২৯ জুলাই আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস। বিশ্বজুড়ে বিলুপ্ত হতে যাওয়া এই প্রাণী রক্ষায় বিশ্ববাসীর উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিশ্বে বাঘ আছে, এমন দেশগুলোয় দিবসটি পালিত হয়। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) রেড ডেটা বুক অনুযায়ী বাঘ বিশ্বের মহা বিপন্ন প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত। তাই আমাদের সুন্দরবনের বাঘের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই জরুরি ভিত্তিতে ভাবা প্রয়োজন

* বাঘের আটটি উপপ্রজাতির মধ্যে বেঙ্গল টাইগারসহ কোেনা রকমে পাঁচটি উপপ্রজাতি টিকে আছে
* ১৯০০ সালে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা ছিল এক লাখ। বর্তমানে এ সংখ্যা চার হাজারে নেমে এসেছে। বাঘ বিশেষজ্ঞদের মতে, কমার এই প্রবণতা চলমান থাকলে আগামী কয়েক দশকে পৃথিবী থেকে বাঘ হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে
* বাঘ আছে এমন ১৩টি দেশ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাঘ পুনরুদ্ধার কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে
আলোচনায় সুপারিশ
* ২০২২ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করতে হবে
* ভবিষ্যতে সুন্দরবনের বাঘ নিরাপদ রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
* যেসব দেশে বােঘর অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যবহার রয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে তাদের সচেতন করা জরুরি
* ২০১২ সালের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা
* আরও অনেক বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি ছাড়া কোনোভাবে বাঘকে ডাকাতদের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে না
* জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা সুন্দরবনে কাজ করে, তাদের ঝুঁকি ভাতাসহ জীবনমান উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হবে
আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম: ২৯ জুলাই আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস। বাংলাদেশের জন্য দিবসটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা, বাঘ আমাদের জাতীয় প্রাণী। দেশে বীরত্ব ও শক্তির প্রতীক হিসেবে বাঘকে দেখা হয়। আমাদের জাতীয় ক্রিকেট দলের লোগো বেঙ্গল টাইগার। আমরা বলছি, বাঘ বাঁচলে বাঁচবে বন, রক্ষা হবে সুন্দরবন।
বিশ্বজুড়ে বিলুপ্ত হতে যাওয়া এই প্রাণী রক্ষায় বিশ্ববাসীর উদ্যোগের অংশ হিসেবে দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হয়। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) রেড ডেটা বুক অনুযায়ী বাঘ বিশ্বের মহা বিপন্ন প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত।
আজকের আলোচনায় বাঘের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিভিন্ন বিষয় আসবে। এখন আলোচনা করবেন কামাল উদ্দিন আহমেদ।

কামাল উদ্দিন আহমেদ: বাঘ নিয়ে আমরা গর্ব করি। আমাদের সুন্দরবনের অত্যন্ত সমৃদ্ধ প্রাণী বাঘ। একসময় বনে অনেক বাঘ ছিল। এখন কমে গেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাঘ আছে। কিন্তু আমাদের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার সুন্দরবনে অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি বাঘ আছে। ঘনত্বের বিচারে এটি বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাঘের বাস। ভারতে ৫৬টি বনে ১ হাজার ৭০০ বাঘ আছে। কোথাও আড়াই লাখ বর্গ কিলোমিটার জায়গায় মাত্র ২০০ থেকে ২৫০টি বাঘ আছে। আমরা গর্ব করে বলি, গত ১০০ বছরে সুন্দরবন আয়তনের দিক থেকে কমেনি। এই না কমার কারণ হলো সুন্দরবনের বাঘ। বাঘ বেঁচে থাকলে বনের জীববৈচিত্র্য বেঁচে থাকবে। বন রক্ষা হবে। আর বৃক্ষের কী প্রয়োজন, তা বিশ্বব্যাপী মানুষ আজ জানে।
বন ধ্বংস হলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে। তখন আমরা বিভিন্ন সংকটে পড়ব। জীববৈচিত্রে্যর মাধ্যমে জীবনধারণের উপকরণগুলো পেয়ে থাকি। এই জীববৈচিত্র্য রক্ষার অন্যতম কারণ বাঘ। আমাদের সবার প্রিয় প্রাণীও বাঘ। এই প্রাণীকে কোনোভাবে ধ্বংস হতে দিতে পারি না।
বিশ্বের অন্যতম ম্যানগ্রোভ বন আমাদের সুন্দরবন, এটি টিকে আছে বাঘের জন্য। ১৯০০ সালে বিশ্বে বাঘের পরিমাণ ছিল এক লাখ। মাত্র ১১৫ বছরে এক লাখ থেকে চার হাজারে নেমে এসেছে। এত দ্রুত হারে বাঘ কমেছে, যা আমাদের কল্পনার অতীত। এ অবস্থা চলতে থাকলে আর মাত্র কয়েক দশকে বিশ্ব থেকে বাঘ বিলুপ্ত হবে।
আটটি উপপ্রজাতির বাঘ ছিল, তার তিনটি ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে। ২০১০ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে একটি সম্মেলন হয়েছিল। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এ সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়, ২০২২ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে হবে।
আমরা জাতীয়ভাবে বাঘ পুনরুদ্ধারের কর্মসূচি নিয়েছি। আরও বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা আমাদের আছে। যেকোনো মূল্যে সুন্দরবনের বাঘকে সংরক্ষণ করতেই হবে।

তপন কুমার দে: বিশ্বের ১৩টি দেশে বিভিন্ন প্রজাতির বাঘ আছে। আমরা বলে থাকি, বাঘ বাঁচলে বন বাঁচবে। কেন বলি? বাঘ হলো বনের সার্বক্ষণিক পাহারাদার। যেখানে বাঘ আছে, সেখানে মানুষ যায় না। অর্থাৎ মানুষ না গেলে বন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ থাকে না। ফলে বন রক্ষা পায়। বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপাল, চীন, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনামসহ আরও কয়েকটি দেশে বাঘ আছে। কিন্তু বিশ্বের অধিকাংশ বাঘ আছে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানে। একসময় দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বাঘ ছিল। এখন শুধু সুন্দরবনেই আছে। ২০০৪ সালে সুন্দরবনের বাঘের একটি জরিপ হয়। এ জরিপে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ৪৪০।
জরিপের সময় ইউএনডিপি ও ভারত আমাদের সঙ্গে ছিল। ১৯৭৫ সালের পর থেকে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল অনেকটা অনুমানভিত্তিক। এখন আমরা ফটোগ্রাফির মাধ্যমে জরিপ করছি। এটা হলো বিজ্ঞানভিত্তিক ও আধুনিক। ২০১৪ সালের মার্চ থেকে বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে বাঘ গণনা শুরু করে এবং ২০১৫ সালের এপ্রিলে শেষ হয়।
এই জরিপ থেকে আমরা বাঘের সঠিক পরিসংখ্যান পাচ্ছি। প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী যে পরিমাণ বাঘ আমাদের সুন্দরবনে আছে, সেটাকে ধরে রাখব। ধীরে ধীরে বাড়ানোর চেষ্টা করব।
সুন্দরবনের যেসব এলাকায় সুন্দরীগাছ আছে, সেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে তিনটি হরিণ আছে। আবার কটকা এলাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১৭৫ থেকে ২০০টি হরিণ আছে। ২০১২ সালের বন্য প্রাণী রক্ষার আইনে শাস্তির বিধান সর্বনিম্ন তিন বছর ও সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড করা হয়েছে। কেউ যদি দ্বিতীয়বার বাঘ হত্যা করে, তাহলে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ভবিষ্যতে সুন্দরবনের বাঘ নিরাপদে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

আকবর হোসেন: সুন্দরবনে ১৩ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেন্ট পিটার্সবার্গের বাঘ সম্মেলনে ছিলাম। বাঘ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আমার সম্পৃক্ততা ছিল। বাঘ সংরক্ষণের কার্যকর পরিকল্পনা আছে। পরিকল্পনায় কীভাবে বাঘ সংরক্ষণ করতে হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বন বিভাগ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। সুন্দরবনের তিন দিকে বসতি। কেবল দক্ষিণ দিকে সমুদ্র।
সুন্দরবনের আশপাশের ১৭টি উপজেলার পাঁচ থেকে ছয় লাখ মানুষ সরাসরি বনের ওপর নির্ভরশীল। এদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা খুবই জরুরি। সরাসরি যারা বনের ওপর নির্ভরশীল, এরা বনের বৃক্ষ ও বন্য প্রাণী ধ্বংস করে। প্রায়ই পত্রপত্রিকায় দেখা যায়, বনের হরিণ শিকার হচ্ছে। এভাবে যদি বাঘের খাদ্য কমে যায়, তাহলে বাঘও একসময় বিপন্ন হবে।
এখন এসব ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। দুই বছর আগেও যেকোনো কারণে বাঘ লোকালয়ে এলে হত্যা করা হতো। এখন সেটা বন্ধ হয়েছে। গত দুই বছর আমরা স্থানীয় মানুষের বিভিন্নভাবে সচেতন করেছি। কিছু ক্ষেত্রে আমরা বাঘকে বনে ফিরিয়ে নিতে পেরেছি।
বনের পাশে বসবাস করা মানুষের বোঝাতে হবে, বাঘ না বাঁচলে বন থাকবে না। বন না থাকলে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হব। সবচেয়ে বড় কাজ হলো বনের ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা করা। এদের জীবিকার বিকল্প ব্যবস্থা না থাকলে এরা বন ধ্বংস করবেই।
এ ক্ষেত্রে একা বন বিভাগ কিছুই করতে পারবে না। বিশ্বের কোনো কোনো দেশে কথিত ওষুধ হিসেবে বাঘের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। যে কারণে বাঘ শিকার হচ্ছে। যেসব দেশে বাঘের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যবহার রয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে তাদের সচেতন করা জরুরি।
বিশ্ববাজারে বাঘের চাহিদা না থাকলে বাঘ শিকার হবে না। ফটোগ্রাফির মাধ্যমে বাঘ গণনা শেষ হয়েছে। এ গণনা অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১০৬। এখন বাঘ সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।

আনোয়ারুল ইসলাম: বিশ্ববাজারে বাঘের চাহিদা রয়েছে, আবার এর সরবরাহও কম। চীনসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাঘের চামড়াসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই বাঘ শিকারের জন্য একটি আন্তর্জাতিক চত্রু গড়ে ওঠা অস্বাভাবিক নয়। চীনে কেউ কেউ নাকি বাঘ হিমায়িত করে রেখেছে। কারণ, তারা জানে, বিশ্বের চার হাজার বাঘ শেষ হতে আর বেশি দিন লাগবে না। বাঘ সংরক্ষণে এখন আমাদের ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে। প্রতিবছর ২৯ জুলাই বাঘ দিবস পালন করি। এদিন আমাদের হিসাব মিলাতে হবে, গত বছর কী করেছি, তার আগের বছর কী ছিল, এ বছরই বা কী করলাম। আগামী ১০ বছরে আমাদের পরিকল্পনা কী, বিশ্ব বাঘ দিবসে এসব ঠিক করতে হবে।
চোরা শিকািররা সুন্দরবনে হরিণ শিকার করছে। সুন্দরবনের পাশে ১৭টি উপজেলা রয়েছে। এখানকার কিছুসংখ্যক মানুষ চোরা শিকািরদের সহযোিগতায় হরিণের মাংস খেয়ে থাকে। ঢাকা মহানগরে উচ্চবিত্তরাও অনেকে হরিণের মাংস খাওয়ার বিষয়টি গর্বের সঙ্গে প্রচার করে।
২০১২ সালের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা প্রয়োজন। নৌবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, বিজিবি—সবাইকে নিয়ে সুন্দরবন সংরক্ষণের জন্য একটি স্বতন্ত্র ইউনিট গঠন করতে হবে। আমাদের বনের ভৌগোলিক অবস্থা এমন, আমরা যদি সঠিক উদ্যোগ গ্রহণ করি, তাহলে সুন্দরবন থেকে কোনো দিনও বাঘ হারিয়ে যাবে না।

মুকিদ মজুমদার বাবু: সুন্দরবনের জন্যই বাঘকে রক্ষা করতে হবে তা কিন্তু না, আমাদের জন্যও বাঘকে রক্ষা করতে হবে। অনেক প্রাণীই প্রকৃতি থেকে হরিয়ে গেছে। বাঘকে এভাবে হারিয়ে যেতে দিতে পারি না। পত্রপত্রিকা, বই–পুস্তকে অনেক কিছুই হয়তো লেখা হয়। মনে করি, সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব ইলেকট্রনিক মিডিয়ার। এ প্রক্রিয়ায় মানুষ সবচেয়ে বেশি সচেতন হয়। আর এখন এ ক্ষেত্রে অনেকে কাজ করছে।
কিন্তু সবাইকে এ বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, টেলিভিশনে প্রচারের মাধ্যমে জনগণ বেশি সচেতন হয়। এক লাখ থেকে বাঘের পরিমাণ চার হাজারে নেমেছে। এটি দুঃসংবাদ। আবার এ হিসাব কতটুকু সঠিক, তা নিয়েও হয়তো প্রশ্ন রয়েছে।
সুন্দরবন রক্ষার সঙ্গে বাঘের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। বাঘ না থাকলে কেবল সুন্দরবন না, বাংলাদেশের জন্যও এটা বড় ক্ষতি। বিশ্বের কাছে আমরা প্রশ্নের সম্মুখীন হব যে আমাদের দেশ থেকে এমন একটি প্রাণী হারিয়ে গেছে? এটা আমাদের জন্য বড় রকমের লজ্জার বিষয় হবে।
বনের ওপর নির্ভরশীল মানুষের বিকল্প জীবিকার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাঘ না থাকলে বনের অন্যান্য প্রাণী, উদ্ভিদ সবকিছু বিপন্ন হবে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে। তাই বাঘ সংরক্ষণ যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আরও গভীরভাবে ভাবতে হবে। পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি বোঝাতে হবে।

ইনাম আল হক: এই ঢাকায় একসময় অনেক বাঘ ছিল। ১৮০৭ সালে ২৭০টি বাঘ মারার জন্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। ঠিক এর ১০০ বছর পর ১৯০৭ সালে ১৩টি বাঘ মারার জন্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। এই ১৩টিই শেষ, আর কোনো বাঘ ঢাকা শহরে ছিল না। ১৯১৫ সালে শেষ একটি চিতাবাঘ কামরাঙ্গীরচরে মারা গেল।
আগে হরিণ মারার ফলে বাঘের খাদ্যের সংকট তৈরি হতো। এখন সরাসরি বাঘ মারা হচ্ছে। এসব বাঘের কেবল দাঁত, চোখ, নখসহ কিছু অঙ্গ পাঠালেই কোটি টাকা পাওয়া যায়। একবার সুন্দরবনের প্রহরী নিয়ে নৌকায় বনের খালে ঘুরছি। একসময় গুলির আওয়াজ শুনতে পেলাম। নৌকার লোকজন বলল, ওরা আমাদের ওদের দিকে যেতে নিষেধ করছে। সুন্দরবনে বাঘ দেখা হয়নি, কিন্তু অনেক ডাকাত দেখেছি। ডাকাতেরা অনেক সংঘবদ্ধ হচ্ছে।
আগে জেলেদের কাছ থেকে এক-দুই শ টাকা নিত। এখন তারা হরিণ মেরে হরিণে বিষ দিয়ে বাঘ মারে। এই বাঘের বিভিন্ন অঙ্গ বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা পায়। যখন মরা বাঘ ভেসে আসে, তখন আমার জানতে পারি। সুন্দরবনে বন বিভাগের উপস্থিতি খুবই নগণ্য। আরও অনেক বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি ছাড়া কোনোভাবে বাঘকে ডাকাতদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারব না।

মনিরুল খান: সত্তরের দশকের শুরুতে একজন জার্মান নাগরিক মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে ধারণা দিয়েছিলেন বাংলাদেশে প্রায় ৩০০ বাঘ আছে। তারপর যতগুলো গণনা হয়েছে, তার কোনোটিকেই সঠিক বলা যাবে না। সম্প্রতি ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের (ফটোগ্রাফি) মাধ্যমে যে গণনা হলো, এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে বাঘ গণনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক হবে।
এই গণনার ফলকে বাঘের সঠিক সংখ্যা বলতে পারব। একে ভিত্তি ধরা উচিত। তবে ফল যা-ই হোক না কেন, এটাকে মেনে নিতে হবে। এখান থেকেই যাত্রা শুরু করতে হবে। বিভিন্নভাবে বাঘ চোরা শিকার হচ্ছে। এর মধ্যে একটি অন্যতম মাধ্যম হলো বিষটোপ। অর্থাৎ হরিণ মেরে বিষ দিয়ে বাঘ মারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাঘের চামড়া ও হরিণের মাংস উদ্ধার করছে। এসব সংবাদ গণমাধ্যমের এমনভাবে প্রচার করা উচিত, যাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উৎসাহিত হয়। বাঘ গ্রামে এলেই মারতে হবে, এটিই রেওয়াজ। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।
আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামেও বাঘ আছে। এসব বাঘ আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরামে যায়। বৃহত্তর সিলেটের লাঠিটিলায়ও মাঝেমধ্যে বাঘ দেখা যায়। বাঘ সংরক্ষণের ব্যাপারে সরকারি কমিটি আছে। এ কমিটি বাঘ সংরক্ষণে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিতে পারে।
সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে জাহাজ চলাচলের পথ বন্ধের জন্য এত আলোচনা হচ্ছে, তবু এ পথ বন্ধ হচ্ছে না। পথটি যেন খুব তাড়াতাড়ি বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

শাহনাজ মুন্নী: গণমাধ্যম সব সময় মানুষকে সচেতন করছে। কোনো কাজের সফলতা-বিফলতাসহ প্রকৃত চিত্র তুলে ধরছে। এ জন্য নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সুবিধা হচ্ছে। বাঘের সংখ্যার সর্বশেষ জরিপের ফলাফল সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করি। এটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করব। বাঘ রক্ষার যে পরিকল্পনাগুলো নেওয়া হয়েছে, তা খুব কার্যকর হয়নি। কারণ, বন বিভাগের পর্যাপ্ত জনবল নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি খুব কম। বাঘ ও বন রক্ষায় কেবল বন বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নয়, স্থানীয় মানুষকে অবশ্যই সম্পৃক্ত করতে হবে। তাদের সঙ্গে অংশীদারির ভিত্তিতে কিছু করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। একবার লোকালয়ে একটি ঝোপের মধ্যে বাঘ দেখা গিয়েছিল। গণমাধ্যম সেটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে। সুন্দরবনের নদীগুলো লবণাক্ত। ফলে বন্য প্রাণীদের মিঠা পানির অভাব হয়তো হয়। এসব বিষয়ও ভাবতে হবে।

শায়ের মাহমুদ ইবনে আলম: সুন্দরবনের আশপাশে যারা বাস করে, তারাও চায় যেকোনো মূল্যে বাঘ যেন টিকে থাকে। বাঘকে বাঁচাতে হলে তার জীবনধারণের জন্য যে পরিবেশ দরকার, সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। হরিণের নিরাপদ পরিবেশ দিতে হবে। হরিণসহ অন্যান্য বন্য প্রাণী যাতে কেউ শিকার না করতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে।
বনে মানুষের অবাধ যাতায়াত বন্ধ খুবই প্রয়োজন। ডাকাতদের কঠোরভাবে দমন করা জরুরি। এসব ব্যবস্থা নিতে পারলে বাঘ নির্বিঘ্নে জীবন যাপন করতে পারবে। এখন বাঘ রক্ষার উদ্যোগ যেন বন্ধ না হয়। সাধারণত যেটা দেখা যায়, প্রকল্পের অনুদান বন্ধ হলে কার্যক্রমও বন্ধ হয়। এমন যেন না হয়। এসব ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও বন বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
পরিবারে শিশুদের মধ্যে বন্য প্রাণী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। শিশুরা একটু দুষ্টুমি করলেই তাদের বাঘ, শিয়াল ও অন্যান্য বন্য প্রাণীর ভয় দেখানো হয়। যে কারণে একটি নির্বিষ সাপ দেখলেও একে আমরা মারতে উদ্যত হই। এসব ব্যাপারে আমাদের সতর্ক হতে হবে।

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ: দরিদ্র মানুষ গোলপাতা ও মধু সংগ্রহের নামে বনের গাছ ধ্বংস করছে। কারণ, এরা বেঁচে থাকার জন্য ঋণ করে। চাঁদা দিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। ফলে তারা মনে করে গাছও কাটতে পারে। চাঁদা ও ঋণের চাপে তারা বনের গাছ বেশি ধ্বংস করে। যেকোনোভাবে এসব বন্ধ করতে হবে। এসব মানুষের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন, যাতে তারা সুন্দরবনে প্রবেশ না করে। এ ক্ষেত্রে আমরা কাজ করছি। যারা বনের ওপর বেশি নির্ভরশীল, তাদের তালিকা তৈরি করেছি। তাদের আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। ফলে তাদের বনের ওপর নির্ভরশীলতা আগের থেকে অনেক কমে গেছে।
বন বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও অনেক এনজিও বনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য কাজ করছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা সমন্বয়ের অভাব। নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি, সমন্বিতভাবে কাজ করলে সুন্দরবনের ওপর নির্ভর করে—এমন মানুষের বিকল্প জীবিকা দিতে পারতাম।
নেপাল বিশেষ অঞ্চল রক্ষার জন্য সেনাবাহিনী ব্যবহার করেছে। আমরাও সুন্দরবন রক্ষার জন্য সে ধরনের উদ্যোগ নিতে পারি। স্কুলের শিক্ষার্থীদের সচেতন করার জন্য আমাদের প্রকল্প আছে। সংশ্লিষ্ট সবদিক থেকে বাঘ রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে প্রতিনিয়ত আমরা বাঘ হারাতেই থাকব।

ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ: সামগ্রিকভাবে বন্য প্রাণীর যে অবস্থা, সেটা বিবেচনা করা প্রয়োজন। কারণ, বন্য প্রাণী জীববৈচিত্রে্যর একটি অংশ। বন্য প্রাণী নিধন হচ্ছে। আবাসস্থল কমে যাচ্ছে। ভীষণভাবে খাদ্যের সংকট রয়েছে। এককভাবে কিছু করলে হবে না। সামগ্রিকভাবে সব প্রাণী ও উদ্ভিদ রক্ষার ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের মতো এত সুন্দর ম্যানগ্রোভ বন বিশ্বে আর নেই। এটি বাঘের বসবাসের জন্য খুব উপযোগী। এ জন্যই বনে বাঘের ঘনত্ব বেশি। এখনো সুন্দরবন বাঘ বসবাসের উপযোগী। ৩০ শতাংশ বনের ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা সবচেয়ে বেশি। এদের জন্যই বন বিনষ্ট হচ্ছে। এখনই এটা বন্ধ না করতে না পারলে সমগ্র বনের ওপর এর চাপ পড়বে।
বনের শূকর ও হরিণ যদি হ্রাস পায়, তাহলে বাঘের সংখ্যাও হ্রাস পাবে। আলোচনায় এসেছে, হরিণের মাংস ঢাকায় কিছুটা উৎসব করে খাওয়া হয়, এটি আমাদের সবার জন্য খুবই খারাপ খবর। এদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
প্রয়োজনে টাস্কফোর্স ও স্বতন্ত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গঠন করে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হবে। সুন্দরবন এবং এ বনের প্রাণী রক্ষায় সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়া নিয়ে যা যা করা দরকার, তার সবকিছু করতে হবে। তা না হলে আমাদের বন ও বন্য প্রাণী কোনোভাবেই রক্ষা করতে পারব না।

মো. ইউনুছ আলী: পাচারের বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নেয় এবং বন বিভাগকে সহযোগিতা করে, তাদের জীবনের নিরাপত্তা থাকে না। খুলনার শরণখোলার আল-আমিন নামে একটি ছেলে তিনটি বাঘের চামড়া ও মাথার খুলি উদ্ধার করতে বন বিভাগকে সহযোগিতা করেছিল। তাকে খবর দিয়ে আমার কাছে আনলাম।
বাঘ শিকারিরা ঢাকার ডেমরা এলাকায় আল–আমিনকে মেরে ফেলার জন্য আঘাত করে। তার মাথায় ১৪টি সেলাই দেওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেলে সনদের জন্য পাঠালাম, সনদ পাওয়া গেল না। পরে ডেমরা থানার ওসিকে অনুরোধ করে মামলার ব্যবস্থা করলাম। পরে তাকে একটা ছোট চাকরি দিয়ে নোয়াখালীতে পাঠিয়েছিলাম।
সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য হলো, থানা থেকে এমনভাবে অভিযোগপত্র দেওয়া হয় যে ওই দাগি অপরাধীরা জামিন পেয়ে যায়। এদের মতো আসামি জামিন পেলে এরা আরও বেশি বেপরোয়া হয়। যারা এদের বিরুদ্ধে গোপন সংবাদের কাজ করে, তাদের জীবনের নিরাপত্তা থাকে না।
সুন্দরবনে আমাদের ক্যাম্পের স্বল্পতা নেই। অবকাঠামো ও উপকরণের অভাব রয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা সুন্দরবনে কাজ করে, তাদের ঝুঁকি ভাতাসহ জীবনমান উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হবে। সুন্দরবনের আয়তন মোটেই কমেনি। কোনো জবরদখলও হয়নি।
তবে সুন্দরবনের ভেতরে নদীভাঙনের জন্য বন কিছুটা সীমিত হয়েছে। সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল মানুষকে নিয়ে আমরা কাজ করছি। তবে তাদের বিকল্প জীবিকার জন্য যে পরিমাণ তহবিলের প্রয়োজন, তার খুব অভাব রয়েছে। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভারতের সঙ্গে আমাদের যে চুক্তি সই হয়েছে, তাতে বেশি কাজ হয়নি।
আমাদের বনের বাঘ যে ভারতের সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে পাচার হয় না, সে নিশ্চয়তাও আমরা দিতে পারি না। বাঘ বিচরণের জায়গার উন্নয়ন করা প্রয়োজন। এর জন্য তহবিলের প্রয়োজন।
সচেতন করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কীভাবে সচেতন করা হবে, সচেতনতার বিষয়বস্তু কী হবে, এসব ঠিক করতে হবে। বনে ডাকাত আছে, এটা খুব সত্যি কথা।
যত অভিযোগ হয়েছে, তার খুব কমই শাস্তির ব্যবস্থা হয়েছে। অভিযোগের শাস্তির মাত্রা যদি এমন হয়, তাহলে অপরাধ কোনো দিন কমবে না। এসব ব্যাপারে আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে।

মিহির কান্তি মজুমদার: বেঙ্গল টাইগার একমাত্র সুন্দরবনে আছে। অন্য কোথাও নেই। এই বাঘ আমাদের ঐতিহ্য বহনকারী প্রাণী। কিন্তু সুন্দরবন বাঘ বসবাসের জন্য ভালো জায়গা না। সুন্দরবনের লবণাক্ত পানি, নদী–খাল নির্দিষ্ট সময় পরপর তলিয়ে যাওয়া—এর কোনোটিই বাঘের বসবাসের জন্য ভালো না। বিপদে পড়েই বাঘ সুন্দরবনে আছে। বাঘ ও মানুষ, দুই পক্ষেরই প্রিয় খাদ্য হরিণ। একই খাদ্য নিয়ে উভয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব। আলোচনায় শুনলাম, কত বাঘ একসময় আজকের ঢাকা মহানগরে ছিল। এটিই হচ্ছে বাঘের বসবাসের ভালো জায়গা। এখানে মানুষের জন্য বাঘ টিকতে পারেনি। মানুষ সুন্দরবনে যেতে পারে না বলেই এটি বাঘের জন্য ভালো জায়গা।
বাঘের চেয়ে সুন্দরবন আমাদের বেশি দরকার। সুন্দরবন আমাদের এতভাবে সেবা দেয়, যা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। কেবল ১০ হাজার কোটি টাকার মৎস্য রপ্তানি করতে পারি। আমাদের সুন্দরবনের কোনো বিকল্প নেই। সুন্দরবন প্রকৃতির আশীর্বাদ।
আমরা ইচ্ছে করলেই আরেকটি সুন্দরবন বানাতে পারব না। বাঘ ও বৈরী প্রকৃতির জন্য সুন্দরবন দখল হচ্ছে না। কাজেই সুন্দরবন রক্ষার জন্য বাঘ দরকার। এ জন্য বাঘ সংরক্ষণে কার্যকর (টাইগার অ্যাকশন) পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ পরিকল্পনার মধ্য রয়েছে বাঘের সংখ্যা বাড়ানো বা স্থিতিশীল রাখা, বাঘের খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বসবাসের উপযোগী বাসস্থান করা ইত্যাদি।
আবহাওয়া পরিবর্তন একটা সমস্যা। এর জন্য মিঠা পানি কমে যাচ্ছে। সিডর, সাইক্লোনের মাত্রা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পারলে সুন্দরবনের অনেক উন্নয়ন হবে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা আমাদের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১ হাজার ১১১ জন, যেখানে ভারতে ৩৬০ জন, চীনে ১৪০ জন, নেপালে ও ভুটানে যথাক্রমে ২১৫ ও ৮ জন। অস্ট্রেলিয়ায় মাত্র তিনজন।
সুন্দরবন ও বাঘ রক্ষায় আমাদের অনেক অর্জন আছে। আমরা অনেক কাজ করেছি ও করছি বলেই আমাদের সুন্দরবন ও বাঘ এখনো টিকে আছে।
কামাল উদ্দিন আহমেদ: আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনেক কার্যকর করেছি। তবে সবাইকে নিয়ে আরও শক্তিশালী বাহিনী করার চেষ্টা করছি। তা না হলে বাঘ শিকার ও চোরাচালান রোধ করা যাবে না। হরিণ মেরে বিষ দিয়ে বাঘ মারা হয়। এটি একটি গুরুতর অপরাধ। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। বিশ্বে বন্য প্রাণীর অবৈধ চাহিদা বন্ধ হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রেও আমরা কাজ করব।
সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে নৌপথ বন্ধ করা খুবই জরুরি। একটি ঘটনা আমাদের চোখ-কান খুলে দিয়েছে। এটি নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। সবার মধ্যে একটি উপলব্ধি তৈরি হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ পথ বন্ধ হবে বলে আশা করি।
মানুষকে সচেতন করার ক্ষেত্রে আমরা কাজ করছি। বিশেষ করে শিশুদের সচেতন করা, পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা—এসব ব্যাপারে আমাদের চিন্তা আছে।
লবণাক্ততার জন্য সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক কিছু আছে, যা আমাদের সাধ্যের মধ্যে নেই। তারপরও চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আলোচনায় যেসব পরামর্শ এসেছে, সেসব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করব।
আব্দুল কাইয়ুম: সুন্দরবন না থাকলে আমাদের জীববৈচিত্র৵ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর সুন্দরবনকে টিকিয়ে রাখার জন্য বাঘ সংরক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। বাঘের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের আরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন
সংশ্লিষ্ট সবাইকে যেকোনো মূল্যে বাঘ সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথম অালোর পক্ষ থেকে সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।
যাঁরা অংশ নিলেন
কামাল উদ্দিন আহমেদ : সচিব, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়
মিহির কান্তি মজুমদার : চেয়ারম্যান, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, সাবেক সচিব, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়
মো. ইউনুছ আলী : প্রধান বন সংরক্ষক, বাংলাদেশ বন বিভাগ
আকবর হোসেন : উপপ্রধান বন সংরক্ষক, বাংলাদেশ বন বিভাগ এবং প্রকল্প পরিচালক, এসআরডব্লিউপি প্রকল্প
আনোয়ারুল ইসলাম : সভাপতি, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াইল্ড টিম
মনিরুল খান : অধ্যাপক, প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাঘ গবেষক
ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ : কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেিটভ, আইইউসিএন, বাংলাদেশ
ইনাম আল হক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব এবং চেয়ারম্যান বাংলাদেশ পাখি গবেষণা কমিটি
তপন কুমার দে : বন সংরক্ষক, বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল, ঢাকা
শায়ের মাহমুদ ইবনে আলম : সহকারী অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
মুকিদ মজুমদার বাবু : চেয়ারম্যান, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন এবং ডিরেক্টর চ্যানেল আই
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ : নির্বাহী পরিচালক, আরণ্যক ফাউন্ডেশন
শাহনাজ মুন্নী : বার্তা সম্পাদক, এটিএন বাংলা
সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম : সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো