বাজারে বর্ষার ফলের দাপট

আষাঢ় মাস এখন শেষ সপ্তাহ পার করছে। চলছে ভরা বর্ষা। বাজারে পাওয়া যাচ্ছে এই মৌসুমের নানা ধরনের ফল। পুষ্টিবিদেরা জানালেন, বর্ষার ফল পুষ্টিগুণে ভরা। তাই বেশি বেশি ফল খাওয়ার পরামর্শ তাঁদের।
বর্ষার ফল কোনগুলো? পেয়ারা, লটকন, আমড়া, জাম্বুরা, জামরুল, ডেউয়া, কামরাঙা, কাউ, গাব ইত্যাদি। তবে বাজারে গ্রীষ্মের ফল আম, কাঁঠালও আছে বহাল। বিক্রেতারা জানান, লটকন সবচেয়ে বেশি আসছে নরসিংদী থেকে, আমড়া বরিশাল থেকে, জাম্বুরা রাজশাহী থেকে, আনারস টাঙ্গাইল থেকে, জামরুল যশোর থেকে।

বাজারে ফলের বিক্রেতারা বলছেন, অন্যান্য ফলের চেয়ে মৌসুমি ফলের সরবরাহ ও চাহিদা দু-ই বেড়েছে। আর ফল আমদানিকারকেরা বলছেন, মৌসুমি ফলের দাপটে এ সময় অন্য মৌসুমের তুলনায় ফল আমদানি কমে যায়। বলা যায়, ভালোই বাজার কাঁপাচ্ছে বর্ষার ফল।
রাজধানীর বাদামতলীর বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুট ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, মৌসুমি ফলের দাপটে এ সময় বিদেশি ফল আমদানি কমে যায়। এ সময় মানুষ মৌসুমি ফল বেশি খায়। দেশে আমের উৎপাদন বেশি হওয়ায় দুই বছর ধরে ভারত থেকে আম আমদানি হয় না বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, অন্য মৌসুমে যেখানে বাদামতলীতে ১০০ ট্রাক ফল আসে, এই মৌসুমে তা ২০ থেকে ২৫ ট্রাকে নেমে এসেছে।

রাজধানীর হাতিরপুলে পরপর তিন দোকানে একই লটকন বিক্রি হতে দেখা গেল ভিন্ন ভিন্ন দামে। মো. সাগর নামের এক বিক্রেতা লটকন বিক্রি করছেন ১৬০ টাকায়, তাঁর পাশের দোকানে রাজা মিয়া ১৪০ টাকায় আর তাঁর ঠিক পাশের দোকানে মো. ফারুক বিক্রি করছেন প্রতি কেজি লটকন ১৫০ টাকায়। তিন দোকানে তিন রকম দাম দেখে হাতিরপুলের বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, ‘এক লটকন তিন দোকানে তিন দাম। সবার দাবি, তাঁর ফলটাই ভালো।’
এই বাজারে আমড়া ১০০ টাকা, পেয়ারা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, জাম্বুরা প্রতিটি ৮০ টাকা, আনারস ৩০ থেকে ৪০ টাকা, জামরুল প্রতি কেজি ১০০ টাকা, ডেউয়া ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
হাতিরপুলের ফলের দোকান আল্লাহর দান স্টোরে দেখা গেল কয়েক ধরনের আমের পসরা বসিয়েছেন বিক্রেতা মো. মিনার। তিনি জানালেন, এখনো আমের চাহিদাই বেশি। তাই আমই বিক্রি করছেন তিনি। তিনি আম্রপালি কেজি ১০০ টাকা, ফজলি ৮০ টাকা, ল্যাংড়া ১০০ টাকায় বিক্রি করছেন। ক্রেতারা অবশ্য বলছেন, শহরের অন্য অংশের তুলনায় হাতিরপুলে দাম একটু বেশি।

কাঁঠালবাগান বাজারে রংপুর অঞ্চলের হাঁড়িভাঙা আম ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছিলেন ফল বিক্রেতা আমিনুর রহমান। তিনি বলেন, এই আমের মজাই আলাদা। বাজারে আসেও শেষ সময়ে। তাই চাহিদা বেশি। আর বিক্রিও হচ্ছে বেশি।
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের সাবেক প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান আখতারুন্নাহার বলেন, লটকনে ভিটামিন ‘সি’ আর ‘এ’ আছে। এই ভিটামিন চুল, দাঁত ও ত্বকের জন্য ভালো। এ ছাড়া আমড়া ও জাম্বুরায় ভিটামিন সি আছে। এই ফলও শরীরের জন্য উপকারী।

কারওয়ান বাজারেও মৌসুমি ফল বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম হাতিরপুলের চেয়ে কম। মো. রফিক লটকন ১৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। এ ছাড়া জাম্বুরা ও পেয়ারা ৬০ টাকা, আমড়া ৮০ টাকা, আম্রপালি আম ১০০ টাকায় বিক্রি করছেন। তাঁর দোকানে ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়। এক বিক্রেতাকে রফিক বলছেন, ‘এটাই শেষ লিচু। কালকে থেকে আর লিচু পাইবেন না। আর গুলশানে এই লিচু কিনতে চাইলে ৩ হাজার টাকা দেওন লাগবে।’ ক্রেতা দাম শুনে আর কিনলেন না। তিনি জাম্বুরা আর লটকন কিনলেন। ধানমন্ডির বাসিন্দা এই ক্রেতা মো. বদরুদ্দোজা বলেন, ‘আম, কাঁঠাল তো আগেই কিনেছি। এখন মৌসুমি ফল কিনছি। এই ফল তো সব সময় পাওয়া যায় না। তাই শেষ হওয়ার আগেই নিয়মিত কিনছি।’
মৌসুমি ফলের পুষ্টি নিয়ে কথা বলেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান (খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগ) শামসুন্নাহার নাহিদ। তিনি বলেন, বর্ষার সব মৌসুমি ফলেরই পুষ্টিগুণ ভালো। তিনি জানান, এই ফলগুলো কম ক্যালরি-সম্পন্ন। যাঁরা খেতে ভালোবাসেন, তাঁরা খাবারের পর এই ফলগুলো খেতে পারেন। এ ছাড়া যাঁরা খাবার কম খেয়ে ডায়েট করছেন, তাঁদের জন্যও এই ফলগুলো ভালো। এই ফলগুলোতে পানির পরিমাণ বেশি থাকার কারণে এতে উচ্চ মিনারেল, আয়রন আছে, যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এগুলো রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। তাই তিনি সময় শেষ হওয়ার আগে এসব মৌসুমি ফল খাওয়ার পরামর্শ দেন।