বাজার ফান্ডের জায়গায় ঠাঁই নেই সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতাদের
খাগড়াছড়ির বিভিন্ন বাজারে সাধারণ কৃষকদের পণ্য কেনাবেচার সুবিধার জন্য তৈরি ছাউনিগুলো বড় ব্যবসায়ীরা দখল করে রেখেছেন। এতে ছাউনির বাইরে বসে বেচাকেনা করতে গিয়ে গরম ও বর্ষাকালে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ছাউনিগুলো প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দখল করে রাখলেও কেউ এর প্রতিবাদ করেন না। অন্যদিকে দখলকারীরা ছাউনিগুলো ব্যবহারের জন্য বাজার ফান্ড কর্তৃপক্ষকে কোনো ভাড়াও দেন না। জেলা পরিষদ বা বাজার ফান্ড কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন বলে অভিযোগ রয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা বাজার ফান্ড কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় বাজার ফান্ড কর্তৃপক্ষের অধীনে ৩৪টি বাজার রয়েছে। এসব বাজারে দূর-দূরান্ত থেকে আসা সাধারণ কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বেচাকেনার সুবিধার জন্য সরকারি খরচে এক বা একাধিক ছাউনি তৈরি করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এ রকম একটি ছাউনি হলো জেলা শহরের চাল বাজারের ছাউনিটি। কয়েকজন চাল ব্যবসায়ী এটি দখল করে রাখার ফলে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সাধারণ কৃষকেরা খোলা আকাশের নিচে বসেই তাঁদের উৎপাদিত চাল বা অন্যান্য পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হন।
গড় গয্যাছড়ি গ্রামের কৃষক বিনয় কৃষ্ণ চাকমা (৬৭) জানান, বাজার ফান্ড কৃষকদের জন্য ছাউনিটি নির্মাণ করেছে, এটিও তাঁদের জানা নেই। এ ছাড়া, বড় ব্যবসায়ীদের দখলে থাকায় আজীবন তাঁরা রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে বসে চাল বিক্রি করে আসছেন।
খাগড়াছড়ি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত চৌধুরী অভিযোগ করেন, বাজার ফান্ড কর্তৃপক্ষের নির্মিত ছাউনিগুলো কয়েকজন ব্যবসায়ী দখল করে রাখায় সাধারণ উৎপাদকেরা এসব ছাউনির সুফল পান না। বিশেষ করে প্রচণ্ড গরম ও বর্ষাকালে খোলা আকাশের নিচে বেচাকেনা করতে গিয়ে তাঁরা চরম দুর্ভোগের শিকার হন। তিনি ছাউনিগুলোতে সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য জায়গা বরাদ্দ করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানান।
চাল বাজারের ছাউনির নিচে দীর্ঘদিন ধরে চালের ব্যবসা করছেন ফরিদুল ইসলাম। তিনি জানান, এখানে বসতে বাজার ফান্ড কর্তৃপক্ষ তাঁদের কোনো বাধা দেয়নি। কাউকে কোনো ভাড়াও দিতে হয় না। তবে পরিচ্ছন্ন কাজের জন্য প্রতি মাসে সামান্য টাকা (কর) পৌরসভাকে দেন তাঁরা।
পৌরসভার দখলেও বাজার ফান্ডের জায়গা: জানা যায়, খাগড়াছড়ি বাজারের মিমি সুপার মার্কেট ও জেলা পরিষদের সবজি বাজার ভবনের জায়গার মালিক বাজার ফান্ড কর্তৃপক্ষ। এ জায়গায় বাজার ফান্ডের ছাউনিগুলো ভেঙে বিপণিকেন্দ্রসহ আলাদা ভবন নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছে জেলা পরিষদ। এ ছাড়া, ১৯৮৬-৮৭ সালে বাজার ফান্ড কর্তৃপক্ষ বায়তুশ শরফ এলাকায় পশু কেনাবেচার জন্য একটি জায়গা ইজারা দেয়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে পৌর কর্তৃপক্ষ ওই জায়গায় একটি আশ্রয়ণকেন্দ্র নির্মাণ করে। ফলে পশুর হাটটি এখন বসে চেঙ্গি নদীর চর এলাকায়। পশুর হাটের ইজারাদার জামাল উদ্দিন বলেন, ‘বাজার ফান্ড থেকে ইজারা নেওয়া পশুর হাট থেকে আমাদের তুলে দেওয়া হয়েছে। চেঙ্গি নদীর চরে হাটটি চালু রাখলেও চর এলাকা হওয়ায় জোয়ারের সময় জায়গাটি ডুবে যায়। এতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিষয়টি বাজার ফান্ড কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনো লাভ হয়নি।’
পশু কেনাবেচার জন্য নির্ধারিত জায়গা বাজার ফান্ডের নামে রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন খাগড়াছড়ি পৌরসভার প্যানেল মেয়র এ টি এম রাশেদ উদ্দিন। তিনি জানান, জায়গাটিতে পশু বেচাকেনা ছাড়াও পশু জবাই করা হতো। নগরায়ণের ফলে হাটের আশপাশের মানুষের অসুবিধা হওয়ায় হাটটি স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমান পশুর হাটের জায়গাটিও পৌরসভা নির্ধারণ করে দিয়েছে।
জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাথোঅং মারমা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি আগে জানতাম না। এখন খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’