বিএমডিসি নিবন্ধনের দাবিতে আবার আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

ইউএসটিসির বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল ছেড়ে যাচ্ছেন রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা। গতকাল বেলা একটায় তোলা ছবি l প্রথম আলো
ইউএসটিসির বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল ছেড়ে যাচ্ছেন রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা। গতকাল বেলা একটায় তোলা ছবি l প্রথম আলো

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ধার্য করা জরিমানার ১০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়ায় ইউএসটিসির (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম) একাডেমিক ভবন ও হাসপাতালে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এতে হাসপাতাল ছেড়ে যেতে বাধ্য হন রোগীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন এমবিবিএসের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা।

এমবিবিএস কোর্সের প্রতি ব্যাচে ৭৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করার কথা থাকলেও অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করায় ইউএসটিসি। যে কারণে বিএমডিসি (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) এসব শিক্ষার্থীকে নিবন্ধন দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির পর প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বিএমডিসির নিবন্ধন নিতে হয়। এমবিবিএস পাসের পর চিকিৎসাকে পেশা হিসেবে নিতে এই নিবন্ধন দরকার।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং ইউএসটিসি কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউএসটিসিকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত বুধবার ছিল টাকা জমা দেওয়ার শেষ দিন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ টাকা জমা দেয়নি। এক টাকা জমা দিলে বিএমডিসির নিবন্ধন পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতো বলে জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

ফটকে হাসপাতাল বন্ধের িবজ্ঞপ্তি। ছবিটি গতকাল বেলা একটায় তোলা l প্রথম আলো
ফটকে হাসপাতাল বন্ধের িবজ্ঞপ্তি। ছবিটি গতকাল বেলা একটায় তোলা l প্রথম আলো

গতকাল দুপুর ১২টায় ইউএসটিসি ক্যাম্পাসের বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রোগীরা স্বজনদের সঙ্গে হাসপাতাল ছেড়ে যাচ্ছেন। ৩৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে গতকাল প্রায় ৮০ জন রোগী ভর্তি ছিলেন বলে শিক্ষার্থীরা জানান। এর মধ্যে কেবল জরুরি বিভাগের চার-পাঁচজন রোগী ছাড়া বাকিরা বিকেলের মধ্যে হাসপাতাল ছেড়ে যান।

রোজিনা আক্তার নামের এক নারী বলেন, তাঁর এক বছর বয়সী ছেলে ঠান্ডা ও জ্বরে ভুগছে। গত রোববার ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। ছাত্ররা হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়ায় বাধ্য হয়ে তিনি ছেলকে নিয়ে চলে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে ইউএসটিসির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক বদরুল আমিন ভূঁইয়া দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়েছে শুনেছি। কতজন রোগী ছিল আমার জানা নেই।’

আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তিন শিক্ষার্থী নাম না প্রকাশের শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বুধবার রাতেই রোগীদের ছেড়ে দিতে বলেছি। যেহেতু ডাক্তারি পড়ি, রোগীদের এভাবে কষ্ট দিতে পারি না। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চলে যেতে বলেছি। দুপুরের মধ্যেই সবাই ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেছে।’ তাঁরা বলেন, জরিমানার টাকা জমা দিলে নিবন্ধনের কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু ইউএসটিসি কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে এখন। তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। পর্যায়ক্রমে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়টির অন্যান্য ফ্যাকাল্টিও বন্ধ করে দেওয়ার আন্দোলনে যাবেন।

নিবন্ধনের দাবিতে গত জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫, ২৬ ও ২৭তম ব্যাচের এমবিবিএস শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছেন। পরে তাঁদের সঙ্গে ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হন।

গত সোম ও মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের আন্দালনের সমর্থনে ইউএসটিসি ক্যাম্পাসে আয়োজিত সমাবেশে যোগ দেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন।

জরিমানার টাকা জমা না দেওয়ার বিষয়ে জানতে ইউএসটিসির উপাচার্য প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়ার সঙ্গে গতকাল বিকেলে যোগাযোগ করা হলে তিনি সহ–উপাচার্য অথবা রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। সহ–উপাচার্য অধ্যাপক এহতেশামুল হকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি।

পরে রেজিস্ট্রার বদরুল আমীন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ধার্য করা শাস্তির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে একটি আবেদন করা হয়েছে। সেখান থেকে কী পরামর্শ আসে, সে অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা।