বার্নিকাটের গাড়িতে হামলায় শেষ হয়নি তদন্ত, গ্রেপ্তার নেই

সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট
সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট

সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটকে বহনকারী দূতাবাসের গাড়িতে হামলার ঘটনার তদন্তের অগ্রগতি এখন পর্যন্ত ‘শূন্য’। গত এক বছরে হামলাকারীদের একজনকেও ধরা সম্ভব হয়নি। ফলে কাউকেই বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি।

মার্শা বার্নিকাটকে বহনকারী গাড়ির ওপর হামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে বাংলাদেশের কাছে জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হামলার ঘটনাটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার এবং এ ব্যাপারে কার্যকর ও নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছে তারা।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময়ও বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা ওই হামলার ঘটনার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন তাঁর কাছে। বিষয়টি তিনি প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় ফিরে ওই হামলার তদন্ত নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে এ হামলার তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চেয়েছি। যতটুকু জেনেছি, তাঁরা অপরাধীকে চিহ্নিত করেছেন। বিচার অবশ্যই হবে।’

>

বার্নিকাটের গাড়িতে হামলা
গত বছরের ৪ আগস্ট রাতে মোহাম্মদপুরে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা

গত বছরের ৪ আগস্ট রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বাসায় যান মার্শা বার্নিকাট। সেখানে নৈশভোজ শেষে ফেরার পথে মোটরসাইকেল আরোহীসহ একদল সশস্ত্র লোক রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলা চালায়। হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার চেয়ে তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কূটনৈতিক পত্র পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। ওই কূটনৈতিক পত্রে বলা হয়, রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা দলের সদস্যরা হামলাকারীদের মধ্যে দুই ব্যক্তিকে শনাক্ত করেন। হামলার সময় ওই দুই ব্যক্তি চিৎকার করে বলছিলেন, ‘বদিউল আলম সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত।’ হামলাকারীরা গাড়িবহরের দিকে এগোনোর সময় তাদের বাধা দেওয়া হলে রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা দলের দুই সদস্যকে ঘুষি মারে হামলাকারীরা। গাড়িবহর চলে যাওয়ার সময় দুটি গাড়িতে লাঠি দিয়ে আঘাত হানে হামলাকারীরা।

হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে গত বছরের ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ সরকার বিষয়টিকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে বিবৃতি দেয়। এতে তদন্ত শেষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু কার্যত কিছুই হয়নি।

তদন্তের অগ্রগতি কতটা হলো, জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের উপকমিশনার মোখলেসুর রহমান বলেন, মোটরসাইকেলের নম্বর যাচাই করে কিছু লোককে চিহ্নিত করেছেন তাঁরা। এখনো তদন্ত চলছে। এর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হয়ে বার্নিকাট ঢাকায় আসেন ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি। দায়িত্ব পালন শেষে গত বছরের ২ নভেম্বর তিনি ঢাকা ছেড়ে যান।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচনের মাত্র সাড়ে চার মাস আগে হামলার ঘটনাটি ঘটে। হামলাকারীরা ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী। তাঁরা স্থানীয় সাংসদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। পরে রাজনৈতিক কারণে তদন্ত আর এগোয়নি।

সার্বিক বিষয়ে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির বড় উদাহরণ হামলার ওই ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস অপরাধীদের শনাক্ত করে চিঠিও পাঠিয়েছে। তারপরও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। এখন এটা পরিষ্কার, এ দেশে আইনের চোখে সবাই সমান নয়, সব অপরাধের বিচার হয় না।