বিআইডব্লিউটিএর কি কোনো দায়িত্ব নেই, প্রশ্ন হাইকোর্টের

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রেখেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, নিষ্ক্রিয়তা তো আছে। জাহাজের কন্ডিশন না দেখে কর্মকর্তা যাত্রা শুরুর অনুমতি দিয়ে দিলেন। বিআইডব্লিউটিএর কি এখানে কোনো দায়িত্ব নেই?

এ ঘটনায় হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশনা চেয়ে করা পৃথক দুটি রিটের শুনানিতে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন প্রশ্ন রাখেন।

শুনানির একপর্যায়ে ওই লঞ্চে আগুন প্রতিরোধে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিআইডব্লিউটিএসহ বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা প্রশ্নে আদালত রুল দেওয়ার অভিমত জানান। তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন মালিক। এখানে সরকারের কোনো নিষ্ক্রিয়তা নেই। একপর্যায়ে আদালত ওই কথা বলেন।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে আদালত আরও বলেন, ‘আপনি নিষ্ক্রিয়তা নিজের ঘাড়ে নিচ্ছেন। এখানে সরকারের নয়, মালিকপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবারই নিষ্ক্রিয়তা আছে। যিনি সার্টিফিকেট (লঞ্চের যাত্রা শুরুর অনুমতি) দিয়েছেন, তাঁকে আগে গ্রেপ্তার করা দরকার ছিল।’

শুনানিতে আদালত বলেন, লঞ্চ ছাড়ার আগে ফিটনেস চেক করার বিষয় আছে। এ ক্ষেত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। নৌদুর্ঘটনায় প্রযোজ্য আইনে দুর্বলতা থাকলে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট আইন পুরোনো, আইন হালনাগাদ করা দরকার। দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ প্রদান বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন ও বিধিমালা থাকা দরকার।

২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এ সময় আগুনে পুড়ে ও নদীতে ঝাঁপ দিয়ে অন্তত ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন বেশ কিছু যাত্রী। বরগুনা জেলা প্রশাসনের কাছে নিখোঁজের তালিকায় ৩৩ জনের নাম আছে। ঝালকাঠি জেলা পুলিশ যে তালিকা করেছে, তাতে নিখোঁজ ৪০ জন। আর ঝালকাঠি যুব রেড ক্রিসেন্ট যে তালিকা করেছে, তাতে নিখোঁজ ৫১ জন।

নিহত প্রত্যেক যাত্রীর পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ও গুরুতর আহত প্রত্যেককে ৫ লাখ টাকা তাৎক্ষণিক ক্ষতিপূরণ দিতে অন্তর্বর্তী নির্দেশনা চেয়ে গত রোববার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ একটি রিট আবেদন করেন। আগুনে হতাহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ এবং নৌদুর্ঘটনা এড়ানোর পাশাপাশি অবস্থার উন্নয়নে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানিয়ে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা চেয়ে একই দিন অপর রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী সৌমিত্র সরদার।

পৃথক দুটি রিটের ওপর একসঙ্গে শুনানি নিয়ে আদালত আজ রুলসহ আদেশ দেন। হাইকোর্ট ওই লঞ্চে আগুনে প্রাণহানির ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটিগুলোর প্রতিবেদন ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সব লঞ্চ-জাহাজ, তথা নৌযানের ফিটনেসের বিষয় জানিয়ে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

ফাইল ছবি

এ ছাড়া এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে আগুনের ঘটনায় আহত-নিহত ব্যক্তিদের তালিকা আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। আদালত বলেছেন, ভুক্তভোগী কারও আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন হলে বরগুনা, ঝালকাঠি, বরিশালসহ সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের কাছে আবেদন করবেন। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ওই আবেদন বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।

আদালতে সৌমিত্র সরদারের করা রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী অনীক আর হক ও আনিচুর রহমান। অপর রিটের পক্ষে আবেদনকারী ইউনুছ আলী আকন্দ নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

রুলে ওই লঞ্চে আগুন প্রতিরোধে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রসচিব, নৌপরিবহনসচিব, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।