বাল্যবিবাহ বন্ধের লক্ষ্য অর্জনে পিছিয়ে দেশ

করোনায় বাল্যবিবাহ বেড়েছে। বাল্যবিবাহ বন্ধে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।

বাল্যবিবাহ বন্ধের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। করোনা মহামারি এর অন্যতম কারণ। তবে করোনার সময় সারা দেশে কত বাল্যবিবাহ হয়েছে বা বাল্যবিবাহ বন্ধের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন থেকে দেশ কতটা পিছিয়ে পড়ছে, তার হিসাব দিতে পারেনি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। যদিও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদন এই লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে পড়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বাল্যবিবাহ নিরোধে নেওয়া জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে শূন্যের কোঠায় নামানোর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল। বছরের আর তিন মাস বাকি। এ অবস্থায় মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে কোনো স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। একইভাবে গত বছরের অগ্রগতি বা অবনতির তথ্যও জানা সম্ভব হয়নি। যদিও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) সর্বশেষ জরিপ (মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০১৯-এমআইসিএস) বলছে, দেশে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের হার ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

বাল্যবিবাহ বন্ধে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার সক্রিয়ভাবে কোনো কাজ করেনি। স্রোতের সঙ্গে গা ভাসিয়ে দিয়ে বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটতে দেওয়া হয়েছে।
সুলতানা কামাল, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী
সুলতানা কামাল, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী

সরকারের কর্মপরিকল্পনায় ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের বিয়ের হার ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা আছে। এমআইসিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ হার ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু ২০২০-২১ সালে এই হার কতটুকু কমেছে বা বেড়েছে, তার হিসাব পাওয়া যায়নি।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সারা দেশে কত বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা হয়, তার হিসাব রাখে। এই প্রতিবেদক কয়েক সপ্তাহ ধরে মন্ত্রণালয় ও মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের একাধিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে এ–বিষয়ক তথ্যের জন্য যোগাযোগ করেন। মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করে, কথা বলে, মুঠোফোনে খুদে বার্তা দিয়ে—কোনোভাবেই এ তথ্য জানা সম্ভব হয়নি।

নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম কর্মসূচি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের বিষয়টিও দেখভাল করে থাকে। এর প্রকল্প পরিচালক হিসেবে ১৫ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন আবুল হোসেন। এখন তিনি জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) পরামর্শক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চলতি বছরের মধ্যে বাল্যবিবাহ নির্মূলে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সরকারের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত কমিটি আছে।

তবে করোনায় এসব কমিটি এবং বেসরকারি সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকেরাও কাজ করতে পারেননি। ফলে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়েছে।

সাত বছর আগে লন্ডনে অনুষ্ঠিত গার্ল সামিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ ও ১৮ বছরের কম বয়সীদের বাল্যবিবাহ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা জানানোর পাশাপাশি ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ নির্মূলের অঙ্গীকার ঘোষণা করেছিলেন। এ লক্ষ্য সামনে রেখে সংশ্লিষ্ট দপ্তর কী কাজ করছে, সে তথ্যও দিতে রাজি হননি কর্মকর্তারা। দু-একজন কর্মকর্তা অবশ্য বলেছেন, করোনার কারণে তাঁরা যথাযথভাবে মাঠপর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেননি।

সরকারের ‘বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০১৭-১৮’-এর প্রাথমিক ফল প্রকাশিত হয় গত বছরের জানুয়ারিতে। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (নিপোর্ট) এই জরিপকে দেশের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সবচেয়ে বড় জরিপ বলে ধরা হয়। ২০ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের ওপর পরিচালিত জরিপ বলছে, তাদের এক-তৃতীয়াংশের (৩১ শতাংশ) বিয়ে হয়েছে বয়স ১৫ বছর হওয়ার আগে। বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগে হয়েছে এমন বাল্যবিবাহের হার ৫৯ শতাংশ। ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের ওপর জরিপ করে এই হার বের করা হয়। ২০১৪ সালের জরিপেও ১৮ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে বাল্যবিবাহের হার ছিল ৫৯ শতাংশ ছিল। অর্থাৎ দুই জরিপের মধ্য বাল্যবিবাহের শতকরা হারের পরিবর্তন হয়নি। অবশ্য ইউনিসেফের জরিপে বাল্যবিবাহের এই হার ৫১ শতাংশ। এ কারণে দেশে ১৫-১৮ বছর বয়সীদের মধ্যে বাল্যবিবাহের হার ৫১ থেকে ৫৯ শতাংশের মধ্যে বলে মনে করেন এ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

করোনায় বাড়ছে বাল্যবিবাহ

ইউনিসেফের প্রোগ্রাম অফিসার (জেন্ডার) তাহমিনা হক বলেন, সরকারের বিভিন্ন উপাত্ত বিশ্লেষণ করে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বাল্যবিবাহ বন্ধের বর্তমান প্রচেষ্টাকে অন্তত আট গুণ বাড়াতে হবে। আর ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে হলে এই প্রচেষ্টা ১৭ গুণ বৃদ্ধি করতে হবে।

বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ, চলমান কার্যক্রম এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাল্যবিবাহ নির্মূলের লক্ষ্য নিয়ে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধকল্পে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন’ করা হয়েছে। কর্মপরিকল্পনার ভিত্তি বছর ২০১৮-২০৩০। কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজের সমন্বয় করছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম করোনায় বিধিনিষেধ, মানুষের চলাচল কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে বলে স্বীকার করেন। তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য না দিয়ে প্রথম আলোকে শুধু বলেন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার কতটুকু পিছিয়ে আছে, তা বলা যাচ্ছে না। চলতি বছর শেষ হলে দেশব্যাপী একটি জরিপ করে সেই তথ্যের ভিত্তিতেই এটি বলতে হবে।

তবে মাঠপর্যায়ের তথ্য বলছে, করোনায় বাল্যবিবাহ বাড়ছে। কিন্তু করোনাসংশ্লিষ্ট কাজের কারণে এদিকে স্থানীয় প্রশাসনের নজর কমছে। প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেনকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জাকিউল ইসলাম জানিয়েছেন, গত বছরের মার্চ মাস থেকে চলতি বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত জেলায় পাঁচ শতাধিক বাল্যবিবাহ হয়েছে। গত ৯ জুলাই জেলার পাঁচ উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বাল্যবিবাহের ঘটনায় জড়িত একজন কাজিসহ ৯ জনকে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক হিসেবে তিন বছর দায়িত্ব পালন করে সম্প্রতি পদোন্নতি পাওয়া একজন সরকারি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, করোনায় বাল্যবিবাহ বেড়েছে, এ নিয়ে দ্বিমত করার কারণ নেই। ত্রাণ বা অন্যান্য কার্যক্রম নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা ব্যস্ত থাকায় বাল্যবিবাহ ঠেকানোর সংখ্যাও কমেছে।

স্থানীয় প্রশাসনের বরাত দিয়ে প্রথম আলোর কুষ্টিয়ার নিজস্ব প্রতিবেদক তৌহিদী হাসান জানান, জেলার ছয়টি উপজেলায় গত আট মাসে মাত্র ২৩টি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা হয়েছে। গত বছর শুধু সদর উপজেলাতেই ৪৫টি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা হয়েছিল।

গত ২২ আগস্ট প্রথম আলোয় ‘বাল্যবিবাহের নতুন কৌশল’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, খুলনার পাইকগাছায় গত দুই মাসে ৯টি বাল্যবিবাহ হয়েছে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বয়স বাড়িয়ে। পাইকগাছা ইউএনও এ বি এম খালিদ সিদ্দিকী বলেছেন, করোনায় স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় অভিভাবকেরা অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি মনে করছে, অল্প বয়সের মেয়েরা বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করায় বাল্যবিবাহ বেড়ে যাচ্ছে। গত ২৫ আগস্ট সংসদীয় কমিটির সভার কার্যপত্র থেকে এ তথ্য জানা যায়।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের এক জরিপ বলছে, গত বছরের এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত দেশের ২১ জেলার ৮৪টি উপজেলায় ১৩ হাজার ৮৮৬টি বাল্যবিবাহ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহ হয়েছে বরগুনায়—১ হাজার ৫১২টি।

বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম প্রথম আলোকে বলেন, করোনার যেসব দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব সমাজে থেকে যাবে, তার একটি হচ্ছে বাল্যবিবাহের কারণে সৃষ্ট নানা সমস্যা। যেমন অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ, মাতৃমৃত্যু, পুষ্টিহীনতা ইত্যাদি। সামনের দিনগুলোতে এসব সূচকেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এই বাল্যবিবাহ। তাই সরকারকে এখনই বাল্যবিবাহ বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সরকারের কাজ

বাল্যবিবাহ নিরোধ কর্মপরিকল্পনার ২৩৭টি কৌশল এবং কার্যক্রমের মধ্যে চলতি বছরে বাস্তবায়ন করা হবে এমন কার্যক্রম আছে ১৭২টি। এর বেশির ভাগই শিক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান–সম্পর্কিত। গত বছরের মার্চ মাস থেকে করোনার প্রাদুর্ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এই কার্যক্রম আর বাস্তবায়িত হয়নি।

এর বাইরে বাকি কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঝুঁকিপূর্ণ কিশোরীদের তত্ত্বাবধান করার জন্য তালিকা তৈরি; জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে জরুরি পুনর্বাসন তহবিল গঠন, স্থানীয় সরকারের সব ধরনের বাজেট থেকে অসচ্ছল পরিবারের কিশোরীদের ১৮ বছরের আগে বিয়ে না দেওয়ার শর্তে আর্থিক সহায়তা প্রদান, জেলা ও উপজেলার বাজেটে নগদ সহায়তার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা। এ ছাড়া কিশোরীদের বৃত্তিমূলক কাজের জন্য ঋণ দেওয়া, বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোর আর্থসামাজিক তথ্য সংগ্রহ, ম্যাপিং; ভবিষ্যতে এই পরিবারগুলোকে এই অবস্থা থেকে বের করে আনার জন্য কর্মসূচি, বস্তিতে ঝুঁকিতে থাকা মেয়েদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীতে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ, জনপ্রতিনিধিদের সেবামূলক কর্মসূচিতে দরিদ্র কিশোরীর পরিবারকে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবার হিসেবে চিহ্নিত করে সরকারি অনুদান কর্মসূচির আওতায় আনার জন্য বলা আছে। কিন্তু এই কার্যক্রমের কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে, তার কোনো তথ্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে জানা যায়নি।

তবে মাঠপর্যায়ে কর্মরত একাধিক জেলা প্রশাসক এবং ইউএনও প্রথম আলোকে বলেছেন, তহবিল গঠন বা বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে থাকা পরিবারকে নগদ সহায়তা দেওয়ার কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। আপাতত খবর পেলে গিয়ে বিয়ে বন্ধ করার মধ্যেই তাঁদের কাজ সীমিত আছে।

এর বাইরে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইউনিয়ন ও পৌরসভায় প্রায় আট হাজার কিশোর-কিশোরী ক্লাব পরিচালিত হচ্ছে। এই ক্লাবগুলোর একটি উল্লেখযোগ্য কাজ হচ্ছে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরি করা। এর মধ্যে শিশুদের নিরাপত্তা জোরদার প্রকল্পের (এক্সিলারেটিং প্রোটেকশন ফর চিলড্রেন) আওতায় ২ হাজার ১০০ কিশোর-কিশোরী ক্লাব পরিচালিত হয়। এ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এস এম লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ৪৫০টি ক্লাবে ভার্চ্যুয়ালি এবং সীমিত পরিসরে কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।

তবে ‘তথ্য আপা’ কর্মসূচির উঠান বৈঠকের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরির কাজ করোনায় ব্যাহত হয়েছে।

জাতীয় হেল্পলাইন ১০৯–এর দেওয়া তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য ফোন এসেছে ১ হাজার ১৫৯টি। ২০২০ সালে তা ছিল ১ হাজার ২টি। আর চলতি বছরের ২৬ জুন পর্যন্ত ফোন এসেছে ৬১২টি। ৯৯৯, ৩৩৩, ১০৯৮ নম্বরে ফোন করেও বাল্যবিবাহ রোধ করা যায়।

এ অবস্থায় করণীয় জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, করোনাকালে বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতন, দুর্নীতি এবং দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া— সরকার এ দিকগুলোতে সক্রিয়ভাবে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেনি। কোনো কিছু ঘটলে পরে সরকার ব্যবস্থা নেবে তা তো হওয়ার কথা নয়। সরকারের তো পূর্বপরিকল্পনা থাকতে হবে। করোনার প্রাদুর্ভাবে বাল্যবিবাহ বেড়ে যাচ্ছে, বিষয়টি তো সরকারের চিন্তাভাবনায় আসা উচিত ছিল।

তিনি বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বলা যায়, বাল্যবিবাহ বন্ধে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার সক্রিয়ভাবে কোনো কাজ করেনি। স্রোতের সঙ্গে গা ভাসিয়ে দিয়ে বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটতে দেওয়া হয়েছে।