্ঘ প্রায় ৩৭ বছর পর যাতায়াতের ওই পথে দেয়াল নির্মাণ করে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ওই বাড়ির বাসিন্দা মো. কবির হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘যাতায়াতের একমাত্র পথটি বন্ধ করে দেওয়ায় বাড়ির বৃদ্ধ মানুষেরা মসজিদে যেতে পারছেন না। জরুরি প্রয়োজনে অন্য বাড়ির বাগান দিয়ে তাঁদের যাতায়াত করতে হয়।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, কলেজে জমি দিয়ে কি তাঁরা অপরাধ করেছেন?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কেশবপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন ওরফে লাভলুর সঙ্গে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান সালেহ উদ্দিনের বিরোধ চলছে। সম্প্রতি শেষ হয়ে যাওয়া নির্বাচনে সালেহ উদ্দিন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। হাজারী হাওলাদার বাড়ির লোকজন মহিউদ্দিনের নির্বাচন করেন।

এ বিষয়ে অধ্যক্ষ সালেহ উদ্দিন বলেন, কলেজের স্বার্থে সীমানাদেয়ালের ফাঁকা অংশটুকু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হাজারী বাড়ির লোকজনের যাতায়াতের জন্য বিকল্প পথ রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ বছর পর কেন এখন পথটি বন্ধ করে দিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাঁরা সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিনের লোক। মহিউদ্দিন আমার দুই ভাইয়ের খুনি। আমি যত দিন বেঁচে থাকব, তত দিন পর্যন্ত আমার ভাইয়ের খুনিদের দোসরের সঙ্গে ভালো আচরণ করার কোনো সুযোগ নাই।’

এ ব্যাপারে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যদি তাঁদের (হাজারী হাওলাদার বাড়ির লোকজন) সঙ্গে কলেজ কর্তৃপক্ষের লিখিত চুক্তি বা রেজুলেশন থাকে, তাহলে যাতায়াতের পথ বন্ধ করার কোনো সুযোগ নাই। আমি সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’