বাকেরগঞ্জের ওসিসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার রায় স্থগিত

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালামসহ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসংক্রান্ত হাইকোর্টের পুরো রায়ের কার্যকারিতা চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ওসিসহ একাধিক কর্মকর্তার করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ রোববার চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে আবেদনকারীপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল দায়ের করতে বলা হয়েছে। আগামী ১ আগস্ট বিষয়টি আপিল বিষয়ে শুনানির জন্য পাঠানো হয়েছে।

এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের, চার শিশুকে গ্রেপ্তার, আটক রাখা এবং তাদের যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো নিয়ে বেসরকারি একটি টেলিভিশনে প্রচারিত খবর বিবেচনায় নিয়ে গত বছরের ৮ অক্টোবর হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ১৩ জুন হাইকোর্ট রায় দেন।

ঘোষিত রায়ে সাময়িক বরখাস্ত করে বাকেরগঞ্জের ওসি আবুল কালাম, উপপরিদর্শক মো. বশির উদ্দিন খান, থানার শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রবেশন কর্মকর্তা আবু তাহেরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহকে ফৌজদারি এখতিয়ার থেকে প্রত্যাহার করে দেওয়ানি এখতিয়ারে দিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। রায়ে চার শিশুর বিরুদ্ধে করা ওই মামলা বাতিল ঘোষণা করা হয়। গত ৭ অক্টোবর জামিন নামঞ্জুরের পর চার শিশুকে ধাক্কা দিয়ে প্রিজন ভ্যানে ওঠানো চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ওসি ও শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা আপিল বিভাগে আবেদন করেন, যা আজ চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। আদালতে ওসিসহ আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন ফকির। হাইকোর্টে ব্যাখ্যাকারী (ইন্টারভেনার) হিসেবে যুক্ত চিলড্রেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. আবদুল হালিম।

পরে আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন ফকির প্রথম আলোকে বলেন, ওসি, পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য, উপজেলা প্রবেশন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টের দেওয়া পুরো রায়ের কার্যকারিতা চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। আবেদনকারীপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল দায়ের করতে বলে চেম্বার আদালত ১ আগস্ট বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়েছেন।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ছয় বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে চার শিশুর নামে গত বছরের ৬ অক্টোবর বাকেরগঞ্জ থানায় মামলা করেন ওই শিশুর বাবা। সেদিন শিশুদের গ্রেপ্তার করে রাতভর থানায় রাখা হয়। পরদিন চার শিশুকে বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। গত বছরের ৭ অক্টোবর বিকেলে তাদের যশোর পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহ। এই বিষয়ে বেসরকারি একটি টেলিভিশনের প্রচারিত প্রতিবেদন নজরে এলে গত বছরের ৮ অক্টোবর রাতে হাইকোর্ট তাৎক্ষণিক শিশু আদালতকে (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, বরিশাল) বসতে ও শিশুদের জামিন বিবেচনা করতে বলেন। শিশুদের জামিন মঞ্জুর হলে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র হতে শিশুদের বাড়িতে পৌঁছে দিতে নির্দেশ দেন। সেদিন রাতে শিশুদের জামিন হয়।