বানিয়ে নিতে পারেন জুতা

রাজধানীর ধলপুরে জুতা তৈরির কারখানায় ব্যস্ত কারিগরেরা প্রথম আলো
রাজধানীর ধলপুরে জুতা তৈরির কারখানায় ব্যস্ত কারিগরেরা প্রথম আলো

বৃহস্পতিবার দুপুর। পুরান ঢাকার কলতাবাজারের একটি জুতার কারখানা। অপরিসর কক্ষটিতে বসেছেন ছয়জন কারিগর। অবিরাম ঠুকঠাক আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। আঠার ঝাঁজালো গন্ধ নাকে ভেসে এল। চোখ হালকা জ্বলছে। এর মাঝে একজন ক্রেতা এসেছেন তাঁর জুতার বিষয়ে কথা বলতে। পেশায় চিকিৎসক ওয়াহিদুল হক বেশ কয়েক দিন আগে একজোড়া জুতার মাপ দিয়ে গিয়েছিলেন। আবার এসেছেন নকশায় কিছু যোগ করতে। জুতার ভেতর থেকে রাবার দিয়ে একটু উঁচু করে দেওয়া যায় কি না, যেন পরলে তাঁকে আরেকটু লম্বা দেখায়। দোকানের মালিক মাথা নেড়ে জানালেন, ‘সম্ভব।’ বোঝা গেল, এ ধরনের অনুরোধে অভ্যস্ত দোকানি।
ঈদে নতুন জামা-কাপড়ের সঙ্গে নতুন জুতার চাহিদা ছোট-বড় সবারই। সাধারণত বিভিন্ন নামী দেশি-বিদেশি কোম্পানির জুতার প্রতি ক্রেতার আগ্রহ বেশি থাকলেও অনেক শৌখিন পুরুষ কারখানায় ফরমাশ দিয়ে জুতা বানিয়ে নেন। আর খুচরা ক্রেতার চাহিদার প্রতি লক্ষ রেখে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় জুতার কারখানা চালু রয়েছে। ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়েছে ছোট ছোট এসব ক্ষুদ্র কারখানায়।
সারা বছর ব্যবসা হলেও রমজান মাস শুরুর কয়েক দিন পরই কারখানায় ক্রেতাদের যাতায়াত বেড়েছে বলে জানালেন এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। তাঁদের মতে, বছরের অন্যান্য মাসের তুলনায় রমজান মাসে তৈরি স্যান্ডেলের বিক্রি বেড়েছে কয়েক গুণ।
বাজারে দেশ-বিদেশের উন্নত জুতার ছড়াছড়ির পরও কেন কারখানায় এসেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে লালমোহন সাহা স্ট্রিটের বাসিন্দা সাঈদ ইবনে সেলিম বললেন, বিভিন্ন নামী ব্র্যান্ডের জুতার তুলনায় মানের দিক দিয়ে এ জুতাগুলো একেবারে পিছিয়ে নেই। যথেষ্ট টেকসই। আর স্থানীয়ভাবে তৈরি হওয়ায় দামেও বেশ সস্তা। নারিন্দার বাসিন্দা, কলেজছাত্র হাসিবুর রহমানের মতে, ফরমাশ দিয়ে জুতা বানানোর সবচেয়ে বড় মজা হচ্ছে, সঠিক আকারটি পাওয়া যায়।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে এ ধরনের জুতার কারখানা থাকলেও পুরান ঢাকায় তা যেন একটু বেশি। হাজারীবাগ, বংশাল, যুগীনগর, জয়কালী মন্দির, যাত্রাবাড়ীসহ খিলগাঁও, বাসাবো, রামপুরা এলাকায় ছোট জুতার কারখানা ঢের দেখা যায়। মালিকদের হিসাবে, রাজধানীতে এ ধরনের কারখানার সংখ্যা হাজারের কম নয়।
যুগীনগরের অক্ষয় সুজের প্রতিনিধি কৃষ্ণা বললেন, ‘ক্রেতার পায়ের মাপ নিয়ে আমরা নির্দিষ্ট কিছু নকশার জুতা তৈরি করি। তবে ক্রেতারা চাইলে নকশায় পরিবর্তন করতে পারেন।’
কারিগরেরা জানালেন, বিভিন্ন আকার ও মডেলের জুতার পাশাপাশি তাঁরা তৈরি করছেন নানা নকশার নাগরা ও চটি। সর্বনিম্ন আড়াই শ টাকা থেকে সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা দামের জুতা-স্যান্ডেল, চটি তৈরির জন্য ফরমাশ দিচ্ছেন ক্রেতারা। জুতার মূল্য ভেদে ছয় মাস থেকে এক বছরের গ্যারান্টি দেন তাঁরা।
তবে এখন যেহেতু রমজান মাসের শেষ সময়, তাই এখন নতুন করে জুতার ফরমাশ নিচ্ছে না কারখানাগুলো। যেগুলোর ফরমাশ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো চাঁদরাতে ক্রেতাদের হাতে পৌঁছানোর জন্য দিন-রাত কাজ করতে হচ্ছে। তবে এবার ব্যবসায় কিছুটা মন্দা, জানালেন মালিক-কারিগরেরা। কারণ চামড়া, আঠা, সোল, সুতাসহ জুতা-স্যান্ডেল তৈরির উপকরণের দাম বাড়তি। ফলে জুতা তৈরির খরচও যাচ্ছে বেড়ে।
কারিগরেরা মনে করেন, উপকরণের দাম একটু কম হলে তাঁদের বেচা-বিক্রি আরেকটু বাড়ত।