বিএমডিসি নিবন্ধন দাবিতে ইউএসটিসি হাসপাতাল বন্ধ

বিএমডিসির (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) নিবন্ধনের দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (ইউএসটিসি) একাডেমিক ভবন ও হাসপাতালে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ধার্য করা ১০ কোটি টাকা জরিমানা জমা না দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি হাতে নেয় বলে জানা গেছে। ওই জরিমানা জমা দিলে শিক্ষার্থীদের নিবন্ধনের সুযোগ সৃষ্টি হতো।

এমবিবিএস কোর্সের প্রতি ব্যাচে ৭৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করার কথা থাকলেও অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর কারণে বিএমডিসি ইউএসটিসির ২৫তম ব্যাচ থেকে শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন বন্ধ করে দেয়। বিএমডিসি নিবন্ধনের দাবিতে জানুয়ারি থেকে আন্দোলন করে আসছে ২৫, ২৬ ও ২৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। পরে এঁদের সঙ্গে ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হন। গত সোম ও মঙ্গলবার নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২২ ফেব্রুয়ারি এক সভায় ইউএসটিসিকে ১০ কোটি টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত নেয়। এক মাসের মধ্যে ওই টাকা জমা দিলে নিবন্ধন দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতো। গত বুধবার ছিল টাকা জমা দেওয়ার শেষ দিন। ওই দিনও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ টাকা জমা দেয়নি। তারা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে এটি বিবেচনার জন্য একটি আবেদন করে।
জরিমানার টাকা জমা না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আজ ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে মিছিল করেন। এরপর ক্যাম্পাসে ঢুকে তাঁরা হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। পাশাপাশি একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে ভেতরে অবস্থান নেন।
সরেজমিনে দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, রোগীদের হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাঁদের ছাড়পত্র দিয়ে দিচ্ছেন। চার-পাঁচজন জরুরি রোগী থাকলেও তাঁরাও বিকেলের মধ্যে অন্য হাসপাতালে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
রোজিনা আক্তার নামে পতেঙ্গা থেকে আসা এক নারী বলেন, ‘আমার এক বছর বয়সী ছেলেটির ঠান্ডা লেগে জ্বর হয়েছে। ১৮ মার্চ ভর্তি করিয়েছিলাম। আজ চলে যেতে বলল। ছাত্ররা নাকি হাসপাতাল বন্ধ করে দেবে।’
ফটিকছড়ির শাহিন চর্মরোগের জন্য ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনিও বাধ্য হয়ে গতকাল চলে যান।
ইউএসটিসির বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালের পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক মু. বদিউল আলমকে বারবার ফোন করা হলেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ইউএসটিসির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক বদরুল আমিন ভূঁইয়া বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়েছে শুনেছি। কতজন রোগী ছিল আমার জানা নেই। নিবন্ধনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী দপ্তরে একটি আবেদন করা হয়েছে।’
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, ‘আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে গতকাল (বুধবার) রাতেই রোগীদের আস্তে আস্তে ছেড়ে দিতে বলেছি। আমরা যেহেতু ডাক্তারি পড়ি, আমরা রোগীদের এভাবে কষ্ট দিতে পারি না। তাই তাদের অন্য হাসপাতালে চলে যেতে বলেছি। দুপুরের মধ্যেই সবাই ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেছে।’
কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, জরিমানার টাকা জমা দিলে তাঁদের নিবন্ধনের কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু ইউএসটিসি কর্তৃপক্ষ তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে এখন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তাঁরা।
জানা গেছে, আন্দোলনরত ২৫তম ব্যাচে (২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে) ৪১০ জন, ২৬তম ব্যাচে (২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে) ৪১৪ জন, ২৭তম ব্যাচে (২০১৩-১৪) ২৮০ জন, ২৮তম ব্যাচে (২০১৪-১৫) ৮৭ জন ও ২৯তম ব্যাচে (২০১৫-১৬) ১৫৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। অথচ শিক্ষার্থী ভর্তির কোটা রয়েছে প্রতি ব্যাচে ৭৫ জন।